'একদিন পাখি সব মেলি দিল ডানা, প্রজাপতি হল তারে কে করিবে মানা' শৈশবকালে এই ছড়াটি যেন পৃথিবীর সব শিশুর কাছে স্বপ্নের মতো। কিন্তু কী সেই স্বপ্ন? পাখিরা যেমন ডানা মেলে আকাশে উড়ে বেড়ায় ঠিক তেমন মানুষও যদি আকাশে উড়ে বেড়াতে পারতো। তাই যেমন ভাবনা তেমন কাজ। আকাশ পথে পাখির উড়ে বেড়ানোকে হাতিয়ার করে কয়েক শ' বছর আগে মানুষ তৈরি করেছে উড়োজাহাজ অর্থাৎ এরোপ্লেন'। কালে কালে আকাশে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্নকে মানুষ বাস্তবায়ন করেছে বিমান অর্থাৎ 'এরোপ্লেন'কে সঙ্গী করে। আসলে উড়োজাহাজে চড়ে আকাশের বুকে উড়ে বেড়াতে কার না ভালো লাগে। কিন্তু শুধু উড়ে বেড়ালেই তো হবে না।

জানতে হবে এরোপ্লেন অর্থাৎ উড়োজাহাজের আসল রহস্য। দিনভর চলার পথে সব মানুষকেই রাস্তায় ট্র্যাফিক নিয়ম মেনে চলতে হয়। কিন্তু আকাশ পথ বলে কথা। এখানে পিচ রাস্তার বালাই নেই। তাই কিভাবে, কোন পথে আকাশে প্রতিনয়িত উড়ে বেড়ায় হাজার হাজার বিমান এমনকি কিভাবে কন্ট্রোল করা করা হয় উড়োজাহাজ অর্থাৎ এরোপ্লেন' কে তা নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই।
তবে আসুন জেনে নেয়া যাক বিমানের আসল রহস্য

এ বিষয়ে প্রথমেই জেনে নেয়া প্রয়োজন ফ্লাইট ট্র্যাকিং সিস্টেম আসলে কী?

আকাশ পথে উড়ে বেড়ানোর সময় বিমানটির অবস্থান, গতি প্রকৃতি, উচ্চতা সম্পর্কে জানতে বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ এই ফ্লাইট ট্র্যাকিং সিস্টেম বা পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এই পদ্ধতিটির মাধ্যমে আকাশে উড়ে বেড়ানো বিমানের যাবতীয় ডেটা বা তথ্য খুব সহজেই পেয়ে যান বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিমানে থাকা যাত্রীদের কাছে এটি খুব অসাধ্য মনে হলেও এই ফ্লাইট ট্র্যাকিং সিস্টেমটি অতি সহজ। এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ অটোমেটিক অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় নির্ভরশীল নজরদারি-সম্প্রচার প্রযুক্তির সাহায্য নেন।

এই প্রযুক্তির অন্যতম একটি সিস্টেম হল রাডার সিস্টেম। বহুকাল আগে থেকেই আকাশে উড়ে বেড়ানো বিমানের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আদানা প্রদানের পাশাপাশি আকাশ পথে বিমানটির অবস্থান সম্পর্কে অবগত হন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। মূলত এই ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটগুলি ফ্লাইটের সঠিক অবস্থান খুঁজে বের করার জন্য কাজ করে। ফ্লাইট-ট্র্যাকিং প্রযুক্তি বিমান শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে। সাধারণত, বিমানগুলো ট্র্যাক করা বা তার থেকে পাওয়া ডেটা বা তথ্য গুলি সহজে বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাতেই এই ফ্লাইট ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। তবে বর্তমানে এই পদ্ধতিটি আরো শক্তিশালী করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। রাডার পদ্ধতি থাকা স্বতেও বর্তমানে বা আধুনিক বিমানে ব্যবহার করা হয় এডিএস-বি প্রযুক্তি।

এডিএস-বি প্রযুক্তি আসলে কী?

এডিএস-বি প্রযুক্তি হলো একটি জটিল, অপেক্ষাকৃত নতুন সিস্টেম যা ফ্লাইট ট্র্যাক করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এডিএস-বি প্রযুক্তি হলো একটি অত্যাধুনিক সিস্টেম যা পাইলট বা বিমান চালকদের জন্য নির্ভুলভাবে পুরো বিমানের ট্র্যাফিক সিস্টেম কে ট্র্যাক রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এটি পাইলটদের অন্যান্য তথ্যের সাথে আকাশ পথের মানচিত্র এবং আবহাওয়ার আবহাওয়ার যাবতীয় আগাম তথ্য দিতে সক্ষম এ ছাড়াও এই প্রযুক্তির ব্যবহার করে তার দ্বারা পাঠানো অন্যান্য তথ্যের মধ্যে রয়েছে বিমানের গতি, উচ্চতা এবং বিমানটিকে সঠিক ভাবে চিহ্নিতকরণ।

এডিএস-বি কিভাবে কাজ করে?

মূলত এই পদ্ধতিটি ব্যবহারের জন্য স্যাটেলাইট বা কৃত্তিম উপগ্রহের সাহায্য নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমেই বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বিমান চালকের মধ্যে যাবতীয় তথ্য আদান-প্রদান পাশাপাশি যেকোনো প্রকার সংকেত প্রেরণের কাজ করা হয়। করা হয়। প্রথমে বিমানের ট্রান্সপন্ডার থেকে সংকেত রিসিভরথাত গ্রহণ করা হয়। তারপর বিমান চালক দ্বারা পাঠানো যাবতীয় তথ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোকে একটি রিসিভার দ্বারা বাছাই করা হয়। প্রযুক্তিটিতে বিভিন্ন সংকেত প্রেরণের জন্য একটি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়। উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহারের কারণে অনেক সময় প্রেরিত তথ্য পাঠানোর পথ সীমিত হয়ে যায়। এমনকি সমুদ্রের শেষপ্রান্তে যে সময় সিগনাল একেবারেই চলে যায় ওই সময় বিমানটিকে রিসিভার থেকে বিমানের উচ্চতা আনুপাতিক হারে ক্রমশ বাড়িয়ে নেন তারপর ফের ভালো ও এবং পরিচ্ছন্নভাবে তথ্য আদান প্রদানের কাজ চলতে থাকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বিমান চালকের মধ্যে।

কিভাবে এডিএস-বি ছাড়া ফ্লাইট ট্র্যাক করা হয়?

নন-এডিএস-বি ফ্লাইটগুলো মূলত রাডার ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে ট্র্যাক করা হয়। এ ছাড়াও মাল্টিলেটেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে বিমানের অবস্থান নির্ণয় করা হয়। এমএলএটি সিস্টেম বা পদ্ধতিতে টাইম ডিফারেন্স অফ অ্যারাইভাল নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে বিমানের যাবতীয় গতি প্রকৃতি এবং তথ্য আদান-প্রদানের কাজ করা হয়। তবে আকাশে বিমানের অবস্থান ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার ফুটের অবস্থানে থাকলেই এই সিস্টেম বা পদ্ধতিটির সাহায্যে কাজ করা হয় বিমানের অবস্থান সম্পর্কে জানার জন্য।

সূত্র : নিউজ ১৮