দুপুরের ভাত ঘুম কেন প্রয়োজন?
দুপুরের ভাত ঘুম কেন প্রয়োজন? - ছবি : সংগৃহীত
দুপুরে আপনি ঘুমোতে পছন্দ করেন? ভরপেট খাওয়া দাওয়ার পর দুপুরে ঘর অন্ধকার করে পাশবালিশটি জড়িয়ে শুয়ে পড়তে পারা কি আপনার কাছে মহাসুখ? তাহলে আপনাকে জানতেই হবে এই দুপুরের ঘুমোনোর উপকারিতা। অনেকেই দুপুরে, রাতে দিনে দুবার ঘুমানো বলে বহু কটাক্ষেরও মুখোমুখি হন! তবে যারা কটাক্ষ করছেন তাদের ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়ার জন্য দুপুরে ঘুমের উপকারিতা সম্পর্কে আপনাকে জানতেই হবে।
দুপুরের ঘুম ও গবেষণা
ভরপেট খাওয়া হোক বা না হোক, প্রতিদিন দুপুরে যদি ২০ মিনিটও ঘুমানো যায়, তাহলে পেতে পারেন কাঙ্ক্ষিত স্বস্তি। গবেষণা বলছে, দুপুর ১ টা থেকে ৩ টে পর্যন্ত দপুরে ঘুম পাওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। গবেষণা এও বলছে, মাথা ও মনকে সতেজ রাখতে দুপুরে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের একটা পাওয়ার ন্যাপ জরুরি। এতে মেজাজ যেমন ভালো থাকে, তেমনই বাড়ে অধ্যাবসায়, কোনো কিছুতে প্রতিক্রিয়া দেয়ার সময় তৎপরতা দেখা যায়।
ঘুম ফেলে কফি নয়
যদি দুপুরে ঘুমঘুমভাব কাটানোর জন্য কফির দিকে ঝোঁকেন, তাহলে তা বাদ দিতে পারেন। কারণ যদি দুপুরে ঘুম পায়, তাহলে ঘুমিয়ে পড়াই শ্রেয়! বলছে বিভিন্ন গবেষণা। তবে ঘুম হতে হবে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য।
দুপুরের ঘুমের উপকারিতা-
বাড়ে স্মৃতিশক্তি
দুপুরে ঘুমিয়ে পড়লে তা বহুদিক থেকে উপকার দেয়। এত বাড়ে স্মৃতি শক্তি। বহু অধ্যাবসায় বেড়ে যায়। ঘুম থেকে উঠে ঘোর কাটিয়ে মানুষের সচেতনতাও বেড়ে যায়। তবে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের বেশি দুপুরের ঘুম হলেই তাতে অস্থিরতাভাব জন্মায়।
সৃষ্টিশীলতা বাড়ে
দুপুরে ঘুমিয়ে পড়া খুবই উপকারি। ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের ঘুমের ফলে স্মৃতিশক্তির পাশাপাশি বাড়ে সৃষ্টিশীলতা। এতে সতেজতা আসে। কমে যায় মানসিক চাপ, কেটে যায় ক্লান্তি। কোনও কাজে মনোনিবেশ করতেও সুবিধা হয়।
মনের জোর বাড়ায়
ঘুম যদি ভালো হয় দুপুরে, তাহলে তা মনের জোরকে দ্বিগুণ করে দেয়। মনের জোর বেড়ে যাওয়ার ফলে, বহুকাজই ঘুম থেকে উঠে দাপটের সঙ্গে করা যায়। কাজে আসে নতুন উদ্যম।
কেউ ঘুমোন টানা ২০ ঘণ্টা, কেউ ঘোরের মধ্যে শোনেন বিকট আওয়াজ!
মজাদার খাওয়ার পর দুপুরের ভাতঘুমে মজে যেতে অনেক বাঙালিই পছন্দ করেন! আবার অতিরিক্ত ঘুম অনেকের কাছেই বিলাসিতা সম ঠেকে! ঘুম নিয়ে প্রতিটি মানুষেরই বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে ঘুম থেকে বিভিন্ন মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যধিও জন্মাতে পারে। বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কখনো ঘুমের জেরে টানা ২০ ঘণ্টা কেউ স্বপ্নের আবেশেই থেকে যেতে পারেন, আবার ঘুমের ব্যাধির জেরে অনেকে খুব জোরালো আওয়াজ শুনতে পান, যে আওয়াজ একেবারেই বাস্তব নয়।
স্লিপ প্যারালাইসিস
স্লিপ প্যারালাইসিস খুবই ভয়াবহ রোগ। এরফলে ঘুমের মধ্যে থেকে বা ঘুম থেকে উঠে অনেকেই ২০ মিনিট পর্যন্ত নিজের শরীরকে টেনে তুলতে পারেন না। বহু রোগীর মধ্যে এই রোগ হলে হ্যালুসিনেশন থাকে বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে এর থেকে অনেকেরই ইনসোমনিয়া জন্মায়। তবে এই রোগ সারাতে রয়েছে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি ও ওষুধও রয়েছে একাধিক।
স্লিপিং বিউটি সিন্ড্রোম
এই রোগে টানা ২০ ঘণ্টা কেউ ঘুমিয়ে থাকতে পারেন। এমন ঘটনা শুনলে অনেকেরই হিন্দু মিথলজির কুম্ভকর্ণের কথা মনে পড়তে পারে। পুরুষদের এই রোগ বেশি হয় মহিলাদের তুলনায়। এই রোগের কারণ, মস্তিষ্কের স্নায়ুর নিয়ন্ত্রণ, যার ফলে হাইপার-সোমনোলেন্স হয়। এই রোগের উপসর্গ হলো, বিরক্তি, শিশুসুলভ ভাব, হ্যালুসিনেশন। এমন রোগীদের অনেক সময়ই বিভ্রান্তি জন্মায়। এই রোগ নিরাময়ে বহু সময়ই সিটি স্ক্যান, এমআরআই, ব্লাড টেস্ট করা হয়।
হেড সিন্ড্রোম
এই রোগের জেরে অনেকেই একটি বিকট আওয়াজ শুনতে পান। মনে হয় যেন কিছু বিস্ফোরণ ঘটল। যা বাস্তবে কিন্তু হয় না। যখন এই রোগীরা ঘুমিয়ে পড়েন বা মাঝরাতে উঠে পড়েন ঘুম থেকে তখনই এরকম আওয়াজ শুনতে পান। প্রচণ্ড মানসিক চাপ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ঘুমের গণ্ডগোল বা কানের গঠনগত সমস্যার জন্য এমন রোগ দেখা যায়। এই রোগের চিকিৎসায় বয়সের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা হয়। তবে নির্দিষ্ট রুটিনে ঘুম এক্ষেত্রে জরুরি।
শিফ্ট ওয়ার্ক স্লিপ ডিসঅর্ডার
বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা বিভিন্ন শিফ্টে কাজ করে থাকেন। খুব ভোরের শিফ্টের পরই যদি রাতের শিফ্ট থাকে, তাহলে এই ধরনের নিদ্রাঘটিত সমস্যা দেখা যায়। এই ধরনের রোগ থেকে ইনমনিয়া তৈরি হয়। এরফলে এনার্জি কমে যায়, নিজেকে দুর্বল মনে হয়। আসে অবসাদ, ক্রমাগত মাথা যন্ত্রণা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কফি জাতীয় খাওয়া কমাতে হবে। প্রয়োজনে ঘুমের সময় বাড়াতে হবে। সকালে ঘুমের সময় আওয়াজ যাতে কানে না আসে, তার ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস