পুতিন গুরুতর অসুস্থ?
ভ্লাদিমির পুতিন - ছবি : সংগ্রহ
জুডোয় পারদর্শী। আইস হকির উৎসাহী। ঘোড়ায় চড়া বা জিমে ব্যায়ামরত। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির ভ্লাদিমির পুতিনের কঠিন চেহারার পাশাপাশি এ রকম বহু ছবিও দেখেছে দুনিয়া। সেই রুশ ‘লৌহমানব’ কি গুরুতর অসুস্থ? পুতিনের সাম্প্রতিক ছবিতে দেখা গিয়েছে, তার মুখ ও ঘাড় বেশ ফোলা। চেহারা ফ্যাকাশে। তাতেই জল্পনার পালে হাওয়া লেগেছে। যদিও পুতিনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনো বিবৃতি জারি করেনি মস্কো।
৬৯ বছরের পুতিনের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য জল্পনা নতুন নয়। কয়েক বছর ধরেই পুতিনের সুস্থতা নিয়ে নানা মুনি নানা মন্তব্য করেছেন। তবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার পর তা আরো বেড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এ নিয়ে পাঁচটি কারণও দেখিয়েছেন তারা।
ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডের দাবি, গত কয়েক সপ্তাহে পুতিনের মুখ এবং ঘাড়ের অংশ বেশ ফোলা দেখাচ্ছে। যেন কোনো চিকিৎসার জন্য তিনি স্টেরয়েড নিচ্ছেন। তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জেরেই ফুলে গিয়েছে তার মুখ ও ঘাড়ের অংশ।
রাশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ তথা হোয়াইট হাউসের এক শীর্ষ পদাধিকারী ফিয়োনা হিল আমেরিকার এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘পুতিনের মুখ ফুলে গিয়েছে। তাকে তেমন একটা সুস্থ দেখাচ্ছে না। আমরা জানি যে তার পিঠে একটা সমস্যা রয়েছে। তবে তার থেকেও গুরুতর কিছু সমস্যা হয়েছি কি? তা হলে হয়তো তিনি বেশি মাত্রায় স্টেরয়েড নিচ্ছেন অথবা অন্য কিছুও হতে পারে।’
বেশি মাত্রায় স্টেরয়েড নেয়ার ফলে কোভিডের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে পুতিনের। এমন মন্তব্য করেছেন অনেকে। ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ওয়েনের মতে, ‘যারা বলছেন যে পুতিন প্লাস্টিক সার্জারি বা বোটক্স করিয়েছেন, তাদের কথা বিশ্বাস করি না। পুতিনের মুখটা দেখুন! কিভাবে তা বদলে গিয়েছে। এখন তার মুখ একেবারে গোলাকৃতি!’
পুতিন কি পার্কিনসন্স এবং ক্যানসারে আক্রান্ত? এ প্রশ্নও উঠছে। রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ তথা ইতিহাসবিদ ভ্যালেরি সলোভেইয়ের দাবি ছিল, পুতিনের শারীরিক উপসর্গে পার্কিনসন্স এবং ক্যানসারের লক্ষণ- দুই-ই রয়েছে। তার আরো দাবি, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জরুরি অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে পুতিনকে।
এক ধাপ এগিয়ে সলোভেইয়ের মন্তব্য, ‘পুতিনের দু’টি সমস্যা রয়েছে। একটি সাইকো-নিউরোলজিক্যাল এবং অন্যটি ক্যানসারের সমস্যা।’ সেই সঙ্গে তার সাবধানী উক্তি, ‘আমি চিকিৎসক নই। এবং এ সব সমস্যার কথা প্রকাশ্যে আনার নীতিগত অধিকারও নেই।’ তবে সলোভেইয়ের আরো দাবি, শারীরিক সমস্যার জেরেই ২০২১ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার কথাও চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন পুতিন।
রাষ্ট্রনেতা হোক বা নিজের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের সহযোগী- সাম্প্রতিক কালে সব পক্ষের সাথেই বৈঠকে পুতিনকে দেখা গিয়েছে অস্বাভাবিক লম্বা টেবলের অপর প্রান্তে বসে রয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে পুতিনের সাথে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বৈঠক হয়েছিল একটি ১৩ ফুট লম্বা টেবিলে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভকেও আর একটি অত্যধিক লম্বা টেবলের এক প্রান্তে বসতে হয়েছিল।
বৈঠকে কি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছেন পুতিন? সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে দাবি, পুতিনের সাথে সাক্ষাতের আগে বাধ্যতামূলকভাবে দু’সপ্তাহের নিভৃতবাসে থাকতে হচ্ছে তার কর্মী এবং রাজনীতিকদের। এমনকি, পুতিনের সাক্ষাৎপ্রার্থীদের সকলকেই নাকি জীবাণুনাশক টানেলের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। এর জেরে জল্পনা ছড়িয়েছে, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে সিঁটিয়ে পুতিন। কারণ তার নিশ্চয়ই সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে।
আমেরিকার সেনেটর মার্কো রুবিয়োর মন্তব্যেও পুতিনের স্বাস্থ্য নিয়ে ধোঁয়াশা বেড়েছে। পুতিন সম্পর্কিত তথ্য হাতে পেয়েছেন বলে দাবি সেনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটির সদস্য মার্কোর। তবে এ নিয়ে সবিস্তার কিছু জানাননি তিনি।
যদিও সংবাদমাধ্যমের কাছে মার্কোর মন্তব্য, ‘যদি আপনাদের সঙ্গে আরও কিছু তথ্য শেয়ার করতে পারতাম! তবে এখনকার মতো এটুকু বলতে পারি যে এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে যে পুতিনের অনেক কিছুই ঠিকঠাক নেই।’ পরে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে (পুতিনের) কিছু নিউরো-সাইকোলজিক্যাল শারীরিক সমস্যা রয়েছে।’
২০০৮ সালে জর্জিয়া এবং তার ছয় বছর পর ক্রিমিয়া আক্রমণ করেছিল পুতিনের সেনাবাহিনী। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ধীর লয়ে হলেও পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের হৃত গৌরবকেই ফিরিয়ে আনতে চাইছেন পুতিন। তবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পর জল্পনার মুখে তাঁর শারীরিক সুস্থতা।
আগামী ২০৩৬ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার ক্ষমতা তার হাতেই যাতে থাকে, তা নিয়ে গত বছরের গোড়ায় রাশিয়ার সাংবিধানিক আইন সংশোধন করেছেন পুতিন।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ‘ধীরে চলো’ নীতির বদলে তড়িঘড়ি তা ‘দখলে’র পন্থা দেখে অনেকের প্রশ্ন, দীর্ঘ দিন ধরে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতাসীন থাকলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এত তাড়া কিসের? তবে কি পুতিন শারীরিকভাবে সুস্থ নন? অথবা তার হাতে কি স্বল্প সময় রয়েছে?
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা