রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপি হেরে যাবে!
কোবিন্দ ও মোদি - ছবি : সংগৃহীত
ভারতের পাঁচ রাজ্যের ভোট এখন অতীত। এবার রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়ছে দেশটির রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে। চার রাজ্যের বিপুল জয়ে বর্তমানে উজ্জীবিত গেরুয়া শিবির। কিন্তু বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব জুলাই মাসের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই ঘোরতর টেনশনে। কারণ একটাই। বিধায়ক সংখ্যা। রাষ্ট্রপতি পদে মসৃণভাবে নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে যে সংখ্যার প্রয়োজন, তা এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি বা এনডিএ’র কাছে নেই। আর সেই কারণেই গেরুয়া শিবিরের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে পরাস্ত করতে মরিয়া বিরোধীরা। তোড়জোড় চলছে জোট গঠনের। আর এই লক্ষ্যপূরণে সবথেকে বেশি উদ্যোগী বিভিন্ন বিরোধী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। সেই তালিকায় প্রথমেই নাম পশ্চিমবঙ্গের নেত্রী মমতা ব্যানার্জির।
পরিসংখ্যান বলছে, সদ্য জেতা চার রাজ্যে বিধায়ক সংখ্যা ২০১৭ সালের তুলনায় কমে গেছে। পাঁচ বছর আগে উত্তরপ্রদেশে ৩২৫ জন এনডিএ এমএলএ ছিলেন। এবার সংখ্যাটা ২৭৩। উত্তরাখণ্ডেও ৯ জন বিধায়ক কমে গেছে। পক্ষান্তরে, রাজ্যে রাজ্যে এমএলএ বেড়েছে বিরোধী দলগুলোর। ভারতজুড়ে মোট ৪,১২০ জন বিধায়ক রয়েছেন। তার মধ্যে বিজেপির এমএলএ সর্বাধিক, ১৩৭৬। কংগ্রেসের ৬৯০। এছাড়া রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, শিবসেনা, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি, এনসিপি, জনতা দল (সেকুলার), ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, তেলুগু দেশম ইত্যাদি বিজেপি বিরোধী দল। তাদের ও কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা সম্মিলিতভাবে বিজেপির তুলনায় বেশি।
এই পরিসংখ্যান সামনে রেখেই সম্প্রতি বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বলেছেন, ‘চার রাজ্যে জিতেছেন বলেই ভাববেন না খেলা শেষ হয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জেতা এত সহজ হবে না!’
তার ওই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট যে বিরোধীদের মধ্যে গোপন শলাপরামর্শ শুরু হয়ে গেছে। এই জোটের বাইরে রয়েছে একমাত্র বিজু জনতা দল এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস। এই দুই দলের সমর্থন বিজেপির লাগবেই। কোনোভাবে তারা যদি বেঁকে বসে, জেতা দুষ্কর হবে বিজেপি প্রার্থীর। এই দুই দলকে পাশে পেলেও যে বিজেপির প্রার্থী অনায়াসে জয়ী হবেন, এমন নয়। বস্তুত টানটান এক সমীকরণের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে ইলেকটোরাল কলেজ।
কাকে বলে ইলেকটোরাল কলেজ? এটি হল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভরকেন্দ্র। ভারতের বিধায়ক ও সংসদ সদস্যদের ভোট যুক্ত হয়ে তৈরি হয় ইলেকটোরাল কলেজ। সংসদ সদস্য এবং বিধায়কদের প্রতিটি ভোটের একটি নির্দিষ্ট মূল্য আছে। এমপিদের প্রতিটি ভোটের মূল্য ৭০৮। বিধায়কদের ক্ষেত্রে কিন্তু তা নির্দিষ্ট নয়। রাজ্যের জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় বিধায়কদের ভোটের মূল্য। যেমন উত্তরপ্রদেশে এটি ২০৮, পশ্চিমবঙ্গে ১৫১। হিসেব বলছে, বিরোধী ইলেকটোরাল কলেজ একত্র হলে বিজেপি এককভাবে নিজেদের প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি পদে জেতাতে পারবে না। আর সেটা বুঝে বিরোধীদের মধ্যে তৎপরতা তুঙ্গে। মোট প্রদত্ত ভোটের অর্ধেক প্লাস ওয়ান, এই হলো গরিষ্ঠতার ম্যাজিক নম্বর।
রাষ্ট্রপতি পদে রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ সমাপ্ত হচ্ছে ২৪ জুলাই। বিজেপি কি তাকেই ফের প্রার্থী করবে? নাকি উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুকে দেয়া হবে প্রার্থীপদ? এই নিয়ে জল্পনা চলছে।
বিরোধী জোট চাইছে এমন কাউকে প্রার্থী করতে, যিনি সর্বজনগ্রাহ্য। বিশেষত অকংগ্রেসি প্রার্থী মনোনয়নের দিকে ঝুঁকছে তারা। এবার কংগ্রেস কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
সূত্র : বর্তমান