প্রস্রাবে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ কিসের ইঙ্গিত?

অন্য এক দিগন্ত | Feb 24, 2022 01:14 pm
প্রস্রাবে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ কিসের ইঙ্গিত?

প্রস্রাবে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ কিসের ইঙ্গিত? - ছবি : সংগ্রহ

 

প্রস্রাবের সাধারণ যে ঝাঁজাল গন্ধটি রয়েছে সেটি আসলে অ্যামোনিয়া থেকে উৎপন্ন হয়। কিন্তু তারও একটি মাত্রা রয়েছে। যদি প্রস্রাবের গন্ধ অসহনীয় হয়ে ওঠে, তবে তা বহুবিধ সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। কখনো কখনোও, দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব রোগ সংক্রমণ এবং অন্যান্য অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপসর্গ হতে পারে। রইল এমন কিছু সম্ভাব্য কারণ যা থেকে মাত্রাতিরিক্ত দুর্গন্ধ হয় প্রস্রাবে।

১। মূত্রনালীর সংক্রমণ
ইউটিআই বা মূত্রনালীর সংক্রমণ সাধারণত নানা অযাচিত ব্যাক্টেরিয়ার কারণে ঘটে যা মূত্রাশয়ে সংখ্যাবৃদ্ধি করে। দুর্গন্ধ এই ব্যাক্টেরিয়ার উপস্থিতির একটি প্রত্যক্ষ লক্ষণ। তবে শুধু মূত্রের দুর্গন্ধই নয়, প্রস্রাব করার সময় জ্বালা এবং ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়ার মতো অন্যান্য একাধিক লক্ষণ দ্বারা ইউটিআই চিহ্নিত করা হয়।

২। পানির অভাব
প্রস্রাব অতিরিক্ত পানি এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের মিশ্রণ ছাড়া আর কিছুই নয়। কাজেই যখন পানির পরিমাণ পর্যাপ্ত হয় না তখন অন্য বর্জ্য পদার্থগুলির মাত্রা বা ঘনত্ব বেড়ে যায় ও খারাপ গন্ধ তৈরি হয়।

৩। ডায়াবেটিস
গন্ধযুক্ত প্রস্রাব ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে। ডায়াবিটিস আক্রান্ত রোগীর শরীর অন্যান্য মানুষের দেহের মতো চিনি হজম করতে সক্ষম হয় না, যার কারণে তাদের প্রস্রাব মিষ্টি বা ফলের গন্ধযুক্ত হতে পারে। কেবল প্রস্রাবের গন্ধই নয়, বার বার মূত্র ত্যাগের প্রবণতাও ডায়াবিটিসের লক্ষণ।

৪। যৌন রোগ
যৌনতার মাধ্যমে সংক্রামিত রোগ বা সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন প্রস্রাব এবং মূত্রাশয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কখনো কখনো এই সংক্রমণগুলো মূত্রনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে যা প্রস্রাবের গন্ধে পরিবর্তন আনতে পারে। তবে কেবল যৌনতার মাধ্যমে সংক্রামিত রোগই নয়, যোনির সামান্য জ্বালাও দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।

৫। ইস্ট সংক্রমণ
যোনিসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রাকৃতিকভাবে ইস্ট থাকে। কিন্তু এর পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে এটি শরীরে, বিশেষত যোনিতে নানা প্রকার জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব মূত্রনালী এবং যোনিপথ সংলগ্ন অঞ্চলে ইস্টের সংক্রমণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পষ্ট একটি নির্দেশক। এই ধরনের সংক্রমণের ফলে প্রস্রাবের দুর্গন্ধ ছাড়াও অন্যান্য বেশ কিছু উপসর্গ দেখা যায়, যার মধ্যে যোনি দেশের লালভাব, ফোলাভাব এবং ঘন সাদা স্রাব উল্লেখযোগ্য।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

প্রস্রাব ঝরা : সমস্যা ও সমাধান
ডা: মো: সাইফুল ইসলাম সেলিম

সাধারণত আমাদের দেশের ৩৫-৬৫ বছরের মেয়েদের একটি বিরাট অংশ যা শতকার ১০ ভাগ হাঁচি, কাশি বসা থেকে উঠা বা ভারী কোনো জিনিস তোলার সময় মূত্রথলির সঙ্কোচন ছাড়াই অনিচ্ছাকৃতভাবে অল্প পরিমাণ মূত্র বের হয়। অনেকেই এটাকে পাত্তা দিতে চান না বা লজ্জায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে চান না। এটা কিন্তু একটা রোগ। আর একে স্ট্রেস ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স (এসইউআই) বলা হয়। মহিলাদের সাথে সাথে পুরুষরাও এ সমস্যায় ভুগতে পারেন। সচেতনতাই পারে এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে।

সামান্য কোনো চাপ প্রয়োগ করলেই প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে কয়েক ফোঁটা থেকে অল্প পরিমাণ মূত্র বের হয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সংক্রামণ, জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবের থলির অংশ বিশেষ যোনিপথে বের হয়ে আসা, জরায়ু নেমে আসাসহ অন্যান্য স্ত্রীরোগও থাকতে পারে। এটি একটি বিশেষ রোগ বিধায় এর চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়াই বাঞ্চনীয়। এর চিকিৎসায় সাধারণ জীবন মানের পরিবর্তন, বিশেষ ব্যয়াম, মুখে খাওয়ার ওষুধসহ বিশেষ অপারেশনের ব্যবস্থা থাকলেও প্রচারণার অভাবে রোগীরা বিনাচিকিৎসায় থাকেন।
এ রোগ প্রতিরোধে পরিমিত পানি পান করা ( পূর্ণ বয়স্ক পুরুষের জন্য প্রায় ১.২ থেকে ১.৫ লি:), ওজন কমানো, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করা, বেশিবেশি সবজী জাতীয় খাবার খাওয়া, ইসবগুলের সরবতও খাওয়া, প্রশ্রাব- পায়খানার বেগ চেপে না রাখা, প্রশ্রাবের সংক্রামণ, জ্বালাপোড়া, সিসটোসিল, ইউটিরাইন প্রলাপসসহ অন্যান্য স্ত্রীরোগের চিকিৎসা নিতে হবে। আবার রোগীকে মূত্রনালীর বা তলপেটের আশপাশের মাংসপেশিকে সবল করার জন্য বিশেষ এক ব্যয়াম রোগীকে শেখানো হয় যা নিয়মিত অভ্যাস করলে রোগীর সংশ্লিষ্ট মাংসপেশী শক্তিশালী হয় এবং রোগীর মূত্রথলীতে মূত্রধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

তা ছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর রোগের তীব্রতা অনুসারে মুখে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে থাকেন যা নিয়মিত সেবন করলে কোনো কোনো সময় উপকার পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এই রোগের জন্য রোগীর প্রোয়োজন ও সামর্থ্য অনুসারে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রপচারের ব্যবস্থা আছে। এই অপারেশনের জটিলতা যেমন কম তেমনি এর সফলতাও অনেক বেশি।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ফিমেল অ্যান্ড অ্যান্ড্রোলজিকেল ইউরোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us