ব্রেস্ট ক্যানসারে সতর্ক থাকবেন কিভাবে?
ব্রেস্ট ক্যানসারে সতর্ক থাকবেন কিভাবে? - ছবি : সংগ্রহ
কথিত আছে, শয়তানকে শুরুতেই বিনষ্ট করতে হয়। এই কথার গুরুত্ব যে অসীম, তা আমরা ব্রেস্ট ক্যানসার সার্জনরা প্রতিনিয়ত বুঝতে পারি। গত কয়েক বছরে স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। আর তা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার শ্রেষ্ঠ উপায় ক্যানসার ছড়ানোর আগে দ্রুত শনাক্তকরণ।
এই ক্যানসারের মূলত তিনটি ধাপ। এক, আর্লি ব্রেস্ট ক্যানসার, দুই, লোকালি অ্যাডভান্সড ব্রেস্ট ক্যানসার, তিন, মেটাস্ট্যাটিক ব্রেস্ট ক্যানসার। ক্যানসারকোন ধাপে রয়েছে তা বুঝে চিকিৎসা কেমন হবে ঠিক করেন ব্রেস্ট সার্জন। ব্রেস্ট ক্যানসার সেন্টারে ব্রেস্ট সার্জন, রেডিওলজিস্ট, অঙ্কোলজিস্ট, রেডিওথেরাপিস্ট, প্যাথোলজিস্ট, রিকনস্ট্রাকশনের জন্য প্লাস্টিক সার্জন ও সুদক্ষ নার্স থাকেন। এই বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে যত দ্রুত চিকিৎসা সম্পন্ন হবে, তত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন রোগী। স্তন ক্যানসারে কুণ্ঠার কিছু নেই। এখন স্তন পুরোপুরি বাদ না দিয়েও ক্যানসার নির্মূল করে দেয়া যায়।
ভারতে ২০১৬ সালে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত মহিলার সংখ্যাক ছিল ১ লাখ ৪২ হাজার। তারপরের বছর হয় দেড় লাখ। ২০১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেড়ে হয় ১ লাখ ৬০ হাজার। ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এত দ্রুত বৃদ্ধির কারণ সচেতনতার অভাব। স্তন ক্যানসারের লক্ষণ জেনে নিজেরাইনিয়মিত স্ক্রিনিং করলে গোড়াতেই ধরা পড়বে ক্যানসার। কোনো অস্বাভাবিকতা রয়েছে কি না তা বুঝতে কীভাবে নিজের স্তন চেক করবেন?
নিজেই নিজের পরীক্ষা করার উপায় হলো স্তনের উপর হাতের চাপ দিয়ে বোঝা কোথাও কোনো অস্বাভাবিক স্ফীত অংশ আছে কি না, কোনো অংশ শক্ত হয়ে আছে কি না বা ব্যথাহীন কোনো লাম্প আছে কি না। স্তনের উপর-নিচ ও দু’পাশে হাতের চাপ দিয়ে এটি বুঝতে হবে। এরপর খুঁটিয়ে দেখতে হবে নিপল থেকে কোনো ডিসচার্জ হচ্ছে কি না। এই লক্ষণগুলোর কোনো একটি দেখা গেলে বা যেকোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলে আগে ডাক্তার দেখান। পরামর্শ নিন ব্রেস্টক্যানসার বিশেষজ্ঞর। প্রতি মাসে একবার অথবা ১৫ দিন অন্তর এভাবে সেলফ-স্ক্রিনিং করতে হবে। বাড়ির মা, চাচি, খালা, দাদি, নানি- সবাই এভাবে নিজের স্তনের প্রতি খেয়াল রাখলে ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা বাড়বে।
ব্রেস্টের কোথায়, ঠিক কতটা ক্যানসার ছড়িয়েছে তা নির্ধারণ করতে রেডিওলজিক্যাল ও সোনোলজিক্যাল কিছু পরীক্ষা জরুরি। এছাড়া করতে হয় কোরবায়োপসি। কাদের ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি? পরিবারে আগে কারো ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার ইতিহাস থাকলে বয়স চল্লিশ হলেই সাবধান হতে হবে। প্রতি তিন বছর অন্তর তাদের ম্যামোগ্রাফি ও স্তনের আলট্রাসোনোগ্রাফি করে দেখে নিতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত ব্রেস্ট সার্জনের পরামর্শ নেয়া জরুরি। কারণ জিনগত কারণে এদের স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে যথেষ্ট।
লেখক : কনসালট্যান্ট জেনারেল ও ব্রেস্ট সার্জন, পরামর্শে পিয়ারলেস হসপিটাল
সূত্র : বর্তমান