প্রতিপক্ষ ভারত, পাকিস্তানের হাতে এবার জে-১০সি যুদ্ধবিমান
প্রতিপক্ষ ভারত, পাকিস্তানের হাতে এবার জে-১০সি যুদ্ধবিমান - সংগ্রহ
ভারতের রাফালে যুদ্ধবিমানকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ল পাকিস্তান। ‘বন্ধু’ চীনের কাছ থেকে কেনা ২৫টি জে-১০সি যুদ্ধবিমান বিমানবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করল ইসলামাবাদ। শুক্রবার এমনটাই জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার বার্তা, 'পাকিস্তানের দিকে চোখ তুলে তাকানোর আগে শত্রুদের ভাবতে হবে।পাকিস্তানের বিমান বাহিনী এখন আগের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হলো।'
শুক্রবার পাকিস্তানের পাঞ্জাবের আটক জেলায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানেই এই যুদ্ধবিমানগুলোকে বিমানবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি করা হয়। উল্লেখ্য, গত বছর ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধবিমানগুলো কিনেছিল ইসলামাবাদ। সেখানে ইমরানের সদর্পে ঘোষণা, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে এশিয়ার এই অংশের ভারসাম্য নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। এবার সেই চেষ্টা প্রতিহত করতে আমাদের বিমানবাহিনীকে আরো শক্তিশালী করা হলো।' তার ভাষণে বারতের রাফালে যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়টিও উঠে আসে। উল্লেখ্য, ৪০ বছর আগে আমেরিকার থেকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কিনেছিল পাকিস্তান। এর পর চার দশক পেরিয়ে গেছে। এবার চীনের থেকে কেনা মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হলো।
পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর হাতে আমেরিকার তৈরি অত্যাধুনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান রয়েছে। রাফালের সাথে মোকাবিলা করতে সক্ষম সেগুলো। কিন্তু তারপরও মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান কিনে যুদ্ধক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে চাইছে পাকিস্তান। আর এমন সময়ে নয়াদিল্লিকে চাপে ফেলে ইসলামাবাদের জন্য অস্ত্রের পসরা সাজিয়ে দিয়েছে বেইজিং। জানা গেছে, ৪.৫ জেনারেশনের মাঝারি আকার এবং হালকা ওজনের জে-১০সি যুদ্ধবিমানগুলো সম্পূর্ণ অস্ত্রসজ্জিত। কমব্যাট ক্ষমতাসম্পন্ন। আগামী ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে ইসলামাবাদের আকাশে কারিকুরি দেখাবে এই যুদ্ধবিমানগুলো।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি রুপির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যেখানে ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান কেনার বিষয় ঠিক হয়। প্রায় দু’দশক পর নতুন কোনো অত্যাধুনিক বিদেশী যুদ্ধবিমান হাতে পেয়েছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। এবার ভারতকে টক্কর দিতে চীনা যুদ্ধবিমান ওড়াবে পাকিস্তান।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন
পাকিস্তানে ভয়াবহ ব্রহ্মসই নিক্ষেপ করেছিল ভারত!
ভারত জানিয়েছে, বুধবার দুর্ঘটনাবশত পাকিস্তানের দিকে একটি মিসাইল নিক্ষেপ করেছে তারা। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের সময় 'প্রযুক্তিগত ত্রুটি'র কারণে মিসাইল নিক্ষেপের এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ভারতের কর্তৃপক্ষ।
দিল্লি এই ঘটনায় 'গভীর অনুশোচনা' প্রকাশ করেছে এবং দুর্ঘটনায় কেউ নিহত না হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে পাকিস্তানের পূর্ববর্তী মিয়া চান্নু শহরে একটি 'উচ্চ গতিসম্পন্ন উড়ন্ত বস্তু' ধ্বংস হয়েছে এবং ওই উড়ন্ত বস্তুর গতিপথের নিকটবর্তী যাত্রীবাহী বিমানের চলাচল ব্যহত করেছে।
ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশই পারমাণবিক অস্ত্র সক্ষমতা সম্পন্ন।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে : ৯ মার্চ ২০২২ তারিখে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের সময় প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনাবশত একটি মিসাইল উৎক্ষেপণের ঘটনা ঘটে। ভারত সরকার এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখছে এবং এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের আদেশ দিয়েছে।
এই ধরণের 'অবহেলার অপ্রীতিকর পরিণতি'র বিষয়ে সতর্ক থাকা, এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে বিষয়ে দিল্লিকে সতর্ক করেছে ইসলামাবাদ। তারা বলছে, মিসাইলটি হরিয়ানা রাজ্যের সিরসা থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
পাকিস্তানের বিমানবাহিনী বলছে, মিসাইলটি পতনের আগে পাকিস্তানের আকাশসীমায় শব্দের গতির তিনগুণ গতিতে ১২ হাজার মিটার (৪০ হাজার ফিট) উচ্চতা দিয়ে ১২৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখার ডিরেক্টর জেনারেল মেজর বাবর ইফতেখার এই বিষয়ের বিস্তারিত গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরার সময় বলেন, '৯ মার্চ সন্ধ্যা ৬ টা ৪৩ মিনিটে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এয়ার ডিফেন্স অপারেশন সেন্টার ভারতীয় আকাশসীমার ভেতরে উচ্চ গতিসম্পন্ন একটি বস্তুর উড্ডয়ন পর্যবেক্ষণ করে।'
তিনি বলেন, 'প্রাথমিক উড্ডয়নের পর উড়ন্ত বস্তু হঠাৎ পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে এবং ৬টা ৫০ মিনিটে (পাকিস্তান সময়) মিয়া চান্নুর কাছে পতিত হয়।'
কোন ধরণের মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র তা নিশ্চিত করে না বললেও ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি সুপারসনিক মিসাইল বা শব্দের চাইতে দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র, যার নাম 'ব্রহ্মস।'
ব্রহ্মস মিসাইল কী?
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিবৃতিতে 'ব্রহ্মস' মিসাইলের উল্লেখ না করলেও ভারতের সেনাবাহিনীর তিনটি বিভাগই যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে এই ধরণের মিসাইল ব্যবহার করে থাকে।
ব্রহ্মস শব্দটি ব্রহ্মপুত্র ও মসকভ, দুটি শব্দ যোগ করে তৈরি।
ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ও রাশিয়ার মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনসোর্টিয়াম এনপিও'র যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া ব্রহ্মস এরোস্পেসের তৈরি মিসাইল ব্রহ্মস।
ব্রহ্মস মিসাইলের সর্বোচ্চ গতিবেগ ২.৮ 'ম্যাক' (ঘণ্টায় প্রায় ৩,৪৫০ কিলোমিটার বা ২,১৪৮ মাইল/ঘণ্টা)। অ্যান্টি মিসাইল সিস্টেম দিয়ে এটিকে থামানো কঠিন।
বিভিন্ন ধরণের রাডার ফাঁকি দিতেও সক্ষম এই মিসাইল।
ভূপৃষ্ঠের ১৫ কিলোমিটার ওপর দিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা আছে এ মিসাইলটির। এর ২০০ থেকে ৩০০ কেজি পরিমাণ বিস্ফোরক (পারমাণবিক নয়) বহন করার সক্ষমতা রয়েছে। এই মিসাইলটির সাথে একটি ইঞ্জিন রয়েছে, যেটি জ্বালানি বহন করতে পারে।
মিসাইল নিক্ষেপের প্রথম ধাপে এই ইঞ্জিন অতি উচ্চ গতিতে (শব্দের চেয়ে দ্রুত গতি) মিসাইলটি বহন করে নিয়ে যায় এবং ইঞ্জিন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এর 'র্যামজেট' প্রযুক্তি (বিমান উড্ডয়নের এক ধরণের পদ্ধতি) কার্যকর হয়। তারপর মিসাইলটির গতি বৃদ্ধি পায় এবং 'ম্যাক থ্রি' বা শব্দের তিনগুন গতিবেগ অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছায়।
এই ধরণের মিসাইলের গতিপথ শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা যায় না।
ভারতের ব্রহ্মস মিসাইল সম্পর্কে কী জানা যায়?
২০২০ সালের নভেম্বরে ভারত সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ব্রাহমোসের ধারাবাহিক কিছু পরীক্ষা চালায়।
এই ধরণের মিসাইল মাটি, সাগর ও বিমান থেকে নিক্ষেপ করা যায়।
ভারতের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ব্রহ্মস বিশ্বের একমাত্র মিসাইল যেটি শব্দের গতির তিনগুণ গতিতে ভ্রমণ করে। প্রাথমিকভাবে এটির রেঞ্জ ছিল ২৯০ কিলোমিটার, যেটিকে ৪০০ কিলোমিটারে উন্নীত করতে চায় ভারত।
২০১৯ সালে ভারত যখন ব্রহ্মসের পরীক্ষা শুরু করে, তখন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ চালানো হয়।
এই ধরনের সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল শব্দের গতির পাঁচগুণ গতিতে যেন ভ্রমণ করতে পারে, সে বিষয়ে গবেষণা চলছে।
ভারত কতগুলো ব্রহ্মস মিসাইল তৈরি করেছে, সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য সূত্রের কোনো তথ্য না থাকলেও চীনভিত্তিক একটি সংস্থার অনুমান ভারত ১৫ হাজারের বেশি ব্রহ্মস মিসাইল তৈরি করেছে, যার মধ্যে অন্তত ১৪ হাজার মিসাইল ভারতের সেনাবাহিনী ব্যবহার করে।
সূত্র : বিবিসি