এবার কি নতুন কোনো স্ট্রেন?
এবার কি নতুন কোনো স্ট্রেন? - ছবি : সংগ্রহ
ফের উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে কোভিড ১৯। বিশ্বের কয়েকটি দেশে ফের মাথাচাড়া দিচ্ছে রোগ। বিশেষত চীনে এই পুনরুত্থানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে সে দেশে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই চীনে ফের বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সূত্রের খবর, হংকং থেকে ছড়িয়ে পড়ছে রোগ নতুন করে।
ইতিমধ্যে চীনের একাধিক শহরে লকডাউন জারি করা হয়েছে। প্রায় এক বছর পর পড়শি এই দেশে ফিরল কোভিডে মৃত্যুও। মারণ এই ভাইরাসের প্রভাবে চিনে এখনও পর্যন্ত দু'জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়াতেও হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে কোভিড সংক্রমণ। অন্যদিকে, সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ লক্ষ্য করা গিয়েছে হংকংয়ে।
কোভিড ১৯ মহামারী ভারতে আপাতত কমের দিকে। ২০২০ সালের মে মাস থেকে প্রতিদিন সংক্রমণের সংখ্যা সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে ক্রমানুসারে। যদিও বেশ কয়েকটি দেশ, বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলি খুব বেশি সংখ্যক রোগী নিয়ে চিন্তিত।
চীনে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল করোনা। ২০২০ সালের এপ্রিলের মধ্যেই দেশে প্রথম ৮৫০০০ সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছিল।গত তিন মাসে হংকংয়ে ১০ লক্ষের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ৪ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি। পাশাপাশি দাপট বাড়াচ্ছে ওমিক্রন।
WHO-এর তরফে জানানো হয়েছে, গত সপ্তাহের তুলনায় বিশ্বজুড়ে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে করোনা সংক্রমণ। মার্চের ৭ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের ১ কোটিরও বেশি মানুষ। আর এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৩ হাজার মানুষ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু জানিয়েছে, এটা কেবল হিমশৈলের চূড়া। মানুষ যদি এখনই সতর্ক না হয়, বা যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আগামী দিনে আরও বড় বিপদ আসতে চলেছে। এখনই সতর্ক হতে হবে সকলকে।
২০২০ সালে চিনের যে পরিস্থিতি ছিল, তার চেয়েও খারাপের দিকে এখনসেখানকার পরিস্থিতি। দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থাও ভীষণ খারাপ। একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লক্ষের বেশি মানুষ।
অপরদিকে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপে। এ ছাড়া বিশ্বের একাধিক দেশের কোভিড পরিস্থিতি দেখে নড়ে বসেছে ভারত সরকার। কেন্দ্রের তরফ থেকে চিঠি দিয়ে রাজ্যগুলিকে সতর্ক হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। উদাসীনতার জন্য চতুর্থ ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাতে পারে।
গত তিন সপ্তাহে পরিস্থিতি ব্যাপক ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা ওয়েবসাইট অনুসারে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দৈনিক রোগীর সংখ্যা ধারাবাহিক ভাবে তিন অঙ্কে রয়েছে। এখন হাজারে প্রবেশ করেছে। গত দশ দিনে দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০০ টি নতুন কেস ধরা পড়েছে।
হংকংয়ের অবস্থা অবশ্য তেমন নয়। হংকং নতুন সংক্রমণের একটি বিশাল তরঙ্গের সম্মুখীন হয়েছে। বেশ কয়েকটি মৃত্যুও হয়েছে। চলতি মাসে হংকংয়ে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ৩৫০০ জনের বেশি মৃত্যু হয়েছে।
যে দেশে ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র সামান্য আক্রান্তের সন্ধান মিলেছিল। হাসপাতালগুলিতে এখন উপচে পড়েছে রোগী। রোগীরা শয্যা বা গুরুতর স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই প্রচুর পরিমাণে কোভিড -১৯ কেস ধরা পড়েছে। জার্মানিতে প্রতিদিন লক্ষাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন গড়ে ২৫,০০০এরও বেশি নতুন রোগীর সন্ধান মিলেছে।
এটি কি নতুন কোনো স্ট্রেন?
এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের নতুন কোনো স্ট্রেনের সন্ধান মিলেছে বলে জানান হয়নি। বেশির ভাগ দেশেই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, হংকং এবং চীনে আঘাত করেছে ওমিক্রন।
বিশ্বের অন্য দেশেগুলির তুলনায় বেশ কয়েক মাস দেরিতেই সেখানে আঘাত করেছে এই স্ট্রেন। ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ওমিক্রন ভারতের তুলনায় অনেক বেশি স্থায়ী হিসেবে রয়ে গেছে।
চীন এবং হংকংয়ের পরে ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশের মতো এই দুটি অঞ্চল এখন যে ধরনের করোনা ঢেউ অনুভব করছে তা সত্যিই কখনও অতীতে দেখেনি দেশগুলো।
ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ২৫০৩। সুস্থ হয়েছেন ৪৩৭৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। দেশের সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৬,১৬৮। গত ৬৮০ দিনে সবচেয়ে কম করোনা আক্রান্ত এ দেশে।
এখনও পর্যন্ত গোটা দুনিয়ায় ৪৫.৮৫ কোটি করোনা আক্রান্তের খবর মিলেছে। সুস্থ হয়েছেন ৩৯.১৬ কোটি মানুষ। এর মধ্যে সক্রিয় করোনা রোগী ৬.০৮ কোটি। দুনিয়াজুড়ে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬০.৬ লক্ষ।
গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি করোনার আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। নতুন করে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার ১৭৬ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। তার পরে আছে জার্মানি। আক্রান্তের সংখ্যা ২,১৩,২৬৪। ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৯৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন ভিয়েতনামে। ফ্রান্স, ইতালি ও রাশিয়া সংক্রমিত সংখ্যা যথাক্রমে ৬০,৪২২, ৪৮,৮৮৬ এবং ৪৪,৯৮৯।
সূত্র : নিউজ ১৮