রাশিয়া আর ইউক্রেন : কার সামরিক শক্তি কতটুকু
রাশিয়া আর ইউক্রেন : কার সামরিক শক্তি কতটুকু - ছবি : সংগৃহীত
সামরিক শক্তির বিচারে বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে রাশিয়ার অবস্থান দ্বিতীয় হলেও, ইউক্রেনের অবস্থান সেখানে ২২তম।
দুটি দেশের সৈন্য সংখ্যা, যুদ্ধবিমান, রণতরী বা সামরিক সরঞ্জামেও ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণকারী গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার সৈন্য সংখ্যা আট লাখ ৫০ হাজার, আর ইউক্রেনের সৈন্য সংখ্যা দুই লাখ। তবে উভয় দেশের রিজার্ভ সৈনিক রয়েছে আরো আড়াই লাখ।
রাশিয়া সামরিক খাতে প্রতি বছর ব্যয় করে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার, সেখানে ইউক্রেন তার ১৫ ভাগের প্রায় এক ভাগ খরচ করে- এক হাজার ১৮৭ কোটি ডলার।
রাশিয়ার আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আড়াই লাখ, তবে ইউক্রেনের রয়েছে মাত্র ৫০ হাজার।
ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান ৬৯টি হলেও রাশিয়ার রয়েছে ৭৭২টি। শুধুমাত্র আক্রমণকারী বিমান রাশিয়ার রয়েছে ৭৩৯টি, ইউক্রেনের মাত্র ২৯টি। ইউক্রেনের পরিবহন বিমান মাত্র ৩২টি হলেও রাশিয়ার রয়েছে ৪৪৫টি।
রাশিয়ার মোট হেলিকপ্টার রয়েছে ১,৫৪৩টি, যেখানে অ্যাটাক হেলিকপ্টার ৫৪৪টি। অন্যদিকে ইউক্রেনের হেলিকপ্টার রয়েছে ১১২টি, অ্যাটাক কপ্টার ৩৪টি।
সামরিক সরঞ্জাম
রাশিয়ার ট্যাঙ্ক রয়েছে ১২ হাজার ৪২০টি, ইউক্রেনের ২,৫৯৬টি। আমর্ড ভেহিকেল রাশিয়ার ৩০,১২২টি, ইউক্রেনের ১২,৩০৩টি। স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি রাশিয়ার আছে ৬,৫৭৪টি, ইউক্রেনের আছে ১,০৬৭টি।
রাশিয়ার মোবাইল রকেট প্রজেক্টর রয়েছে ৩,৩৯১টি, ইউক্রেনের আছে ৪৯০টি।
রাশিয়ার নৌ সামরিক যান ৬০৫টি থাকলেও ইউক্রেনের রয়েছে ৩৮টি।
রাশিয়ার একটি বিমানবাহী রণতরী থাকলেও ইউক্রেনের এরকম কোনো রণতরী নেই। তেমনি রাশিয়ার ৭০টি সাবমেরিন থাকলেও ইউক্রেনের কোনো সাবমেরিন নেই।
ইউক্রেনের কোনো ডেস্ট্রয়ার নেই, তবে রাশিয়ার রয়েছে ১৫টি। ইউক্রেনের একটি ফ্রিগেট থাকলেও রাশিয়ার রয়েছে ১১টি। মাইন ওয়ারফেয়ার নৌযান ইউক্রেনের একটা থাকলেও রাশিয়ার রয়েছে ৪৯টি।
রাশিয়ার করভেট রয়েছে ৮৬টি, যেখানে ইউক্রেনের আছে মাত্র একটি।
পেট্রোল ভেসেল রাশিয়ার রয়েছে ৫৯টি, ইউক্রেনের রয়েছে ১৩টি।
অন্যান্য সরঞ্জাম
রাশিয়ার যেখানে ১,২১৮টি বিমান বন্দর রয়েছে, ইউক্রেনের রয়েছে ১৮৭টি। বাণিজ্যিক জাহাজ রাশিয়ার ২,৮৭৩টি থাকলেও ইউক্রেনের আছে ৪০৯টি।
এর বাইরে রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, কিন্তু ইউক্রেনের এরকম কোনো অস্ত্র নেই।
রাশিয়ার এস-৪০০ নামের অত্যন্ত শক্তিশালী মিসাইল সিস্টেম রয়েছে, যা আকাশ প্রতিরক্ষায় খুবই কার্যকর, তবে ইউক্রেনের এরকম কোনো ব্যবস্থা নেই।
সূত্র : বিবিসি
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ বাইডেনের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার রুশ সরকারকে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন থেকে বিচ্ছিন্ন করেছেন, তাদের দুটি বৃহৎ ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। বাইডেন ঘোষণা করেন, পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার সৈন্যদের চলাচল 'আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।'
হোয়াইট হাউজ থেকে আমেরিকান জনগণের উদ্দেশে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে বাইডেন বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সোমবার দিনের শেষের দিকে পূর্ব ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে লুহানস্ক ও দনেটস্ক অঞ্চলে সেনা পাঠানোর আদেশ ছিল কার্যত 'ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের সূচনা।' ‘এর কয়েক ঘন্টা আগে, পুতিন ওই অঞ্চলগুলোকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করে বলেন, লুহানস্ক ও দনেটস্ক আর ইউক্রেনের অংশ নয়।
বাইডেন পুতিনকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞাসা করেন, 'পুতিন কী মনে করেন। প্রভুর নামে প্রতিবেশীদের ভূখণ্ডে নতুন তথাকথিত দেশ ঘোষণা করার অধিকার কে তাকে দিয়েছে?'
যুক্তরাষ্ট্রের নেতা বলেন, তার নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া সরকারকে 'পশ্চিম থেকে অর্থ সংগ্রহ' বন্ধ করে দেবে এবং তিনি সংকল্প ব্যক্ত করেন যে রাশিয়া 'যদি তার বাহিনী নিয়ে পশ্চিম ইউক্রেনের দিকে অগ্রসর হয়, তবে তাকে আরো বেশি মূল্য (আরো নিষেধাজ্ঞাসহ) দিতে হবে।'
অন্যদিকে সোমবার, ক্রেমলিনের একটি বক্তৃতায়, পুতিন ঘোষণা করেন, ইউক্রেন কখনই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল না এবং এটি পশ্চিমের 'পুতুল' নয়। ইউক্রেন বরাবরই বৃহত্তর রাশিয়ান প্রভাব বলয়ের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
পুতিন সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, 'তিনি সরাসরি ইউক্রেনের অস্তিত্বের উপর আক্রমণ করেছেন,' কূটনৈতিক পথ ধরে সংকট নিরসনের মধ্য দিয়ে একটি পরিপূর্ণ আক্রমণের মতো 'সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এড়ানোর সময় এখনও আছে।'
বাইডেন তার বক্তৃতার উপসংহারে বলেন, 'আমরা রাশিয়াকে তার কাজ দিয়ে বিচার করতে যাচ্ছি, কথা দিয়ে নয়।'
তবে মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, রাশিয়ান পক্ষ এখনো 'আলোচনার জন্য প্রস্তুত।'
সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা