ইউক্রেনের আজব ব্যাটালিয়ন : রুশদের প্রধান টার্গেট
ইউক্রেনের আজব ব্যাটালিয়ন : রুশদের প্রধান টার্গেট - ছবি : সংগৃহীত
মারিউপোল। ইউক্রেনের একটি ছোট্ট শহর। মেরেকেটে ৫ লাখ মানুষের বাস। সপ্তাহখানেক আগে শহর লাগোয়া একটি গ্রামে ঢুকছে রুশ সাঁজোয়া বাহিনী। অস্ত্রসম্ভারে ঠাসা প্রতিটি গাড়ি। সেনাদের কাঁধে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। চলতে চলতে এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে তারা। গাড়ির সামনে সাদা কালিতে লেখা ইংরেজি বর্ণমালার শেষ অক্ষর— ‘জেড’। যা কি না ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর প্রতীক। ঠিক একই সময়ে এই অভিযানের পাল্টা একটি ভিডিও ঘুরপাক খাচ্ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার তিনটি সাঁজোয়া গাড়ির অবশিষ্ট বলে কিছু নেই। পদাতিক বাহিনীর চারটি গাড়িও পুড়ে ছারখার। রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে উর্দিধারীদের লাশ। পরের আর একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পুড়ে খাঁক হয়ে যাওয়া একজন উর্দিধারী। তিনি নাকি রুশ বাহিনীর জেনারেল পদমর্যাদার অফিসার। এমনটাই দাবি আজব ব্যাটালিয়নের। যাদের ‘নব্য নাৎসি বাহিনী’ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ। অনেকে আবার এদের কুখ্যাত ‘মিলিশিয়া গ্রুপ’ হিসেবেও দেখতে চান।
নাম-বিতর্ক যাই থাক, আজব ব্যাটালিয়ন যে হিটলারের ‘নাৎসি বাহিনী’র মতাদর্শে বিশ্বাসী, তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কারণ, তারা যে প্রতীকটি ব্যবহার করে সেটা নাৎসীদেরই। স্টকহোম সেন্টার ফর ইস্টার্ন ইউরোপিয়ান স্টাডিজের গবেষক অ্যান্ড্রেজ উমল্যান্ড বলছিলেন, ‘এই ধরনের মিলিশিয়া গ্রুপকে মুক্ত কমরেডশিপ বা সংগঠিত নব্য নাৎসি বাহিনী বলে অভিহিত করা যুক্তিসঙ্গত। আজব বাটালিয়নের ব্যবহৃত ‘উলফ অ্যাঞ্জেলস’ প্রতীকই এর বড় প্রমাণ। কিন্তু আপামর ইউক্রেনবাসী তাদের কখনই ফ্যাসিবাদী বলে মনে করেন না।’
এখন ওই দু’টি ভিডিও পাশাপাশি রেখে দেখলে বোঝা যায়, মারিউপোলকে বাঁচাতে মরিয়া আজব বাহিনী। বুক ঠুকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তারা। পুরুষের সঙ্গে সমানে লড়ছে কিশোরী, তরুণী থেকে বৃদ্ধারাও। ফলে, খুব সহজে রুশ বাহিনী খারকিভ দখল করলেও মারিউপোলে তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। আজব সদস্যরা এটা বেশ বুঝতে পারছেন, মারিউপোল রাশিয়ার দখলে চলে গেলে তাদের সংগঠনের অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে পড়বে। এই শহরেই আজব বাটালিয়নের সদর দপ্তর। মূলত, রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই সংগঠনটি তৈরি করেছিলেন আন্দ্রে বিলেৎস্কি নামে ইতিহাসের এক কৃতী ছাত্র।
পুতিন ‘যুদ্ধাপরাধী’, তোপ বাইডেনের, ক্ষিপ্ত রাশিয়া
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ঝাঁঝ চরমে। যুযুধান দু’পক্ষই পিছু হটতে নারাজ। স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক রাজনীতেও পারদ চড়ছে। প্রায় সপ্তাহ তিনেক যুদ্ধ চলার পর ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ তকমা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইটহাউসের বিবৃতির কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে মস্কোও। ক্রেমলিন একে রাষ্ট্র প্রধানের মুখে ‘ক্ষমার অযোগ্য বক্তৃতা’ বলে উল্লেখ করেছে। এর আগেও যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার সমালোচনা করেছেন বাইডেন। তবে ‘যুদ্ধপরাধী’র মতো কড়া শব্দ ব্যবহার করতে শোনা যায়নি তাকে। যা দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ায় যেন সেই ইঙ্গিত লুকিয়ে রয়েছে। এদিকে বাইডেনের পক্ষ নিয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিব জেন সাকি বলেন, ‘চলতি যুদ্ধের বর্বর ছবি দেখার পর বাইডেন বিচলিত হয়ে মন থেকেই এই উক্তি করেছেন।’ যেভাবে ইউক্রেনের ধ্বংসের ছবি প্রকাশ্যে আসছে তা ভয়াবহ বলেও মন্তব্য করেন প্রেসসচিব। পুতিনকে ‘নৃংশস একনায়ক’ বলেও কটাক্ষ করেন তিনি।
বাইডেনের আক্রমণের পর চুপ করে বসে নেই রাশিয়াও। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আমেরিকার উদ্দেশে বলেন, ‘যাদের বোমায় পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের এই বক্তব্য মেনে নেওয়া যায় না। এই বক্তব্য ক্ষমার অযোগ্য।’
যুদ্ধ শুরুর আগে রাশিয়াকে বারবার সতর্ক করেছিল আমেরিকা। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সেভাবে ইউক্রেনকে সাহায্য করেনি বাইডেন প্রশাসন। এমনকী পশ্চিম ইউরোপের কাছে থেকে আশানুরূপ সমর্থনও পাওয়া যায়নি। যা নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কি ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। তবে বুধবার ইউক্রেনকে ফের নিরাপত্তা খাতে একদফা আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন বাইডেন। ৮০ কোটি ডলার সহায়তা করা হবে। এর ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে মোট সাহায্যের অঙ্ক পৌঁছল ১০০ কোটি ডলারের ঘরে। গতকালই ইউএস কংগ্রেসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলেনস্কি আরও সামরিক সাহায্যের আবেদন জানান। মার্কিন রাজনীতিবিদদের তিনি ১৯৪১ সালে পার্ল হারবার ও ৯/১১-র হামলার কথা মনে করিয়ে দেন। জেলেনস্কি বলেন, সেই সময় আমেরিকার যে অবস্থা হয়েছিল, এখন ইউক্রেনের অবস্থা তেমনই।
সূত্র : বর্তমান