বিছানা বা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেই ঘোরাচ্ছে মাথা?
বিছানা বা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেই ঘোরাচ্ছে মাথা? - ছবি : সংগ্রহ
শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেই মাথা ঘোরাচ্ছে? বসে থেকে উঠতে গেলেই মাথা ঘুরিয়ে টলমল করছেন? তাহলে ডাক্তারি ভাষায়, অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনে ভুগছেন আপনি। চিকিত্সকরা বলছেন, শরীরের ভঙ্গিতে পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ রক্তচাপ কমলেই অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন ঘটতে পারে। সেই কারণে চেয়ার বা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালেই অস্বাভাবিক মাথা ঘুরে যেতে পারে।
আমরা যখন শুয়ে থাকি বা নিচু হয়ে বসে থাকি তখন সাধারণত অভিকর্ষের কারণে পায়ের দিকেই রক্ত প্রবাহিত হয়। একবার আমরা উঠে দাঁড়ালে, আমাদের শরীর মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য রক্তকে উপরের দিকে ঠেলে দেয় যাতে এটি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। পায়ের বড় শিরা থেকে রক্ত বের করে আপনার মস্তিষ্কের পাশাপাশি হার্টে সরবরাহ করতে শরীর কিছুক্ষণ সময় নেয়।
যখন আপনার ধমনীতে রক্তচাপ নির্দিষ্ট মাত্রার নিচে নেমে যায় সেই অবস্থাকেই হাইপোটেনশন বা নিম্ন রক্তচাপ বলে। যাদের সাধারণত দাঁড়ানোর কয়েক মিনিটের মধ্যে রক্তচাপ মারাত্মকভাবে কমে যায় তারা অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনে ভোগেন।
লক্ষ্য করা গেছে যে ৬৫ বা তার বেশি বয়সী বয়স্ক পুরুষ এবং মহিলারা এতে বেশি ভোগেন। এর কারণ হলো, বয়স বাড়ার সাথে সাথে রক্তচাপ কমে যাওয়ার শরীরের প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতা ক্রমেই স্তিমিত হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তনালীর মধ্যে তরল ক্ষয়ের কারণেও অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন হতে পারে। ডায়রিয়া, ওষুধের ব্যবহার এবং বমির জন্য ডিহাইড্রেশনের ফলেও একজন মাথা ঘোরা এবং মাথা ভোঁ ভোঁ করতে পারে।
অন্যদিকে, রক্তাল্পতা বা রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কম হলেও তা অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের কারণ হতে পারে। এই অবস্থায় রক্তের প্রবাহে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কম থাকার কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে এবং কেউ কেউ অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন।
চিকিত্সকদের পরামর্শ, অবশ্যই নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। যদি কারো ডায়রিয়া বা বমির কারণে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায় তাহলে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও মদ থেকে দূরে থাকতে হবে এবং খাবারে বেশি লবণ ব্যবহার করাও কমাতে হবে।
সূত্র : নিউজ ১৮
ডায়াবেটিস যেভাবে কেড়ে নিতে পারে দৃষ্টিশক্তি
সব রোগই ভয়াবহ। তবে কোনো কোনো রোগ একটু বেশিই সমস্যা করে। চিকিৎসকেরা বলে থাকেন, ডায়াবেটিস রোগটি বড়ই ভয়ঙ্কর। আপনার অজান্তেই এই রোগ শরীরের অন্দরে নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে। এর প্রভাব পড়তে পারে চোখেও। বৃদ্ধ বয়সে অনেকেই চোখে ঝপসা দেখেন। সে ক্ষেত্রে মনে হতেই পারে হয়তো চোখে ছানি পড়েছে। সাবধান! আপনার ডায়াবেটিস থাকলে চোখের রেটিনা গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যা ডেকে আনে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির মতো অসুখ। তাই ডায়াবেটিসের চিকিৎসার সঙ্গে নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করাও জরুরি।
এই রোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে চোখের রেটিনার অংশে রক্তবাহী সরু ধমনীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে এক প্রকার ফ্লুইডের ক্ষরণ শুরু হয়। দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। এর পরবর্তী পর্যায়ে ধমনীতে রক্ত চলাচলের সমস্যা আরো বাড়ে। রেটিনার বিভিন্ন অংশে ঠিকমতো অক্সিজেন পৌঁছতে পারে না। চোখে রক্তক্ষরণ শুরু হয়, ডাক্তারি পরিভাষায় এই সমস্যাকে বলা হয় ভিট্রিয়াস হেমারেজ। এর থেকে চোখে অন্ধত্ব আসতে পারে।
কী কী লক্ষণ দেখা দেয়
* এ ক্ষেত্রে অনেক ডায়াবিটিস রোগীর ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়।
* এই সমস্যায় আক্রান্তদের কিছু পড়তে বা দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হয়। তাই হঠাৎ করে এমনটা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের নজরে আনুন।
* ডায়াবিটিক রেটিনোপ্যাথির সমস্যা বাড়তে শুরু করলে অনেকের রং দেখতেও সমস্যা হয়।
* চোখে স্বাভাবিক দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই চার দিকটা অন্ধকার দেখায়। আবার কেউ কেউ নির্দিষ্ট কোনো অংশ দেখতে পান না।
* চোখের সামনে পোকার মতো কিছু ঘুরে বেড়াচ্ছে মনে হওয়া বা আচমকা আলোর ঝলকানিও এই রোগের লক্ষণ।
কী করবেন?
এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। রোগ কতটা থাবা বসিয়েছে তা বিচার করেই চিকিৎসা শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে রেটিনা সার্জনরা সাধারণত বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাঞ্জিওগ্রাফি, চোখের স্ক্যান। লেজার থেরাপি, চোখের ইঞ্জেকশন বা স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দিয়ে দৃষ্টিশক্তি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।
চিকিৎসকদের মতে, যে সব ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তে, রেনাল প্রোফাইল (ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিন), রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেন, তাদের চোখের সমস্যা অনেক কম হয়। খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ আর এক্সারসাইজ করলে এগুলো ঠিক রাখা সম্ভব। সেই সাথে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করাতেও ভুলবেন না। সামান্য গাফিলতি বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা