রজব মাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল
রজব মাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল - ছবি : সংগ্রহ
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী চলাকালীন সময়েও একটি ফজিলতপূর্ণ মর্যাদাবান মাস ‘রজব’ আমাদের দান করেছেন। এটি চান্দ্রবর্ষের সপ্তম মাস। প্রাচুর্যময় সম্মানিত মাস। যা তার নাম এবং অর্থ থেকে সুস্পষ্ট বুঝে আসে। এ রজব মাসটি কতটা তাৎপর্যপূর্ণ তা উপলব্ধি করতে প্রিয় নবীর একটি হাদিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রজব মাসে (ইবাদত দ্বারা অন্তরের) জমিন চাষাবাদ করল না আর শাবান মাসে (ইবাদতের মাধ্যমে মনের) আগাছামুক্ত করল না, সে রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না।’ (বায়হাকি)
রজব মাসটি হলো- হারাম তথা যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি ও রক্তপাত নিষিদ্ধ মাসগুলোর একটি। রাসূল সা: বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার আসমান-জমিন সৃষ্টি করার দিন থেকেই ১২ মাসে বছর হয়। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত, তিনটি একাধারে জিলকদ, জিলহজ ও মুহররম এবং চতুর্থটি হলো রজব মুদার যা জমাদিউল আখিরা ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস। ( মুসলিম)
এ মাসটি হলো রমজানের আগমনি বার্তার মাস। যে মাস অনাগত রমজানুল মুবারকের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের পথ নির্দেশ করে। আগাম সফলতা অর্জনের ম্যাসেজ দেয়। লাভবান হওয়ার কথা বলে। এ জন্যই তো মহানবী সা:সহ সব সাহাবা কেরাম এ মাস আগমনের সময় তাকে স্বাগত জানাতেন। প্রাণভরে বরণ করতেন। মূল্যায়ন করতে একটুও কসুর করতেন না। যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করতেন। রাসূল সা: নিজে তুলনামূলক বেশি ইবাদতে মগ্ন হতেন এ মাসে এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করতেন।
এ মাসের রয়েছে অনেক ফজিলত যা হাদিসের ভাণ্ডারে লিপিবদ্ধ আছে। দোয়া কবুলের মাস রজবের প্রথম রাতে দোয়া কবুল হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা: সূত্রে বর্ণিত- তিনি বলেন, পাঁচটি রাত এমন রয়েছে যেগুলোতে বান্দার দোয়া আল্লাহ তায়ালা ফিরিয়ে দেন না। এক. জুমার রাত; দুই. রজবের প্রথম রাত; তিন. শাবানের ১৫ তারিখের রাত; চার. ঈদুল ফিতরের রাত ও পাঁচ. ঈদুল আজহার রাত।
আল্লাহর মাস : রাসূল সা: বলেছেন- ‘রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার মাস, রমজান হলো আমার উম্মতের মাস।’ (তিরমিজি)
প্রার্থনার মাস : এ মাসে রাসূল সা: একটি দোয়া বেশি পরিমাণে পাঠ করে আল্লাহর কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করতেন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছার আবেদন করতেন। হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত- যখন রজব মাস শুরু হতো রাসূল সা: এ দোয়াটি পাঠ করতেন- ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রমাদান’। অর্থ হলো- ‘হে আল্লাহ! রজব এবং শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত অবতরণ করো এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।’ (আলমুজামুল আওসাত-৩৯৩৯)
ফজিলতের মতো এ রজব মাসের বিশেষ বিশেষ কিছু আমলও আছে যেগুলো পালনে রাসূল সা: গুরুত্বারোপ করতেন।
নফল রোজা রাখা : উম্মে সালামা রা: থেকে বর্ণিত- হুজুর সা: রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে। হজরত আয়েশা রা: বলেন, যখন রজব মাস আসত, রাসূল সা:-এর আমলের আধিক্য দেখেই আমরা বুঝতে পারতাম। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সা: রজব মাসে ১০টি রোজা রাখতেন, শাবান মাসে ২০টি রোজা রাখতেন, রমজান মাসে ৩০টি রোজা রাখতেন। (দারেমি)
নফল নামাজ পড়া : হজরত সালমান ফারসি রা: থেকে বর্ণিত- রজব মাসের প্রথম তারিখে ১০ রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়। এমনভাবে যথাসাধ্য কুরআন তিলাওয়াত, দান সদকা ইত্যাদি ছোট ছোট আমলের প্রতি যত্নশীল হওয়া।
তবে আমাদের সমাজে প্রচলিত রজব মাসকে কেন্দ্র করে যত বাড়াবাড়ি, কুসংস্কার রয়েছে এগুলো থেকে অবশ্যম্ভাবী বিরত থাকতে হবে।
২৭ রজবে রোজা : অনেকেই মনে করেন এ তারিখে রোজা রাখা এক হাজার রোজার সমান। যাকে হাজারি রোজা বলে অভিহিত করা হয়। অথচ এ রোজার ব্যাপারে সহিহ ও গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ণনা নেই। আল্লামা ইবনুল জাওজি, হাফেজ জাহাবি, তাহের পাটনি, আল্লামা লখনবী রহ. প্রমুখ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস এ রোজার ফজিলতকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলেছেন। (কিতাবুল মাওদুয়াত-ইবনুল জাওজি-২/২০৮, তালখিসুল মাওদুয়াত-২০৯)
পশু জবাই করা : এ মাসে পশু জবাই করে খাবারের আয়োজন করা ইসলাম সমর্থিত নয়। ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগে মুশরিকদের মধ্যে স্বীয় দেবতা বা প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার একটি প্রচলন ছিল, যাকে আতিরা বলা হতো। রাসূল সা: এই প্রথার মূলোৎপাটন করেছেন এবং স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, ইসলামে ফারা (প্রথম উট বা বকরির প্রথম বাচ্চা প্রতিমার উদ্দেশ্যে) জবাই করার কোনো প্রথা নেই এবং আতিরাও (রজব মাসে প্রতিমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার প্রথা) নেই।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রজব মাসের সঠিক ফজিলত ও আমল জেনে-বুঝে সব প্রকার কুপ্রথা থেকে মুক্ত হয়ে সহিহ তরিকায় আমল করে আগত রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুক। আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক