পুতিনের স্বপ্ন না দুঃস্বপ্ন!

পুতিনের স্বপ্ন না দুঃস্বপ্ন! - ছবি : সংগ্রহ
ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত স্বপ্ন দেখছেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্তৃত্ব ফিরে পেতে। এ জন্য সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের দেশগুলোকে একের পর এক শাসন পরিবর্তন প্রচেষ্টা, সেনা প্রেরণ ও অনুগত করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। একই সাথে নজর রাখছেন পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি। ইউক্রেনের ব্যাপারে তিনি পরিষ্কার বলেছেন রাষ্ট্র হিসাবে এর টিকে থাকার অধিকার নেই। জর্জিয়া বা বেলারুশ এমনকি মধ্য এশিয়ার অন্যান্য প্রজাতন্ত্রের ব্যাপারেও তার দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম। তিনি যেভাবে এগুচ্ছেন তাতে বাধা না পেলে তিনি জারের রুশ প্রজাতন্ত্রের মতো একটি সর্বাত্মকবাদী উগ্র জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন যার প্রত্যাশা থাকবে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো।
রাশিয়ার অর্থনীতি এ ধরনের একটি প্রভাবশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার উপযুক্ত না হবার কারণে চীনের সাথে তিনি বোঝাপড়া তৈরি করেছেন। একই সাথে আমেরিকাবিরোধী যেসব দেশ এশিয়া আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকায় রয়েছে সেগুলোকে নিয়ে আলাদা বলয় তৈরি করছেন। এর মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যে বৈশ্বিক ব্যবস্থা সেটাকেও চ্যালেঞ্জ করছেন। এ ক্ষেত্রে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে তার বেশ কিছুটা মিল রয়েছে। যদিও দুই জনের স্বার্থ সব ক্ষেত্রে এক বিন্দুতে নেই।
একজন রাশিয়ান বিশ্লেষক জানিয়েছেন, ভ্লাদিমির পুতিন আর পশ্চিমা প্রধান বিশ্বব্যবস্থার অংশ হিসাবে থাকতে রাজি নন। তিনি নতুন এক বিশ্বব্যবস্থা নির্মাণ করতে চান অথবা পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমন এক বলয় তৈরি করতে চান যেখানে সমান্তরাল বৈশ্বিক অর্থ ও বাণিজ্য ব্যবস্থা কার্যকর হবে।
রাশিয়া ও চীন দুটি দেশই পাশ্চাত্য নির্ভর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার এই বিষয়ে সম্মত মতে রয়েছে বলে মনে হয়। অবশ্য বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো শক্তিশালী নয় রুশ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। দেশটি অর্ধেক আয় আসে জ্বালানি রফতানি করে। বাকি আয়ের বড় অংশ আসে প্রতিরক্ষা শিল্প থেকে। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করার পর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পর গত ছয় বছরের বেশি সময় এর মধ্যে টিকে থাকার সক্ষমতার অর্জনের চেষ্টা করেছে রাশিয়া।
পুতিন জানতেন ইউক্রেন দখলে কোন অভিযান চালালে পশ্চিমা দেশগুলো সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করতে পারে। যুদ্ধের প্রথম ৪-৫ দিনের গতি প্রকৃতি দেখে ইউরোপ রুশ আগ্রাসনের ব্যাপারে প্রচণ্ডভাবে ভীত হয়ে পড়েছে। ফলে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ অথবা সুইফট থেকে বিছিন্ন করার পদক্ষেপের পাথে তারা এগিয়ে যায়। এ সব পদক্ষেপের প্রভাব ইউরোপীয় অর্থনীতিতে পড়ার আশঙ্কা থাকার পরও সব দেশই শেষ পর্যন্ত এর সাথে সম্মত হয়।
সুইফট থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি জো বাইডেন ইউক্রেন আগ্রাসন শুরুর আগে থেকেই দিয়ে এসেছিলেন। ২০১৪ সালে আংশিক বিধি নিষেধের পর রাশিয়াও মনে করেছিল পরবর্তীতে বড় কিছু করা হলে পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক বিধিনিষেধে পড়তে হবে রাশিয়াকে। এর প্রস্তুতি হিসাবে রাশিয়া অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের জন্য এসপিএসএফ নামে বিকল্প আর্থিক বার্তা স্থানান্তর করার সিস্টেম চালু করে। পরের বছর চীনে এসআইপিএস নামে একটি সিস্টেম চালু করে। চীন রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় এই সিস্টেম চালু করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সুইফটের সর্বজনীন সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্নতার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে রাশিয়ান অর্থনীতির ওপর।
রাশিয়ার ভিন্ন কোনো ব্যবস্থার চিন্তা এককভাবে করার সুযোগ নেই। চীনের সহায়তা পেলে ইউরোপের বিকল্প জ্বালানি বাজার পাবে মস্কো। আর গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী যে বলয় চীন রাশিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে সেটিকে সামনে নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরির জন্য তাদের সামনে এগুতে হবে।