কেন পায়ের গোড়ালি ফাটে?
কেন পায়ের গোড়ালি ফাটে? - ছবি : সংগ্রহ
পা ফাটার সমস্যা নতুন নয়। কমবেশি সকলেই কোনো না কোনো বয়সে এই সমস্যার মুখোমুখি হন। আর পায়ের গোড়ালি যদি ফেটে থাকে, তবে পা ঢাকা জুতা না পরলে খুবই খারাপ দেখাতে পারে পা। সমস্যা থাকলেও আজও বহু মানুষ এই সমস্যার কারণ সম্পর্কে অবগত নন।
১। পা ফাটার একাধিক কারণের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য কারণ ভিটামিনের অভাব। বিশেষত ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি ত্বকের যত্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এই ভিটামিনগুলোর অভাবে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যার মধ্যে অন্যতম পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়া।
২। পানিশূন্যতা পা ফাটার আরো একটি কারণ। পরিবেশের আর্দ্রতা কম থাকা, কম জল পান করা কিংবা শুষ্ক পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার ফলে পায়ের ত্বকের আর্দ্রতা কমে যেতে পারে। ফলে চামড়া শুকিয়ে ও ফেটে যেতে পারে।
৩। এক্সিমা এমন এক ধরনের ত্বকের রোগ যার প্রভাবে ফাটতে পারে পা। এই রোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে উপসর্গটি দেখা যায় তাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস। সারা দেহের যেকোনো স্থানেই এই রোগ হতে পারে। তবে এই রোগের সঠিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা।
৪। সোরিয়াসিস রোগের ক্ষেত্রেও পা ফাটা দেখা যেতে পারে। পায়ের তালুতে খোসার মতো চামড়া উঠতে থাকে এই রোগে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে পায়ের গোড়ালিতেও। তবে এই রোগটি সাধারণত দীর্ঘস্থায়ীভাবে হয়।
সাধারণত যখন জলবায়ুর শুষ্কতার ফলে পায়ের গোড়ালির চামড়া ফেটে যায় তখন ঘরোয়া উপাচারেই তার নিরাময় সম্ভব। কিন্তু সমস্যা যদি গভীর হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষত যদি এই সমস্যা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় বা রোগীর যদি ডায়াবিটিস জাতীয় সমস্যা থাকে তবে ঝুঁকি নেয়া ঠিক নয়।
নতুন জুতা পরলেই পায়ে ফোস্কা পড়ে? সমাধান যেভাবে
পছন্দের জামার সাথে জুতসই জুতা না হলে মুখ ভার হয় অনেকেরই। তবে যত দামি হোক না কেন, নতুন জুতা পায়ে পরে ঘণ্টা খানেক হাঁটিহাঁটির পর গোড়ালির পিছন দিকে কিংবা বুড়ো আঙুলের তলায় ফোস্কা পড়ে যাওয়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। শুরু হয় জুতা যন্ত্রণা। এক বার ফোস্কা পড়লে পরবর্তী দু’-তিন দিন হাঁটা চলা করাটাই মুশকিল হয়ে পড়ে।
এই সমস্যা আপনার একার নয়। এই সমস্যায় নাজেহাল হন কমবেশি সকলেই। এই অবস্থায় কয়েকটি ঘরোয়া উপায় মেনে চললেই দ্রুত এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন।
১) অ্যালো ভেরা ফোস্কা সারিয়ে তুলতে দুর্দান্ত কার্যকর। অ্যালো ভেরার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য ক্ষতস্থানের ফোলাভাব এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। ফোস্কাতে ভালো করতে অ্যালো ভেরা জেল লাগিয়ে শুকিয়ে নিন। জেল শুকিয়ে গেলে হালকা গরম দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দিনে তিন বার লাগালেই অনেকটা আরাম পাবেন।
২) গ্রিন টি-তে, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকে। এটি ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের ভাল উৎস। গরম পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে একটি টি ব্যাগ ডোবান। তার পর ব্যাগটি ঠান্ডা হতে দিন। টি ব্যাগটি নিয়ে ফোস্কার জায়গায় বেশ কিছু ক্ষণ লাগিয়ে রেখে দিন। বেকিং সোডাতে অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। দিনে দুই থেকে তিন বার এই প্রক্রিয়াটি করলেই সুফল মিলবে।
৩) ফোস্কা নিরাময়ের জন্য অ্যাপ্ল সাইডার ভিনিগারও ব্যবহার করতে পারেন। এর অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য প্রদাহ-ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। সংক্রমণের বিস্তার হতে দেয় না।। অ্যাপ্ল সাইডার ভিনেগারে তুলো ভিজিয়ে ক্ষত স্থানে হালকা হাতে চেপে লাগিয়ে রাখুন বেশ কিছুক্ষণ। এই প্রক্রিয়াটি করার সময় সামান্য জ্বালা করতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত উপকার পাবেন।
৪) ক্ষত স্থানে নারকেল তেলও লাগাতে পারেন। নারকেল তেল এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। নারকেল তেল টিস্যু মেরামতের পাশাপাশি, ক্ষতস্থান দ্রুত নিরাময় করতেও সহায়তা করে। এ ছাড়া পেট্রোলিয়াম জেলিও লাগাতে পারেন। দিনে দু’বার ১৫ মিনিট গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখুন। ভালো করে তোয়ালে দিয়ে শুকিয়ে নিন। তার পর ক্ষতস্থানে পেট্রোলিয়াম জেলি কিংবা নারকেল তেল লাগিয়ে নিন। গরম পানি ব্যথা এবং সংক্রমণকে প্রশমিত করতে বেশ উপকারী।
৫) ফোস্কার ব্যথা কমাতে লবণও ব্যবহার করতে পারেন। গরম পানিতে এক চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। এ বার সেই পানি দিয়ে ফোস্কার জায়গায় সেঁক দিন । এই উপায় ফোস্কার যন্ত্রণা ও ফোলাভাব কমে যাবে। দ্রুত ক্ষত নিরাময় হবে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা