রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব ভয়াবহ অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে

অন্য এক দিগন্ত | Mar 07, 2022 03:22 pm
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব ভয়াবহ অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যেসব ভয়াবহ অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে - ছবি : সংগ্রহ

 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাত। রাশিয়ান সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে এবং বড় ধরনের রকেট ও আর্টিলারি বোমা হামলা চালিয়েছে, যার ফলে বিপুল সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এখানে যুদ্ধে ব্যবহৃত কয়েকটি অস্ত্রের দিকে নজর দেয়া হলো। নিউক্লিয়ার উইপনের দিক থেকে কেন পিছিয়ে রয়েছে ইউক্রেন, বিশ্লেষণ করা হলো তাও!

যুদ্ধবিমান এবং মিসাইল : রাশিয়ান সামরিক বাহিনী যুদ্ধবিমান এবং কালিব্র ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানার জন্য। কালিব্র একটি নির্ভুল অস্ত্র, তাই ইউক্রেনীয় সামরিক স্থাপনা এবং সরকারি ভবনগুলি আবাসিক এলাকার কাছাকাছি অবস্থিত হওয়াতে অসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু হচ্ছে। একই কথা প্রযোজ্য রাশিয়ান যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রেও। মূল লক্ষ্যগুলিকে আঘাত করার জন্য রাশিয়ান সামরিক বাহিনী ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করেছে, যার রেঞ্জ ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং অনেক বেশি শক্তিশালী ওয়ারহেড বহন করতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। বড় ভবন এবং কিছু সুরক্ষিত স্থাপনা ধ্বংস করতে পারে এটি। কয়েকটি ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার মিত্র বেলারুশের অঞ্চল থেকে ছোড়া হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। ইউক্রেনে হামলা চালানোর জন্য বেলারুশের মাটি ব্যবহার করছে মস্কো।


রকেট এবং আর্টিলারি : ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা রাশিয়ান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আবাসিক ভবন, স্কুল এবং হাসপাতালে নির্বিচারে গোলাবর্ষণের জন্য অভিযোগ করেছেন। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের ছবিগুলি দেখলেই বোঝা যাবে যে রকেট হামলায় আবাসিক ভবনগুলি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও যার কারণে সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যু হয়েছে। বহু মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

সোভিয়েত জমানার গ্র্যাড (হাইল), স্মারচ (টর্নেডো) এবং উরাগান (হারিকেন) একাধিক রকেট লঞ্চারগুলি সেনাবাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করতে বা সামরিক সরঞ্জামের ধ্বংস করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। রকেট লঞ্চারগুলি দিয়ে জনবহুল এলাকা হামলা হলে বহু মানুষের হতাহতের আশঙ্কা থাকে। রাশিয়ান সামরিক বাহিনীতে শক্তিশালী আর্টিলারি ইউনিটের বিস্তৃত পরিসরও রয়েছে, যেগুলি ফুলের নামে অদ্ভুতভাবে নামকরণ করা হয়েছিল, যেমন স্ব-চালিত ২০৩-মিমি পিওনি এবং ১৫২-মিমি হাইসিন্থ এবং অ্যাকাসিয়া স্ব-চালিত হাউৎজার। মস্কো দাবি করেছে যে তারা শুধুমাত্র সামরিক ঘাঁটি এবং অবকাঠামোকে লক্ষ্য করছে। কিন্তু কিভ, খারকিভ এবং ইউক্রেনজুড়ে অসংখ্য অন্যান্য শহরে অসামরিক অবকাঠামো এবং আবাসিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষতির খবর পাওয়া গিয়েছে। রাশিয়ান কর্তারা অভিযোগ করেছেন যে ইউক্রেনীয় বাহিনী অসামরিক নাগরিকদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করার জন্য আবাসিক এলাকায় ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে। যদিও এই দাবির পক্ষে এখনও কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট বৃহস্পতিবার জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলে বলেছেন, "অধিকাংশ অসামরিক নাগরিকের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ভারী কামান, মাল্টি-লঞ্চ রকেট সিস্টেম এবং জনবহুল এলাকায় বিমান হামলার কারণে। অসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার করা হচ্ছে।" তবে, কোন পক্ষ সেগুলো ব্যবহার করেছে তা তিনি উল্লেখ করেননি।

ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র এবং থার্মোবারিক অস্ত্র : ইউক্রেনের কর্তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্লাস্টার অস্ত্র ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছেন, যদিও ক্রেমলিন সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এই ধরনের অস্ত্র একটি বিস্তৃত এলাকায় শত্রু সেনা এবং অস্ত্র সরঞ্জামকে লক্ষ্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। জনবহুল এলাকায় তাদের ব্যবহার অনিবার্যভাবে অসামরিক লোকজনের মৃত্যু হচ্ছে। ক্লাস্টার বোমা, রকেট এবং আর্টিলারি শেলগুলি আকাশে খুলে যায়, এরপর সাবমিনিশন বা বম্বলেট ছেড়ে দেয়, যা একটি বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে। এই ধরনের হামলা হলে বহু মানুষের মৃত্যু হতে পারে এবং বহু মানুষ পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। থার্মোবারিক অস্ত্রে একটি জ্বালানি ধারক এবং দুটি পৃথক বিস্ফোরক চার্জ থাকে, প্রথমটি জ্বালানি কণাগুলিকে ছড়িয়ে দিতে বিস্ফোরণ ঘটায় এবং দ্বিতীয়টি বাতাসে বিচ্ছুরিত জ্বালানি এবং অক্সিজেনকে প্রজ্বলিত করে, যা চরম চাপ এবং তাপের একটি বিস্ফোরণ তরঙ্গ তৈরি করে যা একটি আবদ্ধ স্থানে আংশিক ভ্যাকুয়াম তৈরি করে। আবদ্ধ স্থানের জন্য এই অস্ত্রটি তখন ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে।

পেন্টাগন বলেছে যে থার্মোবারিক অস্ত্রের জন্য রাশিয়ান মোবাইল লঞ্চারগুলি ইউক্রেনের অভ্যন্তরে দেখা গিয়েছে, তবে এই অস্ত্রের ব্যবহার আদৌ করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা যায়নি।

ইউক্রেনের অস্ত্র : ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী সোভিয়েত জমানায় নির্মিত একাধিক রকেট লঞ্চার এবং হাউইৎজারের উপর নির্ভর করেছে, এই সরঞ্জাম রাশিয়ান সামরিক বাহিনীতেও রয়েছে। রাশিয়ার ইস্কান্দার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং কালিব্র ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অত্যাধুনিক দূরপাল্লার নির্ভুল অস্ত্র ইউক্রেনের হাতে নেই। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীতে সোভিয়েত যুগের তোচকা-ইউ স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যার শক্তিশালী ওয়ারহেড আছে। কিন্তু রাশিয়ান অস্ত্রের তুলনায় তা দুর্বল। পুরনো সোভিয়েত-নির্মিত অস্ত্র ছাড়াও ইউক্রেন পশ্চিমা অস্ত্রের বড় চালান পেয়েছে, যেমন মার্কিন জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল এবং স্টিংগার অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট মিসাইল। ইউক্রেনের কর্তারা বলেছেন যে দেশটির সামরিক বাহিনী এগুলো ব্যবহার করে আক্রমণকারী রুশ বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। যুদ্ধের আগে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী তুরস্ক থেকে কেনা বায়রাক্টার ড্রোনও ব্যবহার করেছে। কিয়েভ একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যাতে রাশিয়ান সামরিক কনভয়ের বিরুদ্ধে বায়রাক্টারের আক্রমণ দেখা যাচ্ছে।

সূত্র : নিউজ ১৮


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us