সুইসাইড নোট
সুইসাইড নোট - ছবি : সংগ্রহ
ছেলের রুমের পাশে এসেই থমকে দাঁড়ালেন জয়নাল সাহেব। যে রুম থেকে সারা দিন চিল্লাপাল্লা শব্দ হয়, ওই রুমটা আজ নিরিবিলি লাগছে। ঘটনা বুঝার জন্য রুমের ভেতরে ঢুকলেন।
রুমটা আজ সাজানো গোছানো পরিপাটি করে রাখা। যেটা কখনই ছিল না। জয়নাল সাহেব বেশ অবাক হলেন। ছেলের রুমের পরিবেশ দেখে।
হঠাৎ লক্ষ করলেন, বিছানার ওপর একটা খাম। জয়নাল সাহেব খামটা হাতে নিলেন। খামটা খুলতেই দেখলেন ছেলের হাতের লেখা একটা চিঠি।
চিঠিতে লিখা...
প্রিয় বাবা,
তুমি যখন এই চিঠিটা পড়তেছ, তখন আমি অনেক দূরে। যেখান থেকে আর কোনো দিন ফিরে এসে বাবা বলে ডাকা সম্ভব না। তুমি আর মা একদম কান্না করবে না। বাবা আমি খুব খারাপ হয়ে গেছি। আমি চাই না আমার জন্য তোমার মুখে চুনকালি পড়ুন। তাই আমি সুইসাইড করলাম। আমায় মাফ করে দিও বাবা।
জয়নাল সাহেব হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। নিজেকে কোনো রকম সামলে নিয়ে আবার চিঠি পড়তে শুরু করলেন।
বাবা, আমি কেন সুইসাইড করলাম সেটা বলি। প্লিজ কান্না করো না। আমার সাথে পড়ে সুমাইয়াকে তো তুমি চেনই। আমাদের বাসায় প্রায়ই মাঝে মাঝে আসত নোট বুক নিতে। সত্যি বলতে, সুমাইয়া নোটবুক নিতে আসত না। সুমাইয়া আসত আমার সাথে সময় কাটাতে। সুমাইয়ার সাথে আমার রিলেশন ছিল। ওর সাথে আমার সব কিছুই হয়েছিল। সুমাইয়া আমার দ্বারা প্রেগন্যান্ট।
শুধু সুমাইয়া নয়, পাশের বাসায় থাকে, যাকে আমি ভাবি বলে ডাকি। তার সাথেও আমার গোপন সম্পর্ক ছিল। লোক সমাজ যাকে বলে পরকীয়া। এই ঘটনা তার স্বামী জেনে গেছে। এখন তার স্বামী ডিভোর্স দিবে বলেছে। তাকে যদি ডিভোর্স দেয়, তাহলে আমাকে তারে বিয়ে করতে হবে।
এই ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে, তোমার মান সম্মান কিছুই থাকবে না। তাই সুইসাইড করতে বাধ্য হলাম। ভালো থেকো বাবা। আমায় মাফ করে দিও।
ইতি, তোমার ছেলে।
বি. দ্র. বাবা, ওপরে যা যা পড়েছ, সবই মিথ্যা কথা। তোমাকে শুধু একটা কথাই বোঝানোর চাই,
'পরীক্ষার রেজাল্টই জীবনের সবচাইতে খারাপ কিছু না, এর চাইতে অনেক খারাপ কিছু হতে পারে জীবনে। ফেল করাটা তেমন খারাপ কিছু না। বাবা, আমি দরজার আড়ালে লুকিয়ে আছি।'
ছেলের সাহস দেখে, জয়নাল সাহেবের মেজাজ গরম হয়ে গেল। দরজার আড়াল থেকে ছেলেকে বের করলেন।
ছেলের এমন কাজে জন্য শাস্তি স্বরূপ, ছেলেকে টয়লেটের ভেতরে দিয়ে বাইরে থেকে লক করে দিলেন।
ছেলে কয়েকবার টয়লেটের দরজা ধাক্কাধাক্কি করল। কিন্তু জয়নাল সাহেব লক খুলল না।
৩ ঘন্টা পর...
টয়লেটের সামনে বাসার সকলে লাইন ধরে আছে। ছেলে এবার ভেতর থেকে লক করে বসে আছে। অনেক বলার পড়েও লক খুলছে না।
জয়নাল সাহেব অনেক বিনয়ের সাথে আদুরে গলায় বার বার শুধু একই কথা বলছে, 'আমাদের সকলকে আর শাস্তি দিস না। তারাতারি দরজা খোল।'