রাশিয়ার মিলিটারি ডকট্রিন
রাশিয়ার মিলিটারি ডকট্রিন - ছবি : সংগ্রহ
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং এর শহরতলীর বড় অংশই এখনো অক্ষত যদিও সাইরেন আর সতর্কবার্তা শোনা যায় নিয়মিতই।
সবাই জানে সেখানকার পরিস্থিতি দ্রুতই বদলে যেতে পারে। ইউক্রেনের দ্বিতীয় শহর খারকিভ এখন যেমন রাশিয়ার যুদ্ধকে টের পাচ্ছে। যেমনটি টের পেয়েছে পূবের মারিউপোলসহ কয়েকটি শহর।
সর্বত্রই রাশিয়া আরো বেশি অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছে। ঘরে ঘরে কিংবা কক্ষে কক্ষে সেনা না পাঠিয়ে তারা তাদের মিলিটারি ডকট্রিন হলো ভারী অস্ত্র ব্যবহার আর আকাশ থেকে শত্রুকে গুড়িয়ে দেয়া।
খারকিভ ও অন্য শহরগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং যতটুকু জানা যায়, অনেক বেসামরিক নাগরিক হতাহতের শিকার হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে খারকিভের স্থানীয় সরকার কার্যালয়ে।
এর মাধ্যমে ভ্লাদিমির পুতিন হয়তো কিয়েভকে বার্তা দিয়েছেন যে -এটা আপনার ক্ষেত্রেও হতে পারে।
সব মিলিয়ে রাশিয়ার পদক্ষেপ হতে পারে আরো ভয়াবহ।
সম্ভবত পুতিন ১৯৯০ এর দশকে চেচনিয়ার গ্রোজনিতে এবং ২০১৫ থেকে সিরিয়ায় রাশিয়ান বাহিনী যে ক্ষতির শিকার হয়েছে সে রকমটা আর চান না বলেই নির্দেশ দিয়েছেন।
১৯৯৪-৯৫ সালের শীতে শুরু হওয়া যুদ্ধ আমি কাভার করেছিলাম। ইউক্রেনের মতো রাশিয়ান আর্মি মারাত্মক ভুল করেছিলো সরু সড়কে অ্যামবুশ করে। অনেক সৈন্যই সেখানে আর লড়াই করে মরতে চায়নি।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের আগে সামরিক বিশ্লেষকরা রাশিয়ান বাহিনী এখন অনেক বেশি পেশাদার।
তবে রাশিয়ান আক্রমণে আবারো ধীরগতি দেখা দিয়েছে মূলত রসদ সরবরাহ, কৌশলগত ভুল এবং ভয়ার্ত তরুণদের কারণে যারা বুঝতে পারেনি যে তারা যুদ্ধে যাচ্ছে। এগুলোই চেচনিয়ায় ১৯৯৫ সালে তুমুল প্রতিরোধ গড়তে সহায়তা করেছিলো।
চেচনিয়ায়, রাশিয়ার জবাব ছিল সামরিক শক্তির ব্যবহার।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আর্টিলারি ও বিমান থেকে বোমা হামলা গ্রোজনিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল।
আমি ছিলাম মিনুৎকা স্কয়ারে যেটি ছিলো চেচেন প্রতিরোধের কেন্দ্র। একদিন সেখানেই দফায় দফায় বিমান হামলা হলো।
বেসামরিক নাগরিকরা বেজমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলো কিন্তু প্রতিবারই তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাবার ও পানির জন্য বের হতে হচ্ছিলো।
সেদিন মিনুৎকা স্কয়ারে চেচেন যোদ্ধারা নিহত হয়েছিলো ক্লাস্টার বোমায়। ভবনগুলোতে ধরে গিয়েছিল আগুন।
চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে শহরের প্রধান সড়কের সর্বত্র ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হলে ধোঁয়া আর আগুনে ভরে উঠেছিলো চারদিক।
সিরিয়ায় মিস্টার পুতিনের হস্তক্ষেপ বাশার আল আসাদের সরকারকে রক্ষা করেছিলো এবং রাশিয়াকে বিশ্বশক্তি হিসেবে পুনরায় দেখার যে লক্ষ্য তা অর্জনে এটি ছিল তার একটি বড় পদক্ষেপ।
রাশিয়ার সমরাস্ত্রের নিষ্ঠুর ব্যবহার সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পরপর দুটি জয় এনে দিয়েছিলো সরকারি বাহিনীকে।
একটি ছিল ২০১৬ সালের শেষে আলেপ্পোতে। শহর পূর্ব দিকে নিয়ন্ত্রণ ছিলো বিদ্রোহীদের। কিন্তু তার পতন ঘটে গোলা আর বিমান হামলায়।
ইরান ভিত্তিক বোমারুরা ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল।
সিরিয়ায় যে কৌশল ছিলো তাহলো বিদ্রোহী এলাকাগুলো ঘিরে ফেলা। এরপর সাঁড়াশি আক্রমণ। বহু মানুষ নিহত হয়েছিল।
আলেপ্পো পতনের কয়েক সপ্তাহ পর সেখানে গিয়ে দেখেছি মাইলের পর মাইলজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ। কোন একটি ভবনকে অক্ষত দেখিনি। পর্বত সমান ধ্বংসস্তূপে আটকে গিয়েছিলো সড়ক।
একই কৌশল দেখেছি পূর্ব গৌতায়। ২০১৮ সালে দামেস্কের লড়াই শেষ হয়। যেখানে প্রথমে মনে হচ্ছিলো বিদ্রোহীদের পক্ষে যেতে পারে। কিন্তু সব পাল্টে যায় যখন আর কোনো না হামলার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। দুমায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে আসাদ সরকার- এমন অভিযোগ ওঠার পর ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র।
অবশেষে সিরিয়ার দীর্ঘ যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সিরিয়া সরকারের পক্ষেই যায়।
ইস্টার্ন গৌতায় বিমান হামলা থেকে বাঁচতে আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল তৈরি করেছিলো প্রতিরোধ যোদ্ধারা। কিন্তু সমরাস্ত্রেরই জয় হয়েছিলো। কারণ বহু যোদ্ধা মারা যায় আর দুর্ভোগের শিকার হয় সাধারণ মানুষ।
কিয়েভে অনেকের মনেই এখন আর শুধু খারকিভ, মারিউপোল বা অন্য শহর নয় বরং আসছে চেচনিয়া ও সিরিয়াও।
পুতিন একসময় রাশিয়ার ইতিহাসে ইউক্রেনের গুরুত্বের কথা লিখেছিলেন। সেটি অর্জনে তিনি কি ইউক্রেনকে ধ্বংসের জন্য প্রস্তুত?
যদি নিষেধাজ্ঞা বা ইউক্রেনের প্রতিরোধে তার শাসনের অস্থিতিশীলতার কোন হুমকি তৈরি হয় তাহলে তিনি কী আরও কঠোর কোন পদক্ষেপ নিবেন?
রেকর্ড বলছে গ্রাউন্ডে রাশিয়ান বাহিনীর দুর্বলতা রাশিয়া পূরণ করে আরো বড় অস্ত্র দিয়ে।
ইউক্রেনের মানুষ প্রার্থনা করছে তেমনি যেন না হয়।
সূত্র : বিবিসি