রক্তে মাইক্রো প্লাস্টিক! কী হতে পারে পরিণাম
রক্তে মাইক্রো প্লাস্টিক! কী হতে পারে পরিণাম - ছবি : সংগ্রহ
বাচ্চা থেকে বুড়ো, দুধের ফিডিং বোতল থেকে শুরু করে প্লাস্টিকের পানি খাওয়ার বোতল কিংবা বাজারের ক্যারি ব্যাগ- সবেতেই মহা বিপদ। সম্প্রতি গবেষণায় উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। কারণ দিনভর ব্যবহৃত প্লাস্টিকের সরঞ্জাম থেকেই মানবদেহে বাসা বাঁধছে মাইক্রো অর্থাৎ অতি সূক্ষ্ম এবং ক্ষুদ্র প্লাস্টিক। যা অজান্তেই মানুষের শরীরকে বিষক্রিয়ায় ভরিয়ে তুলছে। যার ফল হতে পারে মারাত্মক। এমনই দাবি করলেন সুদূর নেদারল্যান্ডের একদল গবেষক। গবেষণারত ওই বিজ্ঞানীদের দাবি, সারাদিন ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বিভিন্ন উপকরণ থেকে মানুষের রক্তে মিশে যাচ্ছে মাইক্রো প্লাস্টিক। যা মানুষের শরীরে বিলীন হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন মানুষের রক্ত পরীক্ষা করে রক্তের মধ্যে মাইক্রো প্লাস্টিকের সন্ধান পেয়েছেন ওই বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, বর্তমানে দিনের শুরু থেকে রাতে শুতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত গোটা পৃথিবীর মানুষ প্লাস্টিকের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করেন আকছার। তার থেকেই ছোট কণা মানুষের শরীরে রক্তে মিশে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ মাইক্রো প্লাস্টিকের বিষক্রিয়া তৈরি হচ্ছে মানুষের শরীরে। তার থেকেই বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে মানবদেহে।
গবেষণায় কী তথ্য উঠে এসেছে?
সাম্প্রতিক নেদারল্যান্ডসের ভ্রিজ ইউনিভার্সিটির এক দল গবেষক মানবদেহে মাইক্রো প্লাস্টিকের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন। এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা ২২ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেছেন। বিজ্ঞানীদের দাবি, পরীক্ষা করে ওই ২২ জনের মধ্যে ১৭ জন মানুষের রক্তে তারা মাইক্রো প্লাস্টিকের সন্ধান পেয়েছেন। তবে ওই ব্যক্তিরা কেউ অসুস্থ ছিলেন না বলেও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ওই গবেষণা তথ্যটি প্রকাশিত হয়েছে এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে।
মানুষের শরীরে কীভাবে মাইক্রো প্লাস্টিক প্রবেশ করে?
এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের দাবি, সারাদিন মানুষ বাড়িতে অথবা অন্যত্র, জ্ঞানত-অজ্ঞানত যে প্লাস্টিকের উপকরণ নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহার করে, মূলত প্লাস্টিকের ওই বড় উপকরণ থেকেই অপেক্ষাকৃত ছোট উপাদান অর্থাৎ মাইক্রো প্লাস্টিক মানুষের রক্তে মিশে যায়। যা মানবদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা এক প্রকার অসম্ভব বলেই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। উদাহরণ হিসাবে ওই গবেষকরা এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে জানিয়েছেন, ওই প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের রক্ত পরীক্ষা চলাকালীন তারা অর্ধেকের রক্তের নমুনায় পিইটি প্লাস্টিক পেয়েছেন। যা সাধারণত পানীয় জলের জলের বোতল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি নমুনার এক তৃতীয়াংশ মানুষের রক্তে পলিস্টেরিন রয়েছে। যা খাদ্য এবং অন্যান্য পণ্যের প্যাকেজিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। রক্তের নমুনার এক চতুর্থাংশে পলিথিন ছিল, যা প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
মাইক্রো প্লাস্টিক কী?
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মাইক্রো প্লাস্টিক হলো প্লাস্টিকের একটি টুকরো। ০.২ ইঞ্চি বা ৫ মিলিমিটার ব্যাস যুক্ত প্লাস্টিক কণার তুলনায় ছোট কণাকে মাইক্রো প্লাস্টিক বলে। তবে শুধু মাইক্রো প্লাস্টিক নয়, অপেক্ষাকৃত বড় কণাগুলোও বর্তমানে গোটা পৃথিবীজুড়ে দূষণের অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, যে কোনও জলাশয়, আবর্জনার স্তূপ এবং বাতাসে দৃশ্যমান প্লাস্টিক শুধুমাত্র দূষণের কারণ নয়, মানুষের নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহৃত খাদ্য, পানীয় এবং ফুসফুসেও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা পাওয়া গিয়েছে। বিষয়টিতে আলোকপাত করে গবেষকরা জানিয়েছেন, গবেষণা চলাকালীন শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মলে মাইক্রো প্লাস্টিকের সন্ধান মিলেছে।
মাইক্রো প্লাস্টিক কীভাবে তৈরি হয়?
অপেক্ষাকৃত বড় প্লাস্টিকের উপাদান থেকেই জন্ম নেয় মাইক্রো প্লাস্টিক। যেমন, প্লাস্টিকের বড় জিনিস ভেঙে গিয়ে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে মাইক্রো প্লাস্টিক। পাশাপাশি মানুষের ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রসাধনী দ্রব্য এবং সৌন্দর্য পণ্যগুলোতে ব্যবহার করার জন্য বড় প্লাস্টিক উপাদান ভেঙে মাইক্রো প্লাস্টিক তৈরি করা হয়। এছাড়াও প্লাস্টিকের বোতল, ব্যাগ, মাছ ধরার জাল এবং খাদ্য প্যাকেজিংয়ের মতো প্লাস্টিক পণ্যগুলো মাইক্রোপ্লাস্টিকে ভেঙে যায়। অবশেষে ওই মাইক্রো প্লাস্টিক কণাগুলো মাটি, পানি এবং বাতাসের সঙ্গে পরিবেশে মিশে যায়। পাশাপাশি মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দাঁত মাজার টুথপেস্টের উপাদানগুলিতে মাইক্রো প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হয় পলিথিন হিসাবে। তবে এই মাইক্রো প্লাস্টিক উপাদানটিকে 'কুলিং ক্রিস্টাল' হিসাবে টুথপেস্টে মিশিয়ে তা বাজারে বিক্রি করা হয়।
মাইক্রো প্লাস্টিক কি ক্ষয়যোগ্য উপদান?
কখনো পরিবেশে, আবার কখনো মানুষের নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের উপাদান থেকে মানুষের রক্তে তা মিশে যায়। এগুলোর কোনো ক্ষয় নেই বলেই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফল মানবদেহে মারাত্মক বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
মানুষের শরীরে মাইক্রো প্লাস্টিকের প্রভাব কী?
কখনো পরিবেশগত ভাবে, আবার কখনো সরাসরি প্লাস্টিক উপাদান ব্যবহারের ফলে মানুষের শরীরে নিত্যদিন প্রবেশ করছে মাইক্রো প্লাস্টিক। মাইক্রো প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র কণা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তা রক্তের সঙ্গে মিশে থাকে। তবে এই ক্ষুদ্র কণার বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কোনো তথ্য বিজ্ঞানীরা না দিতে পারলেও এগুলো মানবদেহের কোষে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে বলে তারা নিশ্চিত। এ বিষয়ে তাই যতটা সম্ভব মানুষকে প্লাস্টিক উপাদান ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
সূত্র : নিউজ ১৮