ইজ্জত রক্ষার সংগ্রামে বাইডেন-জেলেনস্কি!

গৌতম দাস | Mar 12, 2022 03:03 pm
বাইডেন ও জেলেনস্কি

বাইডেন ও জেলেনস্কি - ছবি : সংগ্রহ

 

কথাটা হলো, ইউক্রেনে রাশিয়ার কাছে নিশ্চিত পরাজয়ের প্রেক্ষাপটে দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির হাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভাগ্য আটকে গেছে- এটাই মূল কথা। কিভাবে?
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিন ইউক্রেন হামলা শুরু করে ইউক্রেনের সবাইকে পর্যুদস্ত করা শুরু করেছেন। আর জেলেনস্কি অবাক চোখে দেখেছিলেন তার পাশে কেউ নেই, কেউ আসেনি। না ন্যাটো, না ইইউ-এর কোন দেশ, না আমেরিকা। তিনি এই ক্ষোভ ও অপমান না লুকিয়ে পরের দিন সকাল থেকে অভিযোগ করতে থাকেন যে, ‘কেউ পাশে আসেনি, তারা একাই লড়ছেন’। আমেরিকার জন্য এই অভিযোগ মারাত্মক!

আর জেলেনস্কির এই অভিযোগই ছিল প্রথম সাক্ষ্য যে, বাইডেন হারতে যাচ্ছেন। আসছি সে কথায়। কিন্তু এতে বাইডেনের পক্ষে আর মূল সত্যটা লুকিয়ে রাখাই অসম্ভব হয়ে যায়। পরদিনই বাইডেনের মুখপাত্র জেন সাকিকে দিয়ে বাইডেন পরিষ্কার করে বলে দেয়া ছাড়া উপায় ছিল না যে, আমেরিকা ইউক্রেনের পক্ষে কোনো যুদ্ধেই যাবে না; যাবার ইচ্ছাও কখনোই ছিল না। সেটা রাশিয়ার সাথে সরাসরি কোনো যুদ্ধে তো নয়ই, এমনকি ইউক্রেনের মাটিতেও আমেরিকা কোনো যুদ্ধে যাবে না।’

কারণ, বাইডেনের পরিকল্পনা অনুসারে রাশিয়ার সাথে তিনি তো লড়বেন বিনা-অস্ত্রে ও বিনাযুদ্ধে এবং তা কেবল অবরোধ ও মানবাধিকার এ দুই হাতিয়ার দিয়ে। কিন্তু এসবের চেয়েও সবচেয়ে অনৈতিক কথাটা হলো, এই দিকটা জেলেনস্কিকে জানানো হয়নি। পশ্চিমের কেউ-ই জানাতেই চায়নি। শুধু তাই না, তাকে ন্যাটোর সদস্যপদের লোভ দেখিয়ে যুদ্ধে টেনে আনা হয়েছে। সরাসরি বললে, যেটা শ্রেফ একটা প্রতারণা। অর্থাৎ আগামীতে এ নিয়ে যদি জেলেনস্কি প্রতারণার অভিযোগ তোলেন তবে এটাই হবে বাইডেনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সাক্ষ্য যে, তিনি এই যুদ্ধে হেরে গিয়েছেন!

তাই বাইডেন এখনই জেলেনস্কির সাথে নিজের ভাগ্যকে বাঁধা-বাঁধি শুরু করেছেন। কারণ, জেলেনস্কিও তো তার ইউক্রেনীয় নাগরিকদের ভুল ও মিথ্যা বুঝিয়েছেন, যুদ্ধে টেনে নিয়ে গেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসাবেও এটা তার অযোগ্যতা যে, তিনি বুঝতেও পারেননি, পশ্চিমও যুদ্ধে তাদের পাশে আসবেই না; আসলে সবই ছিল মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। অর্থাৎ জনগণকে প্রতারণার মুখে ফেলে দেয়া এটাই জেলেনস্কির সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং অযোগ্যতাও যে তিনি বুঝতেই পারেননি, এরা প্রতারক!

কাজেই জেলেনস্কি আর বাইডেনের ইজ্জত বাঁচানো এখন এক সূত্রে গাঁথা হয়ে গেছে! দুজনকেই নিজ নিজ পাবলিকের হাত থেকে বাঁচতে হবে।

সম্ভবত এ কারণেই জেলেনস্কির এই সাক্ষাৎকারটা আমেরিকার অভ্যন্তরীণ শ্রোতা বিবেচনায় এবিসি নিউজে দেওয়া, প্রশ্নও ইংরাজিতে করা হবে কিন্তু জেলেনস্কি এর জবাব দেবেন তার স্থানীয় ভাষায়। যেটা আবার এবিসি অনুবাদ করে ইংরাজিতে প্রকাশ করবে। এই হলো অ্যারেঞ্জমেন্ট। অর্থাৎ জেলেনস্কির অনুমান যে, নিজ ভাষায় বললে ইয়ার জনগণ বুঝবে ভালো আর কি বলেছেন, কেন বলেছেন তা নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবাদ কম হবে। আমরা এখানে মনে রাখতে পারি যে, কোনো যুদ্ধে পরাজিত হওয়া বা পাবলিককে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে ফেলার দায়ে যুদ্ধ শেষে সব শাসককে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়। সবাইকে দায় নিয়ে ‘আইয়ুব খান’ হয়ে যেতে হয়। ফলে, এ যুদ্ধ শেষ হওয়ামাত্রই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবাদ, কার দোষে এই দুর্ভোগ, মিস-হ্যান্ডলিং- এই অভিযোগে ইউক্রেন শাসকের ক্ষমতাচ্যুত হবার সম্ভাবনা প্রবলই হবে। তাই এই সাক্ষাৎকারের যুদ্ধের জন্য স্ক্রিপ্টে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে বাইডেনকে দায়ী না করে জেলেনস্কির উপায় নেই। আবার এই দায়ে বাইডেনও হেরে গেছেন এই সাক্ষ্য দেয়া হয়ে যাচ্ছে এর প্রধান সাক্ষী হয়ে থাকছেন ওই জেলেনস্কিই।

তবু এই সাক্ষাৎকারে তিনি পশ্চিম বা বাইডেনকে অভিযুক্ত না করে পারেননি। ‘ন্যাটো সদস্য না করা’ আর ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর ওপর দিয়ে রাশিয়ার জন্য চলাচলে ‘নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা’ না দেয়ার জন্য অভিযুক্তই করেছেন। এই সাক্ষাৎকারেই তিনি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, ন্যাটোর এই প্রশ্নে আমি নিজেকে ঠাণ্ডা করে নিয়েছি বেশ আগেই; যখন আমি বুঝে গিয়েছি, ন্যাটো ইউক্রেনকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। এটাই আসলে পরিষ্কার করে বলা যে, মিথ্যা আশ্বাসে পশ্চিম (আমেরিকা ও ইইউ) ইউক্রেনের সাথে প্রতারণা করেছে। এ কারণে, নিজেই নিজের আকাক্সক্ষাকে দমন করতে হয়েছে, মেরে ফেলতে হয়েছে যদিও এখন এভাবে বলার কারণে ইউক্রেনবাসী কাকে মাফ করবেন, কাকে ছুড়ে ফেলবেন আমরা জানি না।

আর ন্যাটো নিয়ে তিনি পরোক্ষে বলে দিয়েছেন, ‘ন্যাটো জোট রাশিয়ার সাথে সংঘাতে যেতে বা বিতর্কে জড়াতে ভয় পায়, ভীত।’ তিনি আরো বলছেন, ‘আর আমিও অন্যের কাছ থেকে ভিক্ষা করে পায়ের নিচে গড়াগড়ি খাওয়ার বিনিময়ে কিছু আনব, এমন প্রেসিডেন্ট হতে চাই না।’

আর এটাই হলো, যতটা সম্ভব বাইডেনের ইজ্জতের দিকে খেয়াল করে জেলেনস্কির নিজ ইজ্জত বাঁচানোর চেষ্টা। সেটা বৃথা যাবে কারণ, তাহলে ইউক্রেনের জনগণকে ন্যাটোর কাছে নিয়ে গিয়েছিল কে? কিসের ভরসায়? কে দিয়েছিল সেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি- এসব প্রশ্নে জেলেনস্কি লা-জবাব থাকতে পারেন না।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us