আপসে রাজি হবেন জেলেনস্কি?
আপসে রাজি হবেন জেলেনস্কি? - ছবি : সংগ্রহ
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ দশম দিনে গড়িয়েছে এবং দু পক্ষের দ্বিতীয় দফা আলোচনাতেও কোনো সমঝোতা হয়নি। আবার বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বন্ধের দাবি জোরালো হলেও তার দিকে নজর নেই কোনো পক্ষেরই।
বরং একদিকে কিয়েভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে রুশ বাহিনী আবার অন্যদিকে নেটো ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের ব্যাপক সহায়তায় তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে ইউক্রেনীয়রা।
কুয়ালালামপুর মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে আপোষ বা সমঝোতার চিন্তা কোন পক্ষ এখনি করছে বলে কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এ যুদ্ধের সূচনা করেছিলো রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদান থেকে বিরত রাখা ও দেশটিকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করাই তার লক্ষ্য।
যদিও ইউক্রেনে হামলার পর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বলছে পুতিন সোভিয়েত সাম্রাজ্য ফিরত পেতে চান।
চলমান যুদ্ধে রাশিয়াকে ঠেকাতে ইউক্রেনকে ব্যাপক সামরিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের মিত্ররা।
যুদ্ধ কিভাবে থামতে পারে?
সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, যুদ্ধ শুরুর পর যুদ্ধরত পক্ষগুলোর চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনায় অনেক সময় পরিবর্তন হয়।
তার মতে প্রথমে যে লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ শুরু করা হয় যুদ্ধ শুরুর পর হয়তো সেক্ষেত্রে ভিন্ন চিন্তা আসে। আবার কোনো পক্ষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে পারে।
তিনি বলেন, তবে এখন রাশিয়া ও ইউক্রেনের সামরিক নেতাদের হিসেবে কোন পরিবর্তন এসেছে কি না তা বাইরে থেকে বোঝা কঠিন। কোন পক্ষ লোকসান বেশি দেখলে যুদ্ধ বন্ধ করতে আগ্রহী হতে পারে। কিন্তু এখানে তেমন কোন কিছু এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এখানে বলে রাখা ভালো যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে তিনি সরাসরি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা করতে চান।
যদিও রাশিয়ানদের তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। মিস্টার পুতিন শুধু বলেছেন ইউক্রেনে সাফল্য অর্জনই তার লক্ষ্য।
কোন পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে?
সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন ইউক্রেন পক্ষ হয়তো আপসের কথা ভাবতে পারে।
এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ না দিয়ে কিভাবে প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে সেটা নিয়ে কেউ কেউ কথা বলছেন।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে নেটোতে যোগ না দিয়েও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেটোর সব ধরণের সমরাস্ত্র ও গোয়েন্দা সহযোগিতা পাচ্ছে ইউক্রেন।
আলী বলছেন, এ কারণেই যুদ্ধ থামানো বা আপোষের কোন প্রয়োজন হয়তো ইউক্রেন এখনো অনুভব করছে না।
তিনি বলেন, যদিও রাশিয়ার সাথে তার শক্তির পার্থক্য অনেক বেশি। কিন্তু ইউক্রেন তো একা যুদ্ধ করছে না। তারা নেটো জোট ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা নিয়ে যুদ্ধ করছে। পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে রাশিয়া ও ইউক্রেন এর সাথে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তির হিসেব কেমন দাঁড়ায় তার ওপর।
ভূখণ্ডের দখল হারিয়ে কেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইবে ইউক্রেন
আলী বলছেন, ইউক্রেনের নেতারা জানেন যে যুদ্ধ চালিয়ে গেলে তাদের লোকসানের আশঙ্কা বেশি। কিন্তু তারা যদি রাশিয়ার ক্ষতি বাড়াতে পারেন সেটিও তাদের লক্ষ্য হতে পারে।
তিনি বলেন, এক দেশ থেকেই দুশো ক্ষেপণাস্ত্র পেয়েছে ইউক্রেন। এসব রসদ যদি পেতে থাকে ও তারা যদি রাশিয়ার ক্ষতি বাড়াতে পারে তখন হয়তো ভাবতে পারে যে রাশিয়া আপসের কথা ভাবতে পারে।
যুদ্ধ ইউরোপে ছড়িয়ে পড়তে পারে?
ইউরোপীয়দের সামরিক জোট ন্যাটো সনদ অনুযায়ী জোটের কোনো একটি দেশে সামরিক হুমকি এলে সবাই সহযোগিতা করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
সে কারণে ন্যাটোভুক্ত কোন দেশে রাশিয়া হামলা করলে তারা সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।
আবার বাল্টিক রাষ্ট্র লিথুনিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিলো। এছাড়া রোমানিয়া ও পোল্যান্ডও রাশিয়ার শত্রু হিসেবে চিহ্নিত।
সে কারণে অনেকেই মনে করেন যে যদি যুদ্ধ সম্প্রসারিত হয় তাহলে এ তিন রাষ্ট্রেই বেশি, বলছিলেন আলী।
তিনি বলেন, কিন্তু ন্যাটোর সদস্য আক্রমণের শিকার হলে ৩০টি দেশ একযোগে যুদ্ধে নামবে। এটা রাশিয়ানরাও বোঝে।
মধ্যস্থতা ছাড়া বোঝাপড়া সম্ভব হবে?
আলী বলছেন, রাশিয়া যদি মনে করে তারা বেশিদূর অগ্রসর হতে পারবে না তাহলে যুদ্ধ ছড়াতে পারে।
তিনি বলেন, রাশিয়ানরা বলছে যে যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে। আবার ইউক্রেন শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। কিয়েভের পথে আটকে আছে রাশিয়ানরা। এখন উভয় পক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন যে কত দিন তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে?'
তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করে যুদ্ধ করলে আর লাভ হবে না তখন সে মধ্যস্থতা চায়। কিন্তু রাশিয়া যদি যুদ্ধ বন্ধ করে তাহলে মনে হবে যে চাপের মুখে তারা যুদ্ধ বন্ধ করেছে।
তিনি এ কারণেই তাদের মুখ রক্ষার জন্য হলেও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। আর ইউক্রেন যে ধরণের সাহায্য ও সমর্থন পাচ্ছে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু দেশ থেকে তাতে তারা ভাবতে পারে বিশ্ব তাদের সাথে আছে তাই যুদ্ধ থামার দরকার নেই। যুদ্ধ না থামিয়ে চালিয়ে গিয়ে রাশিয়ার ক্ষতি করার পর আপোষের চিন্তা করাই ভালো হবে।
তবে দু পক্ষের কারা কী ভাবছে সেটা এখনি বোঝা কঠিন বলে মনে করছেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
সূত্র : বিবিসি