অনাস্থা ভোটের আগে ‘নিখোঁজ’ ইমরানের দলের ৫০ মন্ত্রী!
অনাস্থা ভোটের আগে ‘নিখোঁজ’ ইমরানের দলের ৫০ মন্ত্রী! - ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানের রাজনীতিতে এখন টালমাটাল অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সঙ্কটে পড়েছেন। তিনি ক্ষমতায় থাকবেন কিনা তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
গত শুক্রবার ইমরান খানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে বলে শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত স্পিকার অধিবেশন মুলতুবি করে দেন। এর ফলে ঘর গোছানোর আরো কিছুটা সময় পেয়ে যান ইমরান খান। তবে যতই সময় গড়াচ্ছে, ততই ঘর আরো অগোছালো হয়ে পড়ছে ইমরানের জন্য। এবার জানা গেছে, ইমরান খানের দলের প্রায় ৫০ মন্ত্রী ‘নিখোঁজ’। জাতীয় ও প্রদেশ স্তরের সরকারে থাকা মন্ত্রী এবং পরামর্শদাতাদের সম্প্রতি দেখা যায়নি জনসমক্ষে।
পাকিস্তানের দ্য এক্সপরেস ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘নিখোঁজ’ ৫০ জনের মধ্যে রয়েছেন ২৫ জন ফেডারাল এবং প্রাদেশিক পরামর্শদাতা, স্পেশাল অ্যাসিস্টেন্ট। এর মধ্যে চারজন আবার প্রদেশের মন্ত্রীও। বাকি আরো প্রদেশের ১৯ জন স্পেশাল অ্যাসিস্টেন্ট, চারজন পরামর্শদাতাও আছেন।
তবে, ফেডারেল স্তরে এখনো মন্ত্রীরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সমর্থন করছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি, তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী, জ্বালানিমন্ত্রী হাম্মাদ আজহার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারভেজ খট্টক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রাশেদরা এখনো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
এদিকে গত শুক্রবার হওয়ার কথা থাকলেও ইমরানের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের দিনক্ষণ পিছিয়ে ২৮ এপ্রিল করা হয়েছে। আর এর মাঝে ইমরান খান নিজের শরিক দলের মন জেতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি শরিক মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) এবং পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদের (পিএমএল-কিউ) সাথে যোগাযোগ করেছেন। এরপরই জানা যায় যে মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্টের এক প্রতিনিধি দলের ইমরান খানের সাথে দেখা করবে। তবে এত কিছুর মাঝেই গুজব রটেছে যে ইমরান খানের নিজের দলের এমপিরা সঙ্গ ত্যাগ করেছে ইমরানের।
পাকিস্তান সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বহু পিটিআই এমপি অনাস্থা প্রস্তাবে ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। উল্লেখ্য ৩৪২ আসনবিশিষ্ট পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ম্যাজিক নম্বর হলো ১৭২। পিটিআই-এর সদস্য সংখ্যা ১৫৫। বাকি মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদ, বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টি এবং গ্র্যান্ড ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের সদস্যদের মিলিয়ে জোট সরকারের মোট সদস্য সংখ্যা ১৭৯।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট ৩ বা ৪ এপ্রিল : শেখ রশিদ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ভোট আগামী ৩ বা ৪ এপ্রিল তারিখে হতে পারে।
শনিবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব এনে বরং ইমরান খানের উপকার করেছেন। এর মাধ্যমে আগের চেয়ে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা বেড়ে গিয়েছে।
শেখ রশিদ বলেন, রাজধানীতে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসারে সবাই সমাবেশ করতে পারবে কিন্তু কেউ রেড জোনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।
ইসলামাবাদে দেশটির পার্লামেন্ট, প্রেসিডেন্টের দফতর, প্রধানমন্ত্রীর দফতর, সুপ্রিম কোর্ট, সেক্রেটারিয়েটসহ বিবিধ সরকারি দফতরের অবস্থানের এলাকাটি রেড জোন হিসেবে পরিচিত।
শেখ রশিদ সতর্কতা জানান, কাউকেই আইন হাতে নেয়ার অনুমতি তিনি দেবেন না। রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই পালন করবে।
গত ৮ মার্চ পাকিস্তানের সংবিধানের ৫৪ ধারার অধীনে বিরোধী দলগুলোর সম্মিলিত এক প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রতি অনাস্থা ভোটের জন্য ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি সেক্রেটারিয়েটে প্রস্তাব জমা দেয়।
সংবিধানের ৫৪ ধারা অনুসারে, ২৫ শতাংশ সদস্যের স্বাক্ষরযুক্ত কোনো প্রস্তাব যদি জমা দেয় হয় তবে স্পিকারকে ১৪ দিনের মধ্যে ওই বিষয়ে অধিবেশন আহ্বান করতে হয়।
এই ধারা অনুসারে ২২ মার্চ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশনের আহ্বানের শেষ দিন ছিলো। এর একদিন আগেই ২১ মার্চ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সেক্রেটারিয়েট থেকে শুক্রবার অধিবেশন আহ্বান করা হয়।
শুক্রবার নির্ধারিত সময় সকাল ১১টায় অধিবেশন শুরু হলেও স্পিকার আসাদ কায়সার সোমবার সকাল ৪টা পর্যন্ত অধিবেশন স্থগিত করেছেন।
সূত্র : জিও নিউজ