প্রতিদিন ৫ অভ্যাসে সুস্থ থাকবে কিডনি
প্রতিদিন ৫ অভ্যাসে সুস্থ থাকবে কিডনি - ছবি : সংগ্রহ
কিডনি মানবদেহের অন্যতম প্রধান অঙ্গ। কিডনি এক দিকে দেহের বর্জ্য পদার্থ পরিশুদ্ধ করে, অন্য দিকে বিভিন্ন খনিজ লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সহায়তা করে। কাজেই সুস্থ দেহের জন্য সুস্থ কিডনি আবশ্যিক। রইল এমন পাঁচটি কৌশল যা কিডনি ভালো রাখতে সহায়তা করবে।
১। নিয়মিত শরীরচর্চা : নিয়মিত শরীরচর্চা যেকোনো রোগেরই ঝুঁকি কমায়, কিডনির অসুখও তার ব্যতিক্রম নয়। পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কিডনির সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। যারা শরীরচর্চা করার সুযোগ বা সময় পান না তাদের জন্য নিয়মিত হাঁটাহাটি, দৌড়-ঝাঁপ, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানোর মতো অভ্যাস অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
২। ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ : ডায়াবিটিস কিডনির সমস্যা ডেকে আনে। ডায়াবেটিসে যেহেতু রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, তাই রক্ত পরিশুদ্ধ করতে কিডনিকে বেশি কাজ করতে হয়। এই কারণেই বারংবার মূত্র ত্যাগের প্রবণতা দেখা যায়।
৩। ধূমপান কমানো : ধূমপান শুধু ফুসফুস নয়, কিডনিরও ক্ষতি করে। ধূমপানে রক্তনালীর ক্ষতি হয় ও দেহে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা তৈরি হয়। যা কিডনির ওপর মারাত্মক চাপ তৈরি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপান কিডনির ক্যানসারের আশঙ্কাও বৃদ্ধি করে।
৪। পর্যাপ্ত পানি পান : কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পানি খেতে হবে এ কথা সবাই জানেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে অনেকেই পরিমিত পরিমাণে পানি পান করেন না। দিনে অন্তত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করা আবশ্যিক। আবহাওয়া কিংবা জীবনচর্চার ওপর ভিত্তি করে এই পরিমাণ বদলে যেতে পারে।
৫। খেয়াল খুশি মতো ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা : পেট ব্যথা থেকে সর্দিকাশি, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেতে বাঙালি সিদ্ধহস্ত। কিন্তু অধিকাংশ প্রদাহনাশক ওষুধ, আইবুপ্রফেন কিংবা ন্যাপ্রক্সেন জাতীয় ওষুধ অনিয়ন্ত্রিত ভাবে প্রয়োগ করলে কিডনির উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা বা আর্থরাইটিসের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খেলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
ডায়াবেটিসের সাথে লড়তে অতিরিক্ত তেতো খাচ্ছেন?
তেঁতো খেলেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে এমন ধারণা তৈরি হয়ে অনেকের মধ্যেই। এবং অনেকেই তা মেনে চলতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করে ফেলেন।
করলা, নিমপাতা, উচ্ছের মতো নানা রকম তোঁতো খাবার রোজ খাওয়ার উপকারিতা অনেক। বিশেষ করে বসন্তকালে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে তেতো খাওয়ার চল রয়েছে বেশির ভাগ বাঙালি ঘরে। কোনো ওষুধ ছাড়াই যারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে চান, তারা অনেকেই তোতো খাবার খাওয়ার অভ্যাস করেন। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এমনিতেই এই খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। কিন্তু কোনো কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। বিশেষ করে বেশি তেতো খাবার খেলে কিডনি এবং লিভার- দুইয়েরই ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
সম্প্রতি খাদ্যাভ্যাস এবং পুষ্টিগুণ নিয়ে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘‘ইন্টারন্যাশন্যাল ক্লিনিকাল নিউট্রিশন আপডেট ২০২২’’-এ নেফ্রোলজি চিকিৎসক শৌভিক সুরল এই বিষয়ে এক অদ্ভুত ঘটনার উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, ‘আমার কাছে একজন রোগী এসেছিলেন যার কিডনি এবং লিভার দুই-ই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। অনেক রকম পরীক্ষা করেও বোঝা যাচ্ছিল না ঠিক কী কারণে এমনটা হতে পারে। অনেক কথা বলার পর জানা গেলে তাকে কেউ বলেছিল একটি উপায়ে ডায়াবেটিস হবে না। সেই কথা মেনে তিনি কাঁচা মাছের পিত্ত খেয়ে ফেলেছিলেন। সেই খেয়েই তার লিভার এবং কিডনি দুই-ই নষ্ট হয়ে গিয়েছে প্রায়।'
শৌভিক জানালেন, কাঁচা মাছের পিত্ত ভয়ঙ্কর তেতো খেতে। এবং পাশাপাশি তা শরীরের জন্য বিষাক্তও বটে। রান্না করার পর এই বিষটা নষ্ট হয়ে যায়। তবে কাঁচা খেলে তা শরীরের নানা অঙ্গ, বিশেষ করে কিডনি এবং লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করে দিতে পারে।
এই ধরনের আরো কিছু রোগী পেয়েছিলেন শৌভিক। যাদের কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল একই ভাবে। তাই কোনো ঘরোয়া টোটকা মানার আগে কার শরীরে কী রকম প্রভাব পড়তে পারে, তা চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে নেয়াই শ্রেয় বলে মনে করেন শৌভিক।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা