ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে গেলেন বাইডেন?
জো বাইডেন - ছবি : সংগ্রহ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে গেলেন। কী ছিল এই যুদ্ধ, বাইডেনের কাছে? সেটাই আগে স্পষ্ট জেনে নেয়া যাক। সংক্ষেপে শিরোনামে বললে, ডেমোক্র্যাট নেতা বাইডেন বলতে চেয়েছিলেন, রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প মাথা মোটা। তুলনায় তার মাথা ঠাণ্ডা এবং সূক্ষ্ম ও কূটবুদ্ধি তার বেশি। তাই তিনি দেখতে পেয়েছেন, আমেরিকার নেতাগিরি ফুরিয়ে যায়নি। আমেরিকার গ্লোবাল নেতৃত্ব এখনো অটুট আছে ও থাকবে আর তা রাখা যাবে; যদি বাইডেনের মতো প্রেসিডেন্ট আমেরিকার সক্ষমতা হিসাবে যেসব টুলস বা হাতিয়ার এখনো অ-ব্যবহারে পড়ে আছে সেগুলো ব্যবহার করতে শুরু করেন। এমন দুটো আমেরিকান অস্ত্র হলো এক. অবরোধ আরোপ (মানে অপছন্দ বা শত্রু বিবেচিত দেশকে আমেরিকান ডলারে বৈদেশিক বাণিজ্য করতে না দেওয়া) আর দুই. মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা।
তাই এই দুই হাতিয়ার ব্যবহার করেই বিনা অস্ত্রে ও সামরিক তৎপরতা ছাড়াই তিনি চীন ও রাশিয়াকে পরাজিত ও পর্যুদস্ত করতে পারবেন আর এভাবে আমেরিকার নেতৃত্ব অটুট রাখতে পারেন।
বাইডেন এই উদ্দেশ্যেই ইইউকে পাশে নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে যুদ্ধে এনেছিলেন। এখন বাইডেন রাশিয়া-ইউক্রেন এই যুদ্ধেই হেরে গেলেন। তিনি এখন রাশিয়া-ইউক্রেনের আপস কিভাবে ঘটানো যায় তা নিয়ে ব্যস্ত!
মজার কথা হলো, এখন বোঝা যাচ্ছে, ক্ষমতার শপথ নেয়ার পরেই যখন তিনি এ দুই (অবরোধ ও মানবাধিকার) মহাঅস্ত্রের কথা ইইউ নেতাদের জানান, তারা এটাতে বিশ্বাস করেছিলেন। পেছনের গল্প-ভাবনাটা ছিল সম্ভবত এরকম যে, আমেরিকার হাবিলদার হয়ে যদি আরো কিছু দিন দুনিয়ায় ‘রুস্তমি’র ভাগ পাওয়া যায়, তাহলে আর চীনের পিছনে পেছনে লাইন ধরে ব্যবসা বদল করে বাঁচতে চাওয়ার দরকার কী!
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে বিনা যুদ্ধে ও বিনা অস্ত্র ব্যবহারে প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও রাশিয়ার উপরে অবরোধ আর মানবাধিকার এ দুই অস্ত্র ব্যবহার করে বিজয় লাভের ভাবনায় তারা (পশ্চিম মানে আমেরিকা ও ইউরোপ) এবার কাজে নেমে পড়েছিলেন।
আর এ কাজে বলির বখরা বানিয়েছিল পুরান সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিতরে ১৪ রাষ্ট্রের যারা এখনো ন্যাটোর সদস্য হয়নি, এদেরই এক রাষ্ট্র ইউক্রেনকে।
গত ২০১৪ সাল থেকে ইইউ, আমেরিকাসহ ন্যাটো ইউক্রেনকে প্রলুব্ধ করে তাকে ন্যাটোর সদস্য করে নেয়া হবে বলে- তাই ন্যাটোর সদস্যপদ ইউক্রেনের কাছে এক সোনার হরিণ করে গড়ে তোলা হয়েছিল। আবার এর উল্টা দিকও আছে।
বলা হয় ১৬৬৭ সাল থেকে ইউক্রেন রাশিয়ার জার সাম্রাজ্যের অধীনস্থ হয়ে যায়; অর্থাৎ ৪০০ বছরের বেশি হলো এই অধীনস্থতা যার শেষভাগটা মানে, ১৯১৭ সাল থেকে তা সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনস্থতায় কাটিয়েছিল। আর সেটাই এবার হাজির হয়েছিল বর্তমান রাশিয়ান আধিপত্য থেকে বাইরে থাকার খায়েশ হিসেবে। খায়েশ করা মোটেও খারাপ বা অন্যায় কিছু নয়। কিন্তু বাস্তবতা হারিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া যাবে না। তাই এখানে প্রধান সমস্যাটা হলো, এবারের চেষ্টাটা আসলেই ‘আগের সব অধীনতা থেকে বের হওয়া হবে না উল্টা ব্যবহৃত হয়ে যাওয়া হবে!’ এদিকটা বাস্তব সম্মতভাবে ভেবে দেখা হয়নি। কাজেই এখন অপমান ও বিড়ম্বনা দিয়ে যদি ব্যাপারটা শেষ হতো সেটাও ভালো। কিছু আরো খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে।
এটা বলার এখন সম্ভবত সময় হয়েছে যে, এই চলতি যুদ্ধ প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে এক কঠিন বাস্তবতার উপলব্ধিতে পৌঁছে দিয়েছে যে তিনি বোকা হয়ে গেছেন, প্রতারিত হয়েছেন- ন্যাটোর সদস্যপদ এক সোনার হরিণ ছিল- এই লোভ দেখিয়ে তাকে প্রতারণা করে বেপথে নেয়া হয়েছে।
কিন্তু আবারও সেই মূল কথা। বাইডেন এই যুদ্ধে হেরে গেছেন, যাচ্ছেন। তার যুদ্ধের শখ মিটে গেছে হয়তো! তবে তিনি হেরে গেছেন এ কথা আড়ালে ফেলে যুদ্ধের কী করে সমাপ্তি টানা যায় এটাই এখন তার প্রধান লক্ষ্য। তিনি এবিসি নিউজকেই বেছে নিয়েছেন কারণ তার যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরাজিত ও পালিয়ে যাওয়াটা কোনো এক ভিন্ন গল্পের আড়ালে ফেলার কাজে বাইডেনের কাছে এখন সবচেয়ে মুখ্য শ্রোতা হলো আমেরিকার সাধারণ মানুষ, ভোটার। যেন তিনি আমেরিকাকে ইউক্রেন যুদ্ধে হারাননি- অন্তত এটুকু প্রতিষ্ঠিত করাই তার এখন একমাত্র লক্ষ্য। আগামী নভেম্বর ২০২২ হবে বাইডেনের ‘বিচারের দিন’- সেটা আমেরিকার মিডটার্ম নির্বাচনের। যেখানে গত বছর থেকে মূলত মুদ্রাস্ফীতির কারণে আমেরিকার বিভিন্ন সার্ভে রিপোর্টে এটা প্রতিষ্ঠিত যে, বাইডেনের দল এখানে খারাপ ফল করবে। এর ওপর যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে গেছেন বাইডেন এই বয়ান স্থিতি পায় তবে বাইডেন সব কূল-ই হারাবেন। এজন্য সম্ভবত হেরে যাওয়ার বয়ানকে বিজয়ী ও থিতু হতে না দেয়া তার প্রধান লক্ষ্য। এতে তিনি কতটুকু সফল, আদৌ হতে পারেন কিনা তা দেখার বিষয়!