রাতকানা : রোগ কি কেন হয়
রাতকানা : রোগ কি কেন হয় - ছবি : সংগ্রহ
রাতকানা রোগ কী
রাতকানা রোগ বলতে রাতে বা কম আলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম যদিও দিনের বেলায় বা আলোতে তেমন একটা দৃষ্টিসমস্যা থাকে না। এমনটি কেন হয়? আসলে দেখার জন্য আমাদের চোখে একই সাথে দুটি সিস্টেম বিদ্যমান। দিনের আলোতে দেখার জন্য একটি এবং কম আলো বা অন্ধাকারে দেখার জন্য ভিন্নতর একটি সিস্টেম কাজ করে।
দেখার জন্য চোখ আলোর মাধ্যমে বস্তু থেকে প্রাথমিক সংকেত বা সিগনেল সংগ্রহ করে ফটোরিসেপ্টর নামক রেটিনার বিশেষ এক ধরণের কোষ।এই ফটোরিসেপ্টর আবার দুই ধরণের।কোণ ফটোরিসেপ্টর এবং রড ফটোরিসেপ্টর। কোণ ফটোরিসেপ্টর দিনের বেলায় বা অধিকতর আলোতে সংবেদনশীল। আর রড ফটোরিসেপ্টর অন্ধকার বা স্বল্প আলোতে সংবেদনশীল। একটি সক্রিয় হলে অন্যটি সয়ংক্রিয়ভাবে নিস্ক্রিয় হয়ে যায়।
দিনের বেলা যখন চোখে আলো আপতিত হয় তখন দ্রুত কোণ ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হয়। একই সময়ে কিছু রড ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হলেও দ্রুতই এটি সংবেদনশীলতা হারিয়ে নিস্ক্রিয় হয়ে যায়।ফলে তখন একমাত্র কোণ ফটোরিসেপ্টর সক্রিয় থাকে। এমতাবস্থায় দেখার সব কাজ কোণ ফটোরিসেপ্টরের মাধ্যমে সাধিত হতে থাকে। দিন শেষে বা আলো থেকে যখন আমরা অন্ধকার বা কম আলোতে প্রবেশ করি তখন উল্টো ঘটনার অবতারণা হয়। এখানে দ্রুত কোণ ফটোরিসেপ্টর তার সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলে এবং রড ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হতে থাকে।৫-১০ মিনিট সময়ের ব্যবধানে রড ফটোরিসেপ্টরের সংবেদনশীলতা কোণকে ছাড়িয়ে যায় এবং ১৫-৩০ মিনিটের সময়ের মধ্যে রড ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে দেখার জন্য শতভাগ প্রস্তুত হয়ে যায়। এটিকে বলা হয় ডার্ক এডাপ্টেশন বা অন্ধাকারে মানিয়ে নেওয়া।রাতের বেলায় গাড়ী চালক গাড়ীর ভিতরের আলো নিভিয়ে দিয়ে আসলে অন্ধকারে চোখকে মানিয়ে নিতে তথা রড ফটোরিসেপ্টর সিস্টেমকে সক্রিয় করে থাকে।
এখন যদি কোনো কারণে রড সিস্টেম বা রড ফটোরিসেপ্টর ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে রাতের দেখায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। এটিকে বলা হয় রাতকানা বা নিক্টেলোপিয়া।
রাতকানা রোগের কারণ
ভিটামিন এ স্বল্পতা : শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ ঘাটতিজনিত কারণে চোখের রড সিস্টেম মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিশেষ করে শিশুর ডায়রিয়াজনিত কারণে হঠাৎ করে ভিটামিন এ ঘাটতি তীব্র হলে এ সমস্যাটি দেখা দেয়। ভিটামিন এ কেম্পেইনের কারনে এসমস্যার তীব্রতা আগের যেকোন সমসয়ের চেয়ে কম।তবে এখনও এটি ঝূকিমুক্ত নয়।
চোখের রোগ : চোখের এমন কিছু সমস্যা আছে যেগুলিতে রড সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে রাতকানা রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা (আরপি); হাই মায়োপিয়া; রেটিনাল ডিস্ট্রোফি ইত্যাদি।
চিকিৎসা
উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন-এ ব্যবহারে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে। প্রানীজাত যেমন কলিজা এবং শাক-সবজি যেমন গাজর, পালং শাক, মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ বিদ্যমান।
সতর্কতা
ধুমপান ও রেটিনো টক্সিক কিছু ঔষধ যেমন হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইন (রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই ইত্যাদিতে ব্যবহৃত), টেমোক্সিফেন (কেন্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত) সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
উচ্চমাত্রার ভিটামিন-এ বা বিটা কেরোটিন দীর্ঘদিন ব্যবহারে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার ধুমপান ও বিটা-কেরোটিন সাপ্লিমেন্ট দীর্ঘদিন একসাথে চলতে থাকলে ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে।
এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমএস (চক্ষু)
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক- জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল।
কনসাল্টেন্ট- আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার
৩৮/৩-৪ রিং রোড, আদাবর, ঢাকা।
ফোন : ০১৯২০৯৬২৫১২