এবার ওডেসা দখলে এগিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া

এবার ওডেসা দখলে এগিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া - ছবি : সংগ্রহ
দুটি শহরে সাময়িক যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ার বিমান এবং গোলাবর্ষণ কমেছে।
মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী মাইকোলায়িভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ার বাহিনী।
তবে সেখানে বলা হয়েছে, 'হয়তো এই বাহিনীর কিছু অংশ মাইকোলায়িভ পাশ কাটিয়ে ওডেসার দিকে চলে যেতে পারে।'
খারকিভ, চেরনিহিভ এবং মারিওপোলে এখনো অবস্থান ধরে রেখেছে ইউক্রেনের বাহিনী। অন্যদিকে সুমি শহরের রাস্তায় রাস্তায় লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
'শহর ছেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই'
বেসামরিক বাসিন্দাদের শহর ছাড়ার জন্য যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর আবেগপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন মারিওপোলের মেয়র ভাদিম বোইচেঙ্কো।
তিনি বলেছেন, 'মারিওপোল মানে এর সড়ক আর বাড়িঘর নয়, এটি হলো এর বাসিন্দারা।'
তিনি বলেন, 'এখন যে অবস্থা চলছে, দখলকারীরা যেভাবে নিষ্ঠুর গোলাবর্ষণ করছে, তাতে শহরবাসীদের নিরাপদে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।'
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর ১০দিন পর এই প্রথম সাময়িক হলেও কোনো শহরে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে।
পুরো ইউক্রেনের মধ্যে শুধু এই দুইটি শহরের বাসিন্দারাই এই যুদ্ধবিরতির সুবিধা পাচ্ছেন। দেশটির অন্যান্য স্থানে লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
মারিওপোল এবং ভলোনোভাখা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মারিওপোল এবং ভলোনোভাখা- এই দুটি শহরে কিছুক্ষণ আগেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে মারিওপোল শহর অবরুদ্ধ করে রেখেছে রাশিয়া। সাড়ে চার লাখ মানুষের এই শহরটির ওপর রাশিয়া ব্যাপক গোলাবর্ষণ করছে।
মারিয়াপোলের নিয়ন্ত্রণ পেলে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় বন্দর নগরী রাশিয়ার হাতে চলে যাবে। এর মাধ্যমে রাশিয়া সমর্থিত বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলের সঙ্গে ক্রাইমিয়ার করিডোর তৈরি হবে। ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া সংযুক্ত করে নিয়েছিল রাশিয়া।
ভলোনোভাখা শহরটির হয়তো পরিচিতি তেমন নেই। কিন্তু রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর এই শহরে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।
এটি দোনেৎস্ক ও মারিয়াপোল শহরের সড়কের মাঝে অবস্থিত হওয়ায় কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দশ দিন ধরে চলা যুদ্ধ : এখন পর্যন্ত যা ঘটেছে
যুদ্ধে কতজন বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়, কিন্তু জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, ২৪শে ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর প্রায় ১২ লাখ মানুষ ইউক্রেন ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আরও কয়েক লাখ মানুষ এখন আশ্রয়ের সন্ধান করছেন।
রাশিয়ার দখলে যাওয়া প্রথম ইউক্রেনের শহর হচ্ছে খারসেন।
কিয়েভ, খারকিভ লক্ষ্য করে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে। কিয়েভের দিকে এগিয়ে আসা বিশাল একটি রাশিয়ান সেনা বহর পথে থেমে রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী মারিওপোলে অবরুদ্ধ করে রেখেছে রাশিয়ার সৈন্যরা এবং আরেকটি বন্দর নগরী ওডেসার দিকে এগোচ্ছে। রাশিয়া এই দুইটি শহর দখল করতে পারলে ইউক্রেন সমুদ্র যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
শুক্রবার কয়েকঘণ্টা ধরে গোলাবর্ষণের পর জেপোরেঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিশ্ব নেতারা বলছেন, এই হামলা বিশ্বে একটি বড় বিপর্যয় তৈরি করতে পারে।
বর্তমানে অকার্যকর চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্র এর আগে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাশিয়া। এখানেই ১৯৮৬ সালে পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
ইউক্রেনের আকাশে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করতে নেটো রাজি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জলোনস্কি বলেছেন, ''এখানে যত মানুষ মারা যাবে, তাদের জন্য আপনারাই দায়ী হবেন''।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক লক্ষ্য করে সম্পদ জব্দের একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর ফলে দেশটির বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ভ্রমণ বাধার মুখে পড়েছে।
রাশিয়ায় যুদ্ধ সংবাদ প্রকাশে সেন্সরশীপ আরোপ করে একটি নতুন আইন জারি করায় বিবিসি-সহ একাধিক গণমাধ্যম সেদেশে কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
অ্যাপল, স্যামসাং, এয়ারবিএনবিসহ একাধিক কোম্পানি রাশিয়ায় ব্যবসা স্থগিত করেছে। সেই সঙ্গে রাশিয়ার বিমান চলাচল স্থগিত করেছে একাধিক দেশ।
সূত্র : বিবিসি