সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত মানুষের দেশ ইউক্রেনের অজানা তথ্য
সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত মানুষের দেশ ইউক্রেনের অজানা তথ্য - ছবি : সংগৃহীত
১. রাশিয়া এশিয়া এবং ইউরোপ মিলিয়ে। তাই আক্রমণকারী পুতিনের দেশকে বাদ দিলে শুধু ইউরোপের মধ্যে থাকা দেশের মধ্যে এলাকার হিসেবে সবচেয়ে বড় ইউক্রেন। মোটা আয়তন ৬০৩.৬২৮ বর্গ কিলোমিটার।
২. আয়তনে বড় হলেও সেই অনুপাতে জনসংখ্যা অনেকটাই কম ইউক্রেনের। এখানে বাস পাঁচ কোটির কম মানুষের।
৩. বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সবচেয়ে শিক্ষিত মানুষের বাস, ইউক্রেন তাদের অন্যতম। প্রায় ১০০ শতাংশ মানুষই সাক্ষর। যেমন স্বীকৃতি রয়েছে উত্তর কোরিয়ার। তথ্য বলছে, ১৫ বছরের উপরে বয়স এমন ৯৯.৪ শতাংশ বাসিন্দাই লিখতে, পড়তে পারেন। আর ৭০ শতাংশ সাবালকই দশম বা দ্বাদশ শ্রেণি স্তরের শিক্ষিত। উচ্চশিক্ষার হিসেবেও অগ্রণী ইউক্রেন।
৪. ইউরোপ যাদের কাছে ভ্রমণের গন্তব্য তাদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ ইউক্রেন। শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, এই দেশে খাবার থেকে গাড়ি ভাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই সস্তা।
৫. ইউক্রেনে গুরুত্বপূর্ণ স্মারকের সংখ্যা অনেক। ইউনেস্কো স্বীকৃত হেরিটজ সাইটের সংখ্যা ছয়। দেশের প্রাচীন সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের নিদর্শন দেখা যায় ইউক্রেনের বিভিন্ন প্রান্তে।
৬. বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা সঙ্গীত যন্ত্রের ব্যবহার হয় ইউক্রেনে। এর নাম ট্রেমবিটা। মৃত্যু, বিবাহ থেকে সামাজিক উৎসব সবেতেই ট্রেমবিটা ব্যবহারের রেওয়াজ রয়েছে ইউরোপের এই দেশে।
৭. বিশ্বের গভীরতম পাতাল রেল স্টেশন রয়েচে ইউক্রেনে। কিভের আর্সেনালনা মেট্রো স্টেশনটি মাটি থেকে
৮. ইতিহাসের অনেক ওঠানামা চললেও স্বাধীন ইউক্রেনের জন্ম মাত্র তিন দশক আগে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পায় ইউক্রেন।
৯. খাদ্যাভাস থেকে পোশাক সবেতেই বৈচিত্রে ভরা ইউক্রেন। এখানকার পুরুষেরা বিয়ের সময়ে কনের বাঁ হাতের আঙুল নয়, ডান হাতে আংটি পরান।
১০. শিক্ষা থেকে সংস্কৃতি কিংবা ক্রীড়ার ক্ষেত্রেও অনেক অবদান রয়েছে ইউক্রেনের। এখানেই বিশ্বখ্যাত গান ‘ও সোলে মিও’ জন্ম নেয়।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
ইউক্রেনের রাজনৈতিক চাঞ্চল্যের ইতিহাস
বিস্ফোরণ ঘটেছে ,পর পর শেল আছড়ে পড়েছে, আকাশ ভরে গিয়েছে যুদ্ধের কালো ধোঁয়ায়, রক্ত ঝরেছে, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন বহুজন। শুরু হয়েছে ইউক্রেনের বুকে রুশ হামলা। ক্রিমিয়া ভূখণ্ডের দখল ঘিরে রুশ আগ্রাসন শুরু হয়। যদিও ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া নেপথ্যে ন্যাটোয় ইউক্রেনের অন্তর্ভূক্তি ঘিরে নিজের মতো করে কূটনৈতিক অঙ্ক কষে গিয়েছে। উল্লেখ্য, শুধু বর্তমান ইউক্রেন নয়, ইউক্রেনের রাজনৈতিক ইতিহাসেও বারবার উঠে এসেছে দোলাচল। উঠে এসেছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। একনজরে ফিরে দেখা সেই ইতিহাস।
১.
ইউক্রেনে সোভিয়েত রিপাবলিকের নেতা ছিলেন লিওনিদ ক্রাভচুক। ১৯৯১ সালে তিনি দেশকে মস্কোর অধীনতা থেকে মুক্ত করেন। একটি রেফারেন্ডাম ও নির্বাচনের মাধ্যমে ইউক্রেনের মানুষ স্বাধীনতায় সায় দেন ও ক্রাভচুককে নির্বাচন করা হয় দেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে।
২.
১৯৯৪ সালে লিওদিন কুচমা হারিয়ে দেন ক্রাভচুককে। 'স্বচ্ছ্ব' রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মসনদ জিতে নেন তিনি। ১৯৯৯ সালে ফের মসনদে নির্বাচিত হন কুচমা। ভোট ঘিরে উঠে আসতে থাকে অবৈধতার অভিযোগ। এরপর ২০০৪ সালে ইউক্রেনের মসনদে আসেন রাশিয়া-পন্থী ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। তার বিরুদ্ধে ভোটে রিগিং করে জেতার অভিযোগ ওঠে। এরপর রাশিয়াপন্থী রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ইউক্রেনজুড়ে শুরু হয় গেরুয়া বিপ্লব। বিরুদ্ধে দাঁড়ান ভিক্টর ইউস্চেনকো। পরবর্তীকালে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির তখতে তিনিই বসেন।
৩.
২০০৫ সালে ক্রেমলিনের হাত থেকে বেরিয়ে ইউক্রেনকে ন্যাটোপন্থী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থার দিকে নিয়ে গিয়ে শাসনের প্রতিশ্রুতি দেন ভিক্টর ইউস্চেনকো। ন্যাটো ইউক্রেনকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে একদিন সেই দেশকে ন্যাটোভুক্ত করা হবে। আর তাতেই রাশিয়ার ক্ষোভের বীজ বপন হয়।
৪.
এরপর ২০১০ ইউক্রেনের মসনদে আসেন ইয়ানোকোভিচ। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি গ্যাস সম্পর্কীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইয়ানুকোভিচ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ও আলোচনা বাতিল করে। যাতে মস্কোর সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক মজবুত হয়, সেই নিরিখেই এই পদক্ষেপ নেন তিনি।
৫.
২০১৪ সালে কিয়েভে মেইডেন স্কোয়ারে অগ্নিগর্ভ বিক্ষোভ দেখা যায়। ফেব্রুয়ারিতে ভোটে হেরে ইউনোকোভিচ দেশ ছাড়েন। অস্ত্রধারী একদল মানুষ ক্রিমিয়ায় ইউক্রেনের অংশে রাশিয়ার পতাকা উত্তোলন করেন। এরপরই ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার ফেডারেশনে যোগদানের জন্য বলেন আহ্বান জানায় মস্কো। শুরু হয়ে যায় সংযুক্তির প্রক্রিয়া।
৬.
ধীরে ধীরে বহু ঘটনা পরম্পরায় পূর্ব ইউক্রেনে চাঞ্চল্য শুরু হয়। এর আগে MH17 বিমানে মিসাইল হামলায় শতাধির মানুষের মৃত্যু, দোনবাসে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বাধীনতা ঘোষণার মতো ঘটনা ঘটে যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঘনিষ্ঠ হতে থাকে ইউক্রেন। কমিক অভিনেতা ভলদিমির জেনেস্কি নির্বাচন জিতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির মসনদে বসেন।
৭.
এরপর ইউক্রেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দুর্নীতিসহ একাধিক ফ্যাক্টরের মাঝেই ছাইচাপা আগুনের মতো ধিক ধিক করে জ্বলেছে রাশিয়ার বহু কূটনৈতিক পদক্ষেপের প্রভাব। ততদিনে ইউক্রেন ও আমেরিকা অনেকটাই ঘনিষ্ঠ। যা মেনে নিতে পারেনি মস্কো। এদিকে, ২০২০ থেকে বিশ্বজুড়ে ততক্ষণে কোভিডের কালো ছায়া। ২০২১ সালে জেলেনস্কির শাসনকালে কোভিডের জেরে লকডাউন ঘোষিত হয়। এদিকে, ন্যাটোতে অন্তর্ভূক্তির জন্য প্রক্রিয়া চালিয়ে যায় ইউক্রেন।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস