কোন পথে হাঁটবে ন্যাটো
কোন পথে হাঁটবে ন্যাটো - ছবি : সংগ্রহ
NATO বা North Atlantic Treaty Organization যার বাংলা অর্থ উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট। এটি একটি সামরিক সহযোগিতা জোট। এ জোটটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন এর সদস্য ছিল ১২টি দেশ। দেশগুলো হলো বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমে জোটটির সদর দফতর ছিল ফ্রান্সের প্যারিসে। পরবর্তীতে এটি বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে স্থানান্তরিত হয়। ন্যাটোর প্রতিষ্ঠাকালীন ১২ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ২টি যথা যুক্তরাজ্য ও কানাডা উত্তর আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত অপর দিকে অবশিষ্ট ১০টি দেশ পশ্চিম ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত।
প্রতিষ্ঠার প্রথম দুই বছর ন্যাটো একটি রাজনৈতিক সংগঠন ছিল কিন্তু কোরীয় যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন সর্বোচ্চ সামরিক কমান্ডারের অধীনে এর একটি সমন্বিত সামরিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়। ন্যাটোর প্রথম মহাসচিব ছিলেন লর্ড ইসমে। ন্যাটো প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য বিষয়ে তার কথিত উক্তির মধ্যেই এটি প্রতিষ্ঠার অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘ন্যাটো প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হলো রাশিয়ানদের দূরে রাখা, আমেরিকানদের কাছে আনা এবং জার্মানদের দাবিয়ে রাখা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মানি বিভক্ত হয়ে পশ্চিম ও পূর্ব জামানি নামে দুটি পৃথক দেশ হয়। এ দুটি দেশ প্রতিষ্ঠালগ্ন হতেই যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বলয়ভুক্ত হয়।
স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন ন্যাটো জোটের ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় কেন্দ্রীয় ও পূর্ব ইউরোপের আটটি সমাজতান্ত্রিক দেশ সমন্বয়ে ওয়ারশ জোট গঠিত হয়। ওয়ারশ চুক্তিটি বন্ধুত্ব সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সহায়তা চুক্তি। এ চুক্তিটি ১৯৫৫ সালের ১৪ মে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে স্বাক্ষরিত হওয়ায় এটি ওয়ারশ চুক্তি নামে অভিহিত। এই জোটের সামরিক প্রধান দফতর ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বর্তমান রাশিয়ার রাজধানী মস্কো। এ চুক্তির সদস্যভুক্ত দেশ হলো বুলগেরিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আলবেনিয়া। আলবেনিয়া ১৯৬৮ সালে ওয়ারশ চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়।
১৯২২ সালে চারটি প্রজাতন্ত্র সমন্বয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠিত হলেও পরবর্তীতে এর সংখ্যা ১৫টিতে উন্নীত হয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে এগুলো ১৫টি পৃথক প্রজাতন্ত্র বা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রজাতন্ত্র ও রাষ্ট্রগুলো হলো লিথুনিয়া, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, জর্জিয়া, ইউক্রেন, মলদোভা, বেলারুশ, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, কাজাখাস্তান, উজবেকিস্তান, তর্কমেনিস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও রাশিয়া।
ন্যাটোর প্রতিষ্ঠাকালীন ১২টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে তিনটি যথা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স আণবিক শক্তিধর। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৫ সালের মধ্যে আরো তিনটি রাষ্ট্র জার্মানি, গ্রিস ও তুরস্ক ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮২ সালে স্পেন ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত হয়। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর ১৯৯৯ থেকে ২০২০ সাল অবধি ১৪টি রাষ্ট্র ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত হয়ে এর সদস্য সংখ্যা ৩০টিতে উন্নীত হয়। এ ১৪টি রাষ্ট্র হলো আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, মন্টিনেগ্রো, নর্থ মেসিডোনিয়া, পোল্যান্ড, রুমানিয়া, শ্লোভাকিয়া ও শ্লোভেনিয়া। ন্যাটোর ৩০টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে একমাত্র তুরস্ক এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত।
১৯৯০ সালে জার্মানির একত্রীকরণ বিষয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্মতি আদায়ের লক্ষ্যে তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট জেমস বেকার সোভিয়েত নেতাদেরকে লৌহ কঠিন আশ্বস্ত করেছিলেন যে পুনঃএকত্রীকরণ বিষয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্মতি প্রদান করলে ন্যাটো পূর্বদিকে আর এক ইঞ্চিও অগ্রসর হবে না।
জার্মানির পুনঃএকত্রীকরণের পর যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোর অভ্যন্তরীণ, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জাতিগত বিভেদের সঙ্কটের সুযোগ গ্রহণ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের চেষ্টায় রত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশের ইন্ধনে ১৯৯১ সালের ৮ ডিসেম্বর রাশিয়া প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিন, ইউক্রেন প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট লিওনেদ ক্রাভচুক এবং বেলারুশ পার্লামেন্টের চেয়ারম্যান স্টেনিস্লাব সুসকেভিচ ঐতিহাসিক বেলোভেজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের বিলোপ ঘোষণা করে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর কমনওয়েলথ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। অতঃপর ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র অবলুপ্ত হয়ে ১৫টি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে যুক্তরাষ্ট্র তার দেয়া প্রতিশ্রুতি হতে সরে আসে এবং একে একে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত প্রজাতন্ত্র বা রাষ্ট্রকে ন্যাটোভুক্ত করে এর শক্তি বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করে যে ধারা এখনো চলমান।
ওয়ারশ জোটভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে একমাত্র রাশিয়া ছিল পারমাণবিক শক্তিধর। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেফু যাওয়ার পর স্নায়ুযুদ্ধ যুগের অবসান ঘটে এবং যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হিসেবে পৃথিবীব্যাপী তার কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়াকালীন জোটটির অর্থনীতি এতই দুর্বল ছিল যে, জোটভুক্ত প্রজাতন্ত্রসমূহের পারমাণবিক বোমা নিরস্ত্রীকরণে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পূর্বে ১৯৯০ সালে ইরাক, কুয়েত দখল করে নিলে তা প্রতিরোধে কোনো পরাশক্তি এগিয়ে আসেনি। এর পিছনের মূল কারণ ছিল পরাশক্তিধরদের পারস্পরিক দ্বন্ধে জড়িত হওয়া থেকে বিরত রাখা। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের নিকট মানব বিধ্বংসী রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র আছে যা তার মিত্র ন্যাটোভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলোর অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ এ মিথ্যা ও অলিক অভিযোগে ইরাক আক্রমণ করে তা দখল করে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিমত্তার কাছে ইরাককে অত্যন্ত অসহায় মনে হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র কর্তৃক ইরাক অভিযানকালে দেশটিতে কোনো মানব বিধ্বংসী রাসায়নিক ও জাবীণু অস্ত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
অভিযান পরবর্তী ইরাক দখল সম্পন্ন হলে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে তাদের তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করে এবং সাজানো বিচারে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ফাসি কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যু কার্যকর করে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অনুরূপভাবে লিবিয়া আক্রমণ করে দেশটির শাসক মোয়াম্মার গাদ্দাফিকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেশটির অর্থনীতির ভিত ভেঙে দেয়। আলকায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের আশ্রয়দাতা এমন অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো ভেঙে চুরমার করে দেয়। আলকায়দার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল এ সংগঠনটি ২০০১ সালে য্ক্তুরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার বিমান হামলা করে গুঁড়িয়ে দেয়ার মূল পরিকল্পনাকারী। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরাক, লিবিয়া ও আফগানিস্তানে অভিযানকালীন রাশিয়া স্নায়ুয্দ্ধু পরবর্তী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুল্য তার হারানো পরাশক্তির সমমর্যাদায় আসীন হতে না পারায় দেশটিকে অনেকটা নীরবে এ অভিযানগুলোর নির্মমতা মেনে নিতে হয়।
২০১১ সাল পরবর্তী রাশিয়া ধীরে ধীরে নিজের অর্থনীতি সুদৃঢ়সহ রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাববলয় বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করে। এ বছরই রাশিয়া সিরিয়া বিরোধে সরাসরি নিজেকে সম্পৃক্ত করে নিলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সেখানে আত্মরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণ করে। রাশিয়ার সাথে সাথে চীনও তার রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভের মাধমে এশিয়া ও আফ্রিকায় তার প্রভাব সুসংহত করে। বিগত এক দশক ধরে স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের একক পরাশক্তির তকমায় ছেদ পড়ায় বর্তমানে অপর দুটি পরাশক্তি যথা রাশিয়া ও চীনের প্রভাব পৃথিবীর সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিগত এক দশক ধরে ক্রমাগত চীনের যে অর্থনৈতিক উত্থান হচ্ছে তা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য ঈর্ষণীয় এবং অচিরেই যে চীন পৃথিবীর শীর্ষ অথনৈতিক শক্তিতে নিজের স্থান করে নেবে সে বিষয়ে দ্বিমত পোষণের অবকাশ আছে বলে প্রতীয়মান হয় না।
স্নায়ুযুদ্ধকালীন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের রাশিয়া প্রজাতন্ত্রের সন্নিকটে এবং ওয়ারশ জোটভুক্ত দেশের লাগোয়া সীমানা ইতালি ও তুরস্কে পারমাণবিক মারণাস্ত্র মোতায়েন করলে এর পাল্টা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূল হতে ৯০ মাইল দূরবর্তী কিউবায় পারমাণবিক মারণাস্ত্র মোতায়েন করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক য্ক্তুরাষ্ট্রের সমুদ্রসীমার ৯০ মাইল দূরে তার মিত্র দেশ কিউবায় পারমাণবিক মারণাস্ত্র মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের নিকট তার নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় য্ক্তুরাষ্ট্র নৌ অবরোধ দিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নকে সমঝোতায় উপনীত হতে বাধ্য করে। সমঝোতার ফলস্বরূপ উভয় পরাশক্তি নিজ নিজ মোতায়েনকৃত পারমাণবিক মারণাস্ত্রগুলো প্রত্যাহার করে নিলে পৃথিবী সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ থেকে রক্ষা পায়।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর তার ওয়ারশ জোটভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে জর্জিয়া, ইউক্রেন, মলদোভা, বেলারুশ ও আর্মেনিয়া ব্যতীত অপরাপর দেশ ন্যাটোর সদস্যভুক্ত হয়। ন্যাটোভুক্ত যেকোনো রাষ্ট্র অপর কোনো রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হলে ন্যাটো চুক্তির শর্তানুযায়ী জোটভুক্ত রাষ্ট্রগুলো সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহতের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। ইউক্রেন রাশিয়ার দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত। ইউক্রেন দীর্ঘ দিন যাবৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তির জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তির ঘোর বিরোধী। রাশিয়া মনে করে ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত হলে দেশটি তার সীমানায় অবস্থিত হওয়ার কারণে তার নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। রাশিয়ার দাবি ইউক্রেনের জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জাতি ও সংস্কৃতিগতভাবে রুশ বংশোদ্ভূত ও ভাষাভাষী হওয়ায় তারা ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের নিপীড়নের শিকার। এরা স্বাধীন সত্তা নিয়ে বাঁচতে চায় অথবা রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে চায়। ইউক্রেনের দক্ষিণে অবস্থিত ক্রাইমিয়ার জনগোষ্ঠীর ৮০ ভাগ রুশ বংশোদ্ভূত ও ভাষাভাষী। ক্রাইমিয়া ২০০ বছরের অধিককাল ধরে রাশিয়ার অংশ ছিল। সোভিয়েত শাসনামলে জোসেফ স্টালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের শীর্ষ পদে আসীন থাকাকালীন প্রশাসনিক সুবিধার্থে ১৯৫৪ সালে ক্রাইমিয়াকে ইউক্রেন প্রজাতন্ত্রের অধীন ন্যস্ত করেন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত গণভোটে ক্রাইমিয়ার জনগণ রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার স্বপক্ষে মতামত ব্যক্ত করে। এরপর থেকে ক্রাইমিয়া রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত একটি অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত হলেও পশ্চিমা দেশগুলো এ অন্তর্ভুক্তি মেনে নেয়নি।
স্নায়ুযুদ্ধকালীন ন্যাটোর পাল্টা জোট হিসেবে ওয়ারশ জোট আত্মপ্রকাশ করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ওয়ারশ জোট অবলুপ্ত হয়। ওয়ারশ জোট অবলুপ্ত হওয়ার পর বিশ্বের সচেতন ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল ওয়ারশ জোটের মতো ন্যাটো জোটও অবলুপ্ত হবে। বিশ্ববাসী এর উল্টোটি প্রত্যক্ষ করল। অবলুপ্ত না হয়ে ১২ সদস্যবিশিষ্ট ন্যাটো আজ ৩০ সদস্যবিশিষ্ট ন্যাটোতে সম্প্রসারিত হলো। এ সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ার অংশ থেকেই রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন আক্রমণের উদ্ভব। ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত হলে রাশিয়া যে দৃষ্টিকোণ থেকে তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সেটা মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের লাগোয়া সীমানা মেক্সিকোতে রাশিয়া পারমাণবিক মারণাস্ত্র মোতায়েন করলে যুক্তরাষ্ট্র কি তা মেনে নেবে! তা যদি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে মেনে নেয়া বাস্তবসম্মত না হয়, সে ক্ষেত্রে ন্যাটোর সম্প্র্রসারণ নয় ওয়ারশ’র মতো অবলুপ্তিই পক্ষপাতহীন দৃষ্টিকোণ হিসেবে প্রত্যাশিত।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail : iktederahmed@yahoo.com