সবাই আমাকে আউট করতে চায় : মার্নাস লাবুশানে
মার্নাস লাবুশানে - ছবি : সংগৃহীত
ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। ক্রিকেটে যারা রথী মহারথী তারা নানা কারণে ক্রিকেটের জগতে সব সময়ই প্রাসাঙ্গিক আলোচনায় থাকেন বল পড়া আর ব্যাটনড়া কাব্যের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
একইসাথে ক্রিকেট সব সময় একজন খেলোয়াড়কে দাঁড় করিয়ে দেয় প্রতিকূলতা, চ্যালেঞ্জ আর নিজের সাথে নিজের স্নায়ুযুদ্ধের মাঝে। ক্রিকেট মাঠে নিজেকে অবিরত প্রমাণ করার মহাযুদ্ধ চলতেই থাকে। নিজের বেড়ে উঠা সহজাত পরিবেশ থেকে নিজের অচেনা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিজেদের প্রমাণ করার প্রবল চেষ্টা থাকে জাত খেলোয়াড়দের।
পরিবর্তিত পরিবেশ কিংবা নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার অসাধারণ ক্ষমতা একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়, অন্যদের সাথে গড়ে দেয় ব্যাপক ব্যাবধান।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় ফুটবলকে পিছনে ফেলে উঠে গেছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সময়ের ব্যাবধানে এ দেশের ক্রিকেটে জন্ম নিয়েছে আকরাম খান,খালেদ মাহমুদ সুজন, আশরাফুল, আফতাব থেকে হালের তামিম, সাকিব মুশফিকরা।
সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে তামিম, সাকিবরা হয়ে উঠেছেন দেশের ক্রিকেটের মধ্যমণি। এক দল প্রতিভাবান আর পরিশ্রমী ক্রিকেটারদের কল্যাণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ এখন ক্রিকেটে পরিচিত ও মধ্যম শক্তির দল হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে একদিনের ক্রিকেট ম্যাচে। তবে প্রায় দুই যুগ টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখলেও ক্রিকেটের এই বুনিয়াদী সংস্করণে এখনও শিশুই রয়ে গেছে বাংলাদেশ।
কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে ক্রিকেটারদের ক্রিকেটীয় অদক্ষতা, অপরাগতা তো অবশ্যই তবে এর সাথে যুক্ত হয়েছে দেশীয় ক্রিকেটের তারকা ক্রিকেটারদের টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি অনীহা, নানা অজুহাতে দেখানো আর দেশের ক্রিকেটে নানা ঘটন অঘটন তো আছেই।
বাংলাদেশ ক্রিকেট টেস্টে কেন এতো পিছিয়ে তার বিরাট একটা বড় কারণ হলো এদেশের ক্রিকেটারদের মনোভাব। দেশের ক্রিকেটে সব থেকে বড় তারকা সাকিব আল হাসানকে দিয়ে শুরু করলে বলা যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই পোষ্টার বয় সারা বছর বিভিন্ন টি-২০ লিগ খেলা চালিয়ে গেলেও নানা অজুহাতে ২০১৭ সালের পর খেলেননি দেশের বাইরে দেশের হয়ে বড় কোনো ক্রিকেট সিরিজ, যেন নিজেকে প্রমাণ করার ক্ষুধা জেদ সব মরে গেছে। নেই নিজেকে নতুন করে চেনানোর কোন ইচ্ছা।
ঠিক এখানেই ক্রিকেটের বড় দল আর ছোট দলের মধ্যে পার্থক্য। আমরা যখন নানা অজুহাতে, কারণে অকারণে দেশের বাইরে ক্রিকেট খেলতে অনীহা প্রকাশ করি, তখনই ক্রিকেট বিশ্বে বড় দলগুলোর তারকারা নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ খুজতে নিজেদেরকে তুলে দেন নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে, ঝালিয়ে নিতে চান নিজেদের সবটুকু সামর্থ্যকে।
ক্রিকেট ইতিহাসে এ পর্যন্ত সব থেকে সফল ও নন্দিত দলের নাম অষ্ট্রেলিয়া। ক্রিকেটের এই সর্বজয়ী দল ১৯৯৮ সালের পরে এই প্রথম প্রায় ২৪ বছর পর সফর করছে এশিয়ার দেশ পাকিস্তান।
পাকিস্তানে টেস্ট খেলা আর নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের নানা বিষয় নিয়ে আলাপ করেছেন টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ও অজি দলের নাম্বার থ্রি মার্নাস লাবুশানে। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজে দেয়া তার এই সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য অনুবাদ করা হলো।
এক্সপার্ট : আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে মার্নাস ম্যাটের সাথে আপনার প্রস্তুতির ভিডিওগুলো ভাসছে। আপনার মতো এমন একজনের জন্য যিনি প্রস্তুতির জন্য মনোনিবেশ করেন এবং সর্বদা প্রস্তুত থাকেন, এই অনন্য এবং অভূতপূর্ব দৃশ্যটি কি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে আপনি সত্যিই নিশ্চিত নন যে আপনি কী প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
মার্নাস : হ্যাঁ এবং না। আমি মনে করি ইতিহাস আমাদের অনেক কিছু বলেছে। আমি পিএসএল বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখেছি এবং আমি সম্প্রতি ইউটিউবে কিছু পুরানো খেলা দেখেছি, যেমন ২০০৪ এবং ২০০৬ সালে পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তান বনাম ভারত সিরিজ। শুধু উইকেট কেমন তার একটা ধারণা পাওয়ার জন্য। এখন, স্পষ্টতই এটি ২০ বছরের এর বেশি হয়ে গেছে এবং আমি অবশ্যই বলছি না যে উইকেট একই রকম হতে চলেছে। তবে সেই সব উইকেট দেখতে বেশ ভালো ক্রিকেট উইকেটের মতো। এখানে বল দেরিতে ঘোরে এবং সেটা ব্যাটিংয়ের জন্য ভাল ছিল। যেমন আমি সবসময় বলি, আপনি সবচেয়ে খারাপের জন্য প্রস্তুত থাকবেন। আপনি কঠোর চেষ্টা করলেই সহজে খেলতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে আমাদের কাছে সব থেকে অপরিচিত হলো স্পিন। সুতরাং, আপনাকে স্পষ্টতই স্পিন, রিভার্স সুইং এবং এই সকল জিনিসে বেশি কর নজর দিতে হবে। এবং যদি এটি সাধারণভাবে সুইং করে এবং উইকেট সুন্দর এবং বাউন্সি হয়, তাহলে আপনি সেই অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন। এবং স্পষ্টতই আমরা এখানে এই ধরণের উইকেটে প্রচুর অনুশীলন করেছি।
এক্সপার্ট : ব্যাটার হিসেবে আপনি সাধারণত এমন একজন যিনি অন্য ব্যাটারদের কাছ থেকে ক্লু নিতে আপত্তি করেন না। যারা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভালো করেছে তাদেরকে অনুসরণ করেন। এই ক্লিপগুলো থেকে কিছু কি আপনার নজরে পড়েছে?
মার্নাস : এই ক্লিপগুলোর বেশিরভাগই, মোহাম্মদ ইউসুফ ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। (হাসি)।
সে একজন দারুণ ব্যাটার ছিলেন। হ্যাঁ আমি তাকে মাঝে বেশ কিছুদিন দেখিনি। বলা যায়, আমি তাকে দেখেছি কিন্তু খুব বেশি না। তবে ইউনিস খান একজন ব্যাটার যাকে আমি এখন অনেক দেখেছি। ইউনিস খান এমন একজন ব্যাটার যে বিভিন্ন কন্ডিশনে খেলার সময় তার স্কিল ও কৌশলে অনেক পরিবর্তন এনেছেন। ক্রিজে অনোক সময় সে অনেক স্লো খেলেছেন এবং ক্রিজে টিকে থাকার জন্য নিজেকে খোলসেও রাখতেন। এমনটা আমি জো রুটকে অনেক দেখেছি এবং শ্রীলঙ্কা ও ভারতে যেভাবে খেলেছে সেখান থেকেও বেশ ধারণা পেয়েছি। যেভাবে সে মারাত্মক স্পিনিং কন্ডিশনে খেলেছে তা দেখতে খুবই সুন্দর ছিল, ইম্প্রেসিভ।
এই ধরনের কন্ডিশনে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ আসে যখন বল খুব বড় টার্ন করে আবার স্লাইড করে ভিতরে ঢুকে। এই ধরনের বলের জন্য আপনাকে সব সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড় যদি প্রতিটা বল একই রকম হয় সাথে বড় টার্ন করতে থাকে তবে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। হ্যাঁ কিছু বিষয় আমি বুঝেছি। এ্যাশেজের পর আমার রুটের সাথেও এই ধরনের কন্ডিশনে খেলা নিয়ে আলাপ হয়েছিল।
এক্সপার্ট : সেই সিরিজে জো রুটের একটি শক্তির জায়গা যা আমরা দেখেছি তা হলো পিচ, লাইন এবং লেন্থের বেশিরভাগ অংশ থেকে সুইপ করার দক্ষতা। এবং এটিও যে সে সর্বদা রান করার চেষ্টা করেছেন এমনকি যখন তিনি রক্ষণের চেষ্টা করছেন তখনও। এই বিষয় কে কিভাবে দেখছেন, এই রকম কিছু কি আপনার মনেও রয়ে গেছে?
মার্নাস : আমার মনে হয় বিষয়গুলো সম্ভবত খুব কাছাকাছি। রুট আর আমার স্পিন খেলার ধরণ প্রায় এক । উইকেটে চারপাশে বল রাখা, সুইপ করা, পায়ের কাজ প্রায় এক। এবং আমি মনে করি সে কারণেই ও (রুট) যা করে তা আমার সবসময় দেখতে ভালো লাগে। হ্যাঁ আপনার নিজের কিছু বিষয় তো থাকেই। আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি এবং চেষ্টা করতে পারি এবং অনেক কিছু করতে পারেন, তবে আপনি যখন ক্রিজে থাকবেন তখন আপনি নিজে কি করবেন তা বুঝতে হবে।
এক্সপার্ট : উপমহাদেশের বাইরের কোনো দল যখন উপমহাদেশে খেলতে আসে তখন একটা প্রশ্ন বার বার আসে তা হলো, সুইপ খেলবেন কি না, আর খেললেও কোন ধরনের সুইপ। প্রেকটিসের সময় বিভিন্ন ধরনের সুইপ খেলা নিয়ে নিশ্চয় পরিকল্পনা থাকে?
মার্নাস : আমার মনে হয় মানে বিশ্বাস করি যে সুইপ শট প্রাথমিকভাবে একটি পূর্বপরিকল্পিত শট। সুতরাং, আপনাকে কেবল এমন একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে যার সাহায্যে আপনি কি ধরনের সুইপ শট খেলবেন। স্কোয়ার করতে পারেন বা রিভার্স, আবার স্ট্রেইট খেলার চেষ্টাও করতে পারেন। এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনি যা করতে দক্ষ তাই করবেন যাতে বল ব্যাটের নিচে না যায়। ঠিক এভাবেই আমি সুইপ শট খেলার চেষ্টা করি। আমি এক্সিকউশনে বিশ্বাস করি। আপনি যখন সুইপ খেলার সিদ্ধান্ত নেন, যেমন আমি বলেছিলাম এটি সাধারণত পূর্বপরিকল্পিত, স্পষ্টতই যখন এটি পায়ের বাইরে থাকে এবং আপনি কেবল কোনাকুনিই খেলবেন।
বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ক্রিকেটার এই সুইপ বিভিন্ন পদ্ধতিতে করেছেন। মাইকেল ক্লার্ক ২০০৪ সালে তার পা সত্যিই ভালো ব্যবহার করেছিলেন এবং তিনি সেই পরিস্থিতিতে সত্যিই দারুণ খেলে ছিলেন। স্পষ্টতই, পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ ভারতের উইকেট অবশ্যই খেলার শুরুতে এখন অনেক বেশি টার্ন করে। এখানে আপনাকে কেবল নিজের দক্ষতা উপায় দেখাতে হবে এবং আপনার স্কিলের পুরোটা দিয়ে ক্রিজে থাকতে হবে।
এক্সপার্ট : গত ভারত-অষ্ট্রেলিয়া সিরিজে আপনি অশ্বিন কে খেলার সময় অনেক বেশি ওপেন স্টেন্স নিয়ে খেলছিলেন। কাভারে এক রানের জন্য খেলছিলেন আবার এ্যাগেনেস্ট স্পিনও খেলছিলেন। এর বিষয়ে জানতে চাচ্ছি এটা কি আপনার সহজাত নাকি নিজে নিজে কাজ করেছেন?
মার্নাস : আমি সব সময়ই ওখান দিয়ে বল মারতে বেশ ভালো ছিলাম। এটা শুধু একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। এটি যতটা সম্ভব আপনাকে চেষ্টা করতে হবে যেখানে ফিল্ডারের সংখ্যা সবচেয়ে কম সেখানেই আপনি বল মারবেন।এখন আপনি যে সময়ে কথা বলছেন, অশ্বিনের লেগ সাইডে ৬-৩ ফিল্ড ছিল। তখন সে শুধু পয়েন্ট, কভার এবং স্লিপ নিয়ে বল করছিল। এবং তাই, বিষয়টা ছিল যে নিজেকে স্পেস দেয়া এবং কভারে বল ঠেলে দিয়ে রান বের করে নিয়ে আসা। আসলে আমি অফ-সাইড থেকে রান বের করার চেষ্টা করছিলাম।
এক্সপার্ট : পাকিস্তানি স্পিনাররা, বিশেষ করে যাদের আপনি মুখোমুখি হবেন, তারা অশ্বিনের থেকে কিছুটা আলাদা। হয়তো বলে অনেক কিছু চেষ্টা করার ক্ষেত্রে তারা অশ্বিনের মতো দুঃসাহসিক নাও হতে পারে তবে তারা ঘরের মাঠে অনেক প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছে। এবার বলুন, গত গ্রীষ্মে অশ্বিনের বিপক্ষে দারুণ খেলেছেন। লড়াইয়ের মাধ্য দিয়ে আপনি স্পিন খেলা সম্পর্কে কতটা উন্নতি করেছেন বলে মনে হয়?
মার্নাস : অশ্বিনের রেকর্ড এত ভালো হওয়ার কারণ হলো ও খেলার মধ্যে চিন্তা করে। সুতরাং, সব সময় ওর (অশ্বিনের) মাথায় থাকে কিভাবে সে আপনাকে বের করে আনবেন। আপনি কি করছেন এবং সে আপনাকে মোকাবেলা করার জন্য কি করছে? এবং তারপর যদি সে মনে করে, ঠিক আছে এখন আমি বোলিং একশন, রিদম পরিবর্তন করতে যাচ্ছি, আর আপনি এটি করতে যাচ্ছেন অর্থাৎ ব্যাটারের মতো চিন্তা করা। এটাই তার বিশেষত্ব। সব বোলার অবশ্য এমন না। অন্য বোলাররা যারা সত্যিই ভালো বল করেন এবং তারা সত্যিই আপনাকে আউট করা মতো ভালো বল করতে পারেন। কিন্তু প্লানিং করে আপনাকে আউট করার যে স্কিল, এটি একটি দারুন দক্ষতা। কিছু উইকেটে এটা সহজ। কারণ আপনি জায়গামত বল রাখতে পারলেই হবে এবং উইকেট কাজ করবে। কিন্তু আমি মনে করি অশ্বিন অনোক রকম উইকেটে খেলেছে যেখানে তাকে কাজ তৈরি করতে হয়েছে, তাকে অ্যাঙ্গেল তৈরি করতে হয়েছে, আঁটসাঁট বা দূর থেকে বল করতে হয়েছে। আর সেই কারণেই অশ্বিনের মতো বোলারদের বিরুদ্ধে খেলাটা সত্যিই ভালো। আপনাকে অবশ্যই আপনার খেলার উন্নতি করতে হবে কারণ সে তার নিজের খেলার উন্নতি করে নিয়েছে।
এক্সপার্ট : আমরা স্পিন সম্পর্কে অনেক কথা বলেছি। কিন্তু পাকিস্তানের কিছু দুর্দান্ত ফাস্ট বোলার রয়েছে এবং আমরা সবাই বিশেষ করে রাওয়ালপিন্ডিতে পেস সহায়তার কথা জানি। একজন বোলার যে এই গ্রীষ্মে আপনার জন্য সমস্যা তৈরি করেছিলেন তিনি ছিলেন মার্ক উড। এবং পাকিস্তানে এমন এক জোড়া দারুণ বোলার আছে যারা সত্যিকারের ফাস্ট এবং উডের মতো অকোয়ার্ড একশনও বটে।
মার্নাস : একদম, আমি জানি হাসান আলি এবং শাহীন আফ্রিদি। তাদের দুজন প্রধান ফাস্ট বোলার এবং তারপরে আমাদের দেখতে হবে, তাদের মধ্যে কে বেশি ভয়ংকর। আপনি যেমন বলেছেন, আপনাকে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। অনেক সময় হবে যখন তারা ছোট ছোট স্পেলে বল করবে। আপনাকে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। গত সামারে অবশ্য আমাদের ওখানকার পিচে যথেষ্ট সিম মুভমেন্ট ও সুইং ছিল। সাথে যদি থাকে উডের মতো বোলার যে নিয়মিতভাবে ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করছে তাহলে সেটা সামলানো মুশকিল। তবে সিরিজের শেষে এ নিয়ে আমি একটু কাজও করেছি।
এক্সপার্ট : এখন তো হোবার্ট টেস্টের পরে বেশ কিছু সময় কেটে গেছে, পেছনে ফিরে তাকালে, কী মনে হয়? এটি কি আপনাকে আরো পরিপূর্ণ ব্যাটার করে তুলেছে? মার্ক উডের বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধ এবং আপনি যেভাবে তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। কি বলবেন?
মার্নাস : আমি সবসময় এই যুদ্ধগুলো উপভোগ করি যখন আপনি প্রতিপক্ষের সাথে সত্যিই মুখোমুখি অবস্থায় থাকেন। সে যেভাবে বোলিং করেছে, বাড়তি পেস ভালো ছিল। এই সিরিজ থেকে অনেকখানি এগিয়েছি আমি। এবং আমি জানি ভবিষ্যতে মার্ক উডের মুখোমুখি হলে এগুলো কাজে আসবে। উদাহরণস্বরূপ, এক বছর বা কিছুদিন পর ইংল্যান্ডে সফর করলে বেশি সময়, আমি চেষ্টা করব যে সেই অভিজ্ঞতাগুলো থেকে আপনার কিছু বিষয় নিয়ে নিজেকে তৈরি করে । আমার মনে হয় এই সব অভিজ্ঞতা আপনাকে একজন ভালো খেলোয়াড় হতে সাহয্য করে।আর এটাই তো ক্রিকেট।
এক্সপার্ট : আপনি যখন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রি-ট্যুর প্রস্তুতির কথা বলেন, তখন তো মনে হয় সেই ধরণের লোক যে ব্যাটিংয়ের বেসিকগুলোতে নতুন করে সাজায় এবং সাথে ব্যাক আপ তৈরি করে নেন। স্মিথ এটা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। এই গ্রীষ্মের আগে যেমন আপনি আপনার ট্রিগার মুভমেন্ট নিয়ে কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করছেন।
মার্নাস : হ্যাঁ এগুলো তো নিজের অংশ।এসব হয়েই থাকে বাদ দেই, নতুন করে সব গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা তো থাকেই। কারণ তো একটাই আমাকোরো ভালো করতে হবে। আর আমার মনে হয়েছিল আমি উইকেটের চারদিকে ভালো খেলতে পারছিলাম না। তবে এটাও সত্য যে সব সময় এটা করা যায় না, কঠিন। ব্যাটার হিসাবে কোন সময় আত্মতুষ্টিতে ভোগা উচিত না আর সত্যি কথা হলো পাঁচটা ম্যাচ খেলা হয়েছিল খুব কঠিন উইকেটে। এসব উইকেটে সব ধরনের শট খেলাও মুশকিল। এখানে মূল বিষয় হলো আপনি কী করতে চাচ্ছেন সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখা এবং কী খেলবেন এবং শরীরের কোন অংশ ব্যাবহার করবেন। মানে টাইট স্টেন্স নাকি ওপেন স্টেন্স। যদি নিজের কথা বলি তাহলে বলব, ২০২১ সালে ভারত যখন আমাদের সাথে খেলে তখন আমি বুঝতে পারছিলাম না যে আসলে আমি অনেক বেশি ওপেন স্টেন্স নিচ্ছিলাম। বিষয় হলো সব সময় আপনি কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সে বিষয়ে অবগত থাকা।
এক্সপার্ট : রিভার্স সুইং খেলার জন্য কি করেন? মানে রিভার্স সুইং হলে কিভাবে খেলার চিন্তা করেন?
মার্নাস : আসলে কয়েকভাবে প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে। ঘরের পিছনে টেনিস বল খেলা যেতে পারে তবে ট্রেনিং এর ব্যাপারে যখন রিভার্স সুইং হয় তখন বল বাই বল চিন্তা করতে হয় যে কিভবে সেগুলো সামলে নেয়া যায়। আপনি আপনার নিজের স্ট্রং জোন অনুযায়ী স্টান্স পরিবর্তন করতে পারেন আবার স্টাম্প গার্ড ও পরিবর্তন করতে পারেন সব মিলিয়ে নিজে যা করে সামলাতে পারেন আর নিজের শক্তির দিকে নজর দেয়া উচিত। নিজের সামর্থ্যের দিকে নজর দিয়ে খেলায় সব থেকে ভালো উপায় মানে আপনি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন যেভাবে সেভাবেই খেলবন। আর এভাবে একবার ক্রিজে দাঁড়িয়ে গেলেই আপনি দেখবেন বল খেলা আস্তে আস্তে সহজ হয়ে যাচ্ছে।
এক্সপার্ট : আচ্ছা বল দ্রুত দেখা কিংবা মাথার যে অবস্থান এটা কি রিভার্স সুইং খেলতে বড় ভুমিকা পালন করে?
মার্নাস : আমার জন্য অবশ্যই। তবে আমার মনে হয় ব্যাটার ভেদে এটি ভিন্ন হতে পারে। তবে আমি রিভার্স এর পরিমান দেখে আমার পা নাড়াতে চাই না। একদম স্থির থেকে বল দ্রুত দেখে দেরিতে এটি ডিফেন্স করার চেষ্টা চেষ্টা করি আমি। সবার নিজস্ব ধরণ থাকে। আলাদা আলাদা আর কি ।আসল বিষয় হলো আমি কোথায় রান করতে চাচ্ছি সে অনুযায়ী খেলতে হবে। আমি এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠবো এই চিন্তা না করে আমি কোথায় কিভাবে রান করবে সেই চিন্তা করা উচিত। সেজন্য আপনার ব্যাটিং স্টাইল সেভাবে পরিবর্তন করতে হবে যেভাবে করলে সহজে রান আসে।
এক্সপার্ট : প্রি-অ্যাশেজ ক্যাম্পের সময় ব্রিসবেনের রেডল্যান্ডসে আপনার হোমগ্রাউন্ডে আপনার এবং মাইকেল ডি ভেনুটোর মধ্যে এই ছোট্ট চ্যাটটি আমার মনে আছে। যেখানে আপনি তার সাথে কি কাজ করছেন তার ব্যাখ্যা করছিলেন। আপনার জন্য এ সম্পর্কটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এবং আপনি কিভাবে কোচের ইনপুট এবং নিজের ব্যাটিংয়ের ভারসাম্য বজায় রাখেন?
মার্নাস : আমি এবং ডিভা (ডি ভেনুটো) এই সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অ্যাশেজের আগে ভালভাবে কথা -বার্তা বলতে শুরু করি, এর সাথে সে আমাকে এবং আমার খেলা সম্পর্কে বুঝাতেন বলতেন এবং সেখান থেকে আমি নিজের খেলার ধরন সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছিলাম। কোন সফরে নিজের খেলার ধরণ ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানার জন্য এমন কেও থাকা জরুরি এবং দারুণ ব্যাপার। আমি ভিন্নভাবে ভাবতে ভালোবাসি তবে সেটা সবার জন্য ভালো নাও হতে পারে।তবে ডিভার মতো কেউ থাকা সব সময়ই দারুণ ব্যাপার। নিজের খেলোয়াড় সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। এই জানার সুবিধা হলো, আপনার এপ্রোচ ঠিক না হলেও একটু প্রাকটিস একটু চেষ্টা করলেই নিজের রিদম ফিরে পাওয়া যায়।
এক্সপার্ট : ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফরকালে আপনি অনেক বেশি বল করেছিলেন। সামনের কয়েক মাস হয়তো আরো বেশি বল করতে হতে পারে। এই মুহূর্তে নিজের বোলিং সম্পর্কে কিছু বলুন
মার্নাস : আমার বোলিং- এ যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে বলে মনে করি। কিন্তু সেবার আমি অনেকটা অলরাউন্ডার হিসেবে দলে ছিলাম। পাঁচ বা ছয় নাম্বারে ব্যাট করা আর বোলিংয়ে বাড়তি মনোযোগ দেয়ার ব্যাপার ছিল। তবে আশার কথা হচ্ছে এখনো আমি বেশ অনেক বল করছি। পাকিস্তান সফরের কথা বিবেচনা করেই বেলিং করছি। আর আমার মনে হয় ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যে গতিতে বল করেছিলাম তার থেকে একটু আস্তে বল করছি আমি। ওই সময় আমি আমি বেশ জোরে বল করেছিলাম তবে এবার আমি বোলিংয়ের অন্যান্য দিক নিয়ে কাজ করছি। এর ফলে আমি একটু শেপ বা ড্রিফটও পাচ্ছি।
এক্সপার্ট : যদিও এটা বিষ্ময়কর। চার বছর পর, আপনি বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটারে পরিণত হয়েছেন এবং সেই সময়ের তুলনায় এখন যা হয়েছে তা হলো এখন আপনি খণ্ডকালীন স্পিনার হয়ে গেছেন। শেষবার যখন দেশের বাইরে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিলেন তখন আপনি একজন পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার ছিলেন, কী বলবেন?
মার্নাস : হ্যাঁ,হ্যাঁ। এর অবশ্য দুটি কারণ আছে প্রথম অষ্ট্রেলিয়ান উইকেটের ধরণ আরেকটা ব্যাপর হলো ক্যামেরন গ্রিন, গ্রিনের মতো দারুণ অলরাউন্ডার দলে থাকার কল্যাণে আমার বোলিং করার চাপ অনেকটা কমে গেছে।
এক্সপার্ট : কিছু মানুষ আছে যারা অনেক কথা বলছে। তারা বলছে আপনি একটানা তিনটা হোম সিরিজ খেলে টেস্টের এক নাম্বার ব্যাটার হয়েছেন আর এ পর্যন্ত আসতে আপনাকে কোন ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখিও হতে হয়নি। এই যে এই সব আলোচনা কি আপনার ভিতরে কোনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যে বিশ্বকে দেখাতে হবে যে আপনিও বিশ্ব সেরাদের একজন...
মার্নাস : শুনুন, আমি সব সময় দেশের বাইরে রান করতে চেয়েছি। আর এই বিষয়টা সব সময়-ই একটা চ্যালেঞ্জ। দেশের বাইরে আপনার অর্জন কি সেটা দেখেই সবাই বিচার করবে আপনি কোন মানের খেলোয়াড়। সামনের এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি বেশ উচ্ছাসিত,খুশি বলতে পারেন। অজিদের হয়ে উপমহাদেশে এটাই আমার প্রথম সফর এবং আমি অবশ্যই চাইবো যে আমি যে খেলোয়াড় হিসাবে নতুন কিছু শিখছি এবং সময়ের সাথে সাথে অারো ভালো করছি তা প্রমাণ করতে।
এক্সপার্ট : অজিদের নেটে অনুশীলন চলাকালীন সবাই যে আপনার পিছে পড়ে। আপনাকে আউট করতে চাই বা আপনাকে হিট করতে চায় এটা নিয়ে আপনার কি বিরক্তি লাগে না?
মার্নাস : নাহ, একদমই না।এটা আমি উপভোগ করি। এর কারণে আমি খেলায় মনোনিবেশ করতে পারি। প্রতিটা অনুশীলনে এটা দারুন কাজ করে আর আমি নিজের জন্য ছাপ রাখতে চাই এটা তারই অংশ। অনুশীলনে গেলে সবাই আমাকে আউট করতে চায় বা মাথায় মারতে চায় অথবা এরকম কিছুই করতে চায়, এটা বেশ উপভোগ্য।
এক্সপার্ট : এবং আপনাকে স্টোন কোল্ড স্টিভ অস্টিন হওয়ার ভান করার এবং নেটে আপনার রেসেলম্যানিয়ার মুহূর্তটি পাওয়ার সুযোগ দেয়। এটা সব শেষ কাজ, তাই না?
মার্নাস : হেসে উঠে, হ্যাঁ তা বটে।