যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ার নেতা বানাতে চায়?

বাইডেন ও মোদি - ছবি : সংগ্রহ
আমেরিকান কৌশলপত্রে বলা হয়, এমন একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা হবে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত একসাথে কাজ করবে আর আঞ্চলিক গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা উন্নীত করবে; স্বাস্থ্য, মহাশূন্য ও সাইবার স্পেস; অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি সহযোগিতা গভীরতর করার মতো নতুন ডোমেনে সহযোগিতা বাড়াবে। একই সাথে একটি মুক্ত এবং উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য কাজ করবে।
কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয়, ভারত দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরে সমমনা এক অংশীদার ও নেতা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সক্রিয় ও সংযুক্ত, কোয়াড ও অন্যান্য আঞ্চলিক ফোরামের একটি চালিকা শক্তি আর আঞ্চলিক বৃদ্ধি ও উন্নয়নের একটি ইঞ্জিন। যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রধান আঞ্চলিক গোষ্ঠী হিসাবে কোয়াডকে শক্তিশালী করবে এবং এটি নিশ্চিত করবে যে এটি ইন্দো-প্যাসিফিকের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সমর্থন করবে। কোভিড-১৯ এর প্রতিক্রিয়া এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোয়াড একটি নেতৃস্থানীয় আঞ্চলিক ভূমিকা পালন করবে, এই অঞ্চলে এবং বিশ্বকে অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য বিনিয়োগ করবে। কোয়াড একটি সবুজ শিপিং নেটওয়ার্ক তৈরি করবে, এবং সামুদ্রিক ডোমেন সচেতনতা ও জলবায়ু প্রতিক্রিয়া উন্নত করতে স্যাটেলাইট ডেটা ভাগ করে নেওয়ার সমন্বয় করবে। এর সদস্যরা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে উচ্চ-মানের অবকাঠামো প্রদানে সহযোগিতা করবে এবং তাদের সাইবার ক্ষমতা উন্নত করতে কাজ করবে। কোয়াড ফেলোশিপ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২২ সালে চালু হবে। কোয়াডের শীর্ষ ও মন্ত্রী পর্যায়ে নিয়মিত সম্মেলন হবে। শক্তিশালী ও একীভূত আসিয়ান সমর্থন ভারতের ক্রমাগত উত্থান ও আঞ্চলিক নেতৃত্বকে শক্তিশালী করবে। যুক্তরাষ্ট্র একটি ত্রিপক্ষীয় প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক কৌশলগুলিকে সমন্বয় করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার্মায় গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ানো অব্যাহত রাখবে, মিত্র ও অংশীদারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে বার্মার সামরিক বাহিনীকে গণতন্ত্রে ফিরে আসার জন্য চাপ দেবে। যুক্তরাষ্ট্র নিরাপদ ও বিশ্বস্ত ডিজিটাল অবকাঠামো, বিশেষ করে ক্লাউড এবং টেলিযোগাযোগ বিক্রেতা বৈচিত্র্যকে উন্নীত করবে।
আমেরিকান মূল্যায়ন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি সময়ে প্রবেশ করেছে যাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র বেশি সংশ্লিষ্ট হবে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাবশ্যক স্বার্থ যেমন আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ঠিক তেমনি সেগুলো রক্ষা করা আরো কঠিন হয়ে উঠেছে; ক্ষমতার রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক হুমকি মোকাবেলার মধ্যে বেছে নেওয়ার বিলাসিতা থাকবে না; কূটনীতি, নিরাপত্তা, অর্থনীতি, জলবায়ু, মহামারী প্রতিক্রিয়া এবং প্রযুক্তি বিষয়ে আমাদের নেতৃত্বের দায়িত্ব বাড়বে।
ইন্দো-প্যাসিফিকের ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্র কি পছন্দ করে তার ওপর। এই নির্ণায়ক দশক নির্ধারণ করবে যে এই অঞ্চলটি জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলা করতে পারে কিনা, এবং সিদ্ধান্ত নেবে যে উন্মুক্ততা, স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তির নীতিগুলোকে টিকিয়ে রাখা যাবে কিনা। অংশীদারদের সাথে যদি যুক্তরাষ্ট্র ২১ শতকের চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য এই অঞ্চলটিকে শক্তিশালী করতে পারে এবং এর সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে ইন্দো-প্যাসিফিক সমৃদ্ধ হবে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বকেও শক্তিশালী করবে।
কৌশলপত্রের অনুসিদ্ধান্তে বলা হয়, ‘আমরা যখন ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য যথেষ্ট প্রতিশ্রুতি এবং ঐতিহাসিক বাধা দূর করে এমন একটি সিদ্ধান্তমূলক দশকে প্রবেশ করছি, তখন এই অঞ্চলে আমেরিকান ভূমিকা অবশ্যই আরো বেশি কার্যকর এবং স্থায়ী হতে হবে।’
mrkmmb@gmail.com