যে ৫ খাবারে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে
যে ৫ খাবারে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে - ছবি : সংগ্রহ
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যা আরো বাড়ে। এ ছাড়াও যাদের ওজন বেশি, যারা প্রায় প্রতি দিন চর্বি জাতীয় খাবার খান, তাদের উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেশি। মানসিক চাপ, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন উচ্চ রক্তচাপের নেপথ্যে রয়েছে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে স্ট্রোক কিংবা হৃদ্যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য সবার আগে নিজের খাদ্যতালিকায় বদল আনতে হবে। এমন বেশ কিছু কার্বহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য আছে যা নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখতে পারলেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলাই ভালো। ময়দা, চিনি, কেক, প্যাটি, বার্গার, সাদা পাঁউরুটির মতো খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। আটার রুটির বদলে জোয়ার, বাজরা, রাগির রুটি খেতে পারেন। সাধারণ ইডলি-ধোসার বদলে সুজি বা রাগির ইডলি খান। ওজন যত নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, তত রক্তচাপও কম থাকবে।
জেনে নিন খাদ্যতালিকায় কোন শর্করা জাতীয় খাবার রাখতে পারলেই এই রোগ বশে আনা সম্ভব।
১। কলা : রক্তচাপের সমস্যা এড়াতে প্রতি দিন একটি করে কলা খাওয়া যেতেই পারে। কলায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম রয়েছে, যা শরীরে প্রবেশ করার পর সোডিয়ামের প্রভাব কমাতে শুরু করে। কাঁচা কলাও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ উপকারী।
২। দই : এই খাবারটি ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ। এই মৌলগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি দইয়ে থাকে অনেক উপকারী ব্যাক্টেরিয়ায়া যা প্রোটিন পরিপাকে সহায়তা করে ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর পরক্ষ প্রভাব পরে রক্তচাপের উপরেও।
৩। ওটস : পটাশিয়াম সমৃদ্ধ এই খাবার উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য সেরা বিকল্প। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে করে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখুন ওটস।
৪। খেজুর : এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট- এই সবকটি উপাদান রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫। কমলালেবুর রস : কমলালেবুর রসে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন বি এবং হেসপিরিডিন যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে উপস্থিত থাকে ফ্ল্যাভনোয়েড রক্তচাপ কমাতে দারুণ উপকারী।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
ফ্রোজেন শোল্ডারের চিকিৎসা
ডা: মো: মুবদিউর রহমান
হাত নাড়ালেই কাঁধসন্ধি বা শোল্ডার জয়েন্টে ব্যথা। ব্যথার জন্য পিঠ চুলকানো যায় না, এমনকি রাতে ঘুমাতে কষ্ট হয়। এই সমস্যা নিয়ে অনেক বয়স্ক রোগীরা ভুগেন, বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস আছে। এ সমস্যার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ফ্রোজেন শোল্ডার।
ফ্রোজেন শোল্ডার কি? কেন হয়?
হাতের সাথে কাঁধের যে সন্ধি তার নাম শোল্ডার জয়েন্ট। এই জয়েন্টে এক ধরনের প্রদাহ-ব্যথা হলে তাকে ফ্রোজেন শোল্ডার বা ক্যাপসুলাইটিস বলে।
ষ এই জয়েন্টের ভেতরে সাইনোভিয়াল ক্যাপসুল নামক পর্দা থাকে
ষ ক্যাপসুলের ভেতরের সাইনোভিয়াল ফ্লুইড নামক তরল ধীরে ধীরে কমে যায়
ষ ফলে সাইনোভিয়াল ক্যাপসুল-পর্দা সঙ্কুুচিত হয়ে শোল্ডার জয়েন্ট জমে শক্ত হয়ে যায়।
কাদের হয়?
বয়স্ক পুরুষ বা মহিলা যে কারোর এ রোগ হতে পারে, বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস আছে কারণ কি? এ রোগের নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি, তবে কিছু কারণে এ রোগ ত্বরান্বিত হয়, যেমন-
ষ কাঁধের সন্ধিতে কোনো আঘাত
ষ ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি
ষ ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড বা হাতের অস্ত্রোপচারের পর
ষ থাইরয়েডের সমস্যা
ষ আর্থ্রাইটিস-বাতরোগ ইত্যাদি।
লক্ষণ সমূহ কি?
ষ কাঁধ শক্ত হয়ে যাওয়া
ষ দীর্ঘদিন ধরে সোল্ডার জয়েন্টে ব্যথা অনুভব হবে।
ষ ব্যথা জয়েন্টের চারপাশে হতে পারে অথবা হাতের পাশ দিয়ে নিচেও নামতে পারে।
ষ দৈনন্দিন কাজে হাত নড়াচড়া করতে ব্যথা তীব্র হতে পারে।
ষ কাঁধ থেকে হাত নড়ানোর ক্ষমতা হ্রাস
ষ হাত মাথার উপরে তুলতে কষ্ট হবে এবং ব্যথা লাগবে
ষ পিঠ চুলকানো, জামাতে হাত ঢুকানো, চুল আঁচড়ানো, টয়লেট করে পানি খরচ করা ইত্যাদি কাজ করতে কষ্ট
ষ আক্রান্ত কাঁধের ওপর শুতে বা ঘুমাতে কষ্ট
ষ ধীরে ধীরে জয়েন্টের মুভমেন্ট কমে আসবে এবং এক সময় হাত দিয়ে স্বাভাবিক কাজ করাও কষ্ট হবে
কিভাবে রোগ নির্ণয় হয়?
রোগের ইতিহাস জানা এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কর্তৃক নিজ হাতে কাঁধ-জয়েন্ট পরীক্ষা করা জরুরি। এর সাথে কিছু পরীক্ষা করা প্রয়োজন। যেমন-
ষ রক্ত পরীক্ষা
ষ শোল্ডার জয়েন্টের এক্স-রে
ষ শোল্ডার জয়েন্টের আলট্রাসনোগ্রাম
ষ শোল্ডার জয়েন্টের এমআরআই ইত্যাদি
চিকিৎসা কি?
এ রোগের চিকিৎসার জন্য কিছু ওষুধ এবং কিছু ওষুধ ছাড়া চিকিৎসাপদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ।
ষ ব্যথা থাকলে ব্যথানাশক ওষুধ দেয়া হয়
ষ ওষুধ ছাড়া চিকিৎসা পদ্ধতি গুলোর মধ্যে রয়েছে-
ষ কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা
ষ কিছু শিখানো পদ্ধতিতে ব্যয়াম করা
ষ কিছু ফিজিওথেরাপি দেয়া
ষ বেশি ব্যথা বা জয়েন্টের নড়াচড়ার ক্ষমতা বেশি কমে গেলে শোল্ডার জয়েন্টের ক্যাপসুলের ভেতরে ইনজেকশন দিতে হয়।
মনে রাখতে হবে, সঠিক পদ্ধতিতে ব্যয়াম করা এ রোগের প্রধান চিকিৎসা, যে পাশে সমস্যা, সেদিকে কাত হয়ে শোয়া যাবে না। ভারী জিনিস টানা যাবে না। ডায়াবেটিস থাকলে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
রোগের পরিণতি কি?
ষ কষ্টদায়ক হলেও, এটি কোনো প্রাণঘাতী রোগ নয়
ষ আপনার আক্রান্ত কাঁধ অচল হয়ে যাবে না
ষ সঠিক চিকিৎসা নিলে এ রোগ পুরোপুরি ষোলআনা ভালো হয়ে যায়
লেখক : সহকারী রেজিস্ট্রার,
ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ