যে কারণে বিমানবাহিনীকে এখনো ব্যবহার করছেন না পুতিন

যে কারণে বিমানবাহিনীকে এখনো ব্যবহার করছেন না পুতিন - ছবি : সংগ্রহ
ইউক্রেনে হামলা চালাতে রাশিয়া কেন বিমানবাহিনীকে পুরোদস্তুর ব্যবহার করছে না? রহস্যটা কোথায়? রুশ বিমানবাহিনীর যা ক্ষমতা তাতে যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দিতে পারে বলেই মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বিমানবাহিনীকে পুরোপুরি ব্যবহার করা থেকে এখন পর্যন্ত বিরত থেকেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর এখানেই রহস্য তৈরি হচ্ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের সপ্তম দিন হয়ে গিয়েছে। রুশ বায়ুসেনা ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমাবর্ষণ করছে রাজধানী কিয়েভ এবং খারকিভ-সহ ইউক্রেনের নানা প্রান্তে। সাত দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও কেন বিমানবাহিনীকে পুরোদস্তুর কাজে লাগাচ্ছেন না পুতিন? অন্য দিকে দেখা যাচ্ছে, ইউক্রেনের বিমানবাহিনী অনেক বেশি সক্রিয়। তারা রুশ বাহিনীর হামলাকে ক্রমাগত প্রতিরোধ করে যাচ্ছে। যেখানে ইউক্রেন বিমানবাহিনীকে পুরোদস্তুর কাজে লাগাচ্ছে, রাশিয়া এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে কেন?
এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ভারতীয় বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক কুমার। তার মতে, রাশিয়া এখন পর্যন্ত তার পুরো সামরিক শক্তি কাজে লাগায়নি। কারণ রাশিয়া সময় নিচ্ছে। তারা চাইছে শহরগুলো থেকে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাক। কিংবা শহর খালি করে দিক। সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে যাতে হতাহতের সংখ্যা না বাড়ে, তাই হামলার তেজ কমিয়ে ইউক্রেনবাসীদের সময় দিতে চাইছে।
তা ছাড়া এই যুদ্ধে রাশিয়ারও কম ক্ষতি হচ্ছে না। বহু সৈনিকের মৃত্যু হচ্ছে। এ দিকটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে পুতিনকে। যদি বিপুল সংখ্যক সেনার মৃত্যু হয়, তা হলে নিজের ঘরেও ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন পুতিন। যা তিনি চাইছেন না। আর তাই হামলার গতি কমিয়ে রণকৌশল বদলানোর চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া। হামলার পাশাপাশি সৈনিকদের নিরাপত্তার ওপরও জোর দিতে হচ্ছে রাশিয়াকে। আর সে কারণেই কিয়েভ দখল করার উদ্দেশে রওনা হওয়া ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ কনভয়ের গতি যেন আচমকাই শ্লথ করে দেয়া হয়েছে। কিয়েভ এবং খারকিভে যে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে রুশ বাহিনীকে, যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ধীরে খেলার কৌশল নিচ্ছে তারা।
ইউক্রেন ইতিমধ্যেই দাবি করেছে তাদের হামলায় প্রায় ছয় হাজার রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছে। যদিও রাশিয়া তা নস্যাৎ করেছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজিঙ্কো বলেন, 'এর থেকে স্পষ্ট যে প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে শত্রুপক্ষ অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে। তাদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। তাই হতাশায় সাধারণ নাগরিকের উপর হামলা চালাচ্ছে।'
এগোচ্ছে রুশ যুদ্ধজাহাজ, এবার সাগরপথে ইউক্রেনে হামলা!
ইউক্রেনের কিয়েভ ও খারকিভ দখলের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। খেরসান শহর ইতিমধ্যেই রুশ বাহিনীর দখলে চলে গিয়েছে। কিন্তু রাজধানী কিয়েভ এবং খারকিভ শহরে যেমন চরম প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে রুশ বাহিনীকে, তেমনই দুই বন্দর শহর ওডেশা ও মারিউপলও দখল করতে পারেনি তারা।
স্থলপথে ওই দুই বন্দর শহরে ঢুকতে না পারায় এ বার নৌপথে হামলা চালানোর পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলল রাশিয়া। বৃহস্পতিবার আমেরিকা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, রাশিয়ার বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ ক্রিমিয়া থেকে ওডেশার দিকে এগোচ্ছে। বৃহস্পতিবারই ওই যুদ্ধজাহাজ থেকে বন্দর শহরে হামলা চালাতে পারে রুশ সেনারা।
ইউক্রেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ওডেশা। ওই দেশের সবচেয়ে বড় বন্দর শহরও বটে। ইউক্রেনের অর্থনীতির অন্যতম মেরুদণ্ড এই শহর। সোভিয়েত আমলেও এই বন্দর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃহস্পতিবারই ইউক্রেনের অন্যতম বন্দর শহর খেরসান দখল করেছে রুশ সেনারা। ওডেশা দখল এখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও রুশ হামলার পুরোপুরি জবাব দিতে প্রস্তুত এই শহর। এমনটাই দাবি করেছেন শহরের মেয়র গেনাডি ট্রুখানভ।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা