গ্লকোমার লক্ষণ ও প্রতিকার

অধ্যাপক ডা: এম. নজরুল ইসলাম | Mar 15, 2022 01:23 pm
গ্লকোমার লক্ষণ ও প্রতিকার

গ্লকোমার লক্ষণ ও প্রতিকার - ছবি : সংগ্রহ

 

১২ মার্চ পালিত হলো বিশ্ব গ্লকোমা দিবস। বিশ্ব গ্লকোমা সমিতি এবং বিশ্ব গ্লকোমা রোগী সমিতির যৌথ উদ্যোগে ২০০৮ সাল থেকেই পালিত হচ্ছে বিশ্ব গ্লকোমা দিবস। এ ছাড়া গত কয়েক বছর যাবত উদযাপিত করা হচ্ছে বিশ্ব গ্লকোমা সপ্তাহ। এ বছর ৮-১৪ মার্চ ২০১৫ পালিত হয় বিশ্ব গ্লকোমা সপ্তাহ। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব গ্লকোমা সপ্তাহ ও দিবস উদযাপিত হয়। বাংলাদেশ গ্লকোমা সোসাইটি এবং বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির সদস্যরা এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। জনসাধারণকে গ্লকোমা রোগ সম্পর্কে সচেতন করার জন্য বিনামূল্যে গ্লকোমা স্ক্রিনিং ক্যাম্প, র‌্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলÑ ‘বিট ইনভিজিবল গ্লকোমা, অদৃশ্য গ্লকোমা প্রতিহত করুন’।

সারা বিশ্বে অন্ধত্বের একটি প্রধান কারণ হলো গ্লকোমা। এ রোগটি উন্নত এবং উন্নয়নশীল সব দেশেই প্রায় সমানভাবে বিস্তৃত। বাংলাদেশে এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে গ্লকোমা বাংলাদেশে অন্ধত্বের তৃতীয় প্রধান কারণ। চল্লিøশোর্ধ বয়সের নারী-পুরুষের শতকরা প্রায় তিন জন এ রোগে ভুগে থাকেন। অথচ এটি কোনো দূরারোগ্য ব্যাধি নয়। এ রোগের চিকিৎসা আছে। রোগটির উপসর্গ ও লক্ষণ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা গেলে খুব সামান্য ওষুধেই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং প্রয়োজনবোধে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপারেশন করলে স্থায়ীভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব। অথচ চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হলে পরিণতি হলো অন্ধত্ব।

গ্লকোমা-জনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধ করার জন্য দরকার সতর্ক সচেতনতা।
বিশ্ব গ্লকোমা দিবসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী গ্লকোমা সচেতনতা বৃদ্ধি করা। প্রাথমিক অবস্থায় গ্লকোমা নির্ণয় করে এর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ওষুধ, লেজার বা সার্জারি করলে গ্লকোমা অন্ধত্বের হার ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে।

গ্লকোমা রোগ
চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ ১০ মি.মি. মারকারি থেকে ২১ মি.মি. মারকারি পর্যন্ত। এই চাপ কোনো কারণে বেড়ে গেলে চোখের (অপটিক) নার্ভ ও অন্যান্য অংশের ক্ষতিসাধন করে, দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়, বিশেষ করে দৃষ্টির পরিসীমার পরিবর্তন হয়। চোখের এই অবস্থার নামই গ্লকোমা।

চোখের সামনের ভাগে পেছনের চেম্বারে অনবরত যে তরল পদার্থ বা অ্যাকুয়াস হিউমার তৈরি হচ্ছে তা সামনের চেম্বারের কোণ দিয়ে বেরিয়ে যায় এবং রক্তের সাথে মিশে যায়। কোনো কারণে এই অ্যাকুয়াস বেশি তৈরি হলে কিংবা চোখ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি হলে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে যায় এবং গ্লকোমা রোগের উৎপত্তি হয়।

গ্লকোমা রোগের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-
ষ অনেক সময় এ রোগে কোনো উপসর্গ ছাড়াই মারাত্মক দৃষ্টিস্বল্পতা এমনকি চোখ অন্ধও হয়ে যেতে পারে।
ষ কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপসর্গের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে চোখ অন্ধ হতে পারে।
ষ অনেক শিশু এই রোগ নিয়ে জন্মাতে পারে।
ষ এক ধরনের গ্লকোমাতে চোখ লাল হয় এবং প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোনো অসুবিধা না হওয়ায় রোগীরা সাধারণ চোখওঠা মনে করে ভালো চিকিৎসা করান না, এর ফলেও গ্লকোমা রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব ঘটে।
গ্লকোমার শ্রেণিবিভাগ-

রোগের উৎপত্তি এবং কারণ অনুযায়ী গ্লকোমাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। তবে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। প্রাথমিক গ্লকোমা ও সেকেন্ডারি গ্লকোমা।
ক. প্রাথমিক গ্লকোমা : এ ধরনের গ্লকোমা চোখের সামনের চেম্বারের কোনো বিকাশগত ত্রুটির জন্য হয়ে থাকে। সাধারণত দুই চোখই প্রাথমিক গ্লকোমায় আক্রান্ত হয়। ৩৫ বছর বয়সের পরে নারী বা পুরুষ উভয়েরই এ ধরনের গ্লকোমা হতে পারে। এই রোগ সাধারণত বংশানুক্রমিক হয়ে থাকে। প্রাথমিক গ্লকোমাকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়। জন্মগত গ্লকোমা, প্রাথমিক অ্যাঙ্গেল খোলা গ্লকোমা এবং প্রাথমিক অ্যাঙ্গেল বন্ধ গ্লকোমা।

১. প্রাথমিক জন্মগত গ্লকোমা : সামনের চেম্বারের অ্যাঙ্গেলে বিকাশগত ত্রুটির কারণে এই রোগ হতে পারে।
২. প্রাথমিক অ্যাঙ্গেল খোলা গ্লকোমা : এই গ্লকোমাতে সামনের চেম্বারের কোণ বা অ্যাঙ্গেল স্বাভাবিক চোখের মতোই খোলা থাকে। অ্যাঙ্গেল দেখার যন্ত্র গোনিওস্কোপ দিয়ে দেখলে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায় না। এ ধরনের গ্লকোমাই সাধারণত বংশানুক্রমিক হয়ে থাকে এবং এদের সামনের চেম্বারের কোণে বিকাশগত ত্রুটির কারণে অ্যাকুয়াস বেরিয়ে যেতে পারে না। ফলে চোখের চাপ অনেক বছর ধরে আস্তে আস্তে বাড়ে।

৩. প্রাথমিক অ্যাঙ্গেল বন্ধ গ্লকোমা : এই রোগীর সামনের চেম্বার জন্মগতভাবে স্বল্প গভীর থাকে এবং সামনের চেম্বারের কোণ সরু থাকে। সাধারণত যাদের দূর-দৃষ্টি বা হাইপারমেট্রপিয়া আছে তাদের এই রোগ বেশি হয়। কোনো কারণে যদি এই সামনের চেম্বারের সরু কোণ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে অ্যাকুয়াসের বহির্গমন বন্ধ হয়ে যায়, ফলে চোখের চাপ হঠাৎ করে বেড়ে যায়।

খ. সেকেন্ডারি গ্লকোমা : চোখের বা শরীরের অন্য কোনো রোগে চোখর চাপ বৃদ্ধি পেলে তাকে সেকেন্ডারি গ্লকোমা বলা হয়। এ ধরনের গ্লকোমা সাধারণত এক চোখে হয়ে থাকে। চোখের ও শরীরের বহু কারণেই চোখের চাপ বেড়ে সেকেন্ডারি গ্লকোমা হতে পারে। খুব সাধারণ কারণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
সেকেন্ডারি গ্লকোমার সাধারণ কারণসমূহ-

১. চোখে আঘাতজনিত কারণে
২. চোখের ইউভিয়াইটিজ, স্কে¬রাইটিজ, ইত্যাদির জটিলতা হিসেবে
৩. চোখের ভেতরে রক্তক্ষরণ হলে
৪. চোখের লেন্স ফুলে গেলে, যেমন ছানির প্রাথমিক পর্যায়ে
৫. লেন্সের স্থানচ্যুতি হলে
৬. ছানি বেশি পেকে গেলে
৭. চোখের ছানির অস্ত্রোপচারের জটিলতা হিসেবে
৮. চোখের ভেতর কোনো টিউমার হলে
৯. চোখে নতুন ধমনী বা শিরা তৈরি হয়ে অ্যাঙ্গেল বন্ধ করলে
১০. কেন্দ্রীয় রেটিনাল ভেন বন্ধ হয়ে গেলে
১১. কোনো কোনো ওষুধ যেমন- স্টেরয়েড, এট্রপিন-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করলে

এ ধরনের গ্লকোমার কারণ দূর করতে পারলে এই রোগ ভালো হয়ে যাওয়ার খুব সম্ভাবনা থাকে।
গ্লকোমা সম্পর্কে আমরা সবাই সচেতন হলে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা গেলে এই ভয়াবহ চক্ষু রোগ থেকে অন্ধত্বের হার অনেক কমে যাবে। তখনই আমরা এই অদৃশ্য গ্লকোমাকে প্রতিহত করতে পারব।
লেখক : চক্ষু ও গ্লকোমা বিশেষজ্ঞ

বাংলাদেশ আই হসপিটাল, ঢাকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us