তারা কেন দেশ ছাড়ছে?

রহমান মৃধা | Feb 22, 2022 02:32 pm
তারা কেন দেশ ছাড়ছে?

তারা কেন দেশ ছাড়ছে? - ছবি : সংগ্রহ

 

ইদানীং অনেকেই দেশ ছাড়ছে। যারা দেশ ছেড়ে বিদেশে যাচ্ছে এদের মধ্যে দুটি দল রয়েছে। একটি দলের দেশ ছাড়ার পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে সেটা জিজ্ঞাসা করলে তারা উত্তরে বলছে 'মূলত সন্তানের কথা বিবেচনা করে যেমন তাদের লেখাপড়া, জীবনের নিরাপত্তা এবং সুন্দর পরিবেশ পেতে দেশ ছেড়ে বিদেশে যেতে হচ্ছে, তবে আমরা দেশকে ভালোবাসি সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ইত্যাদি।' অন্যদিকে, আরেকটি দল দেশ ছাড়ছে কারণ দেশে কর্মসংস্থানের কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। হতাশা এবং বেকারত্বকে দূর করতে শেষে বাড়ির জমি যাতি যা আছে সেগুলো বিক্রি করে বা ধার নিয়ে কর্মের সুবাদে পরিবার, সন্তান বা বাবা-মা, ভাই-বোন রেখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে।

এই দুটি দলের একটি দল সুবিধাবাদী। আরেকটি দল সুবিধা বঞ্চিত। তবে তাদের গ্রহণযোগ্য যুক্তি রয়েছে, নিজ নিজ জায়গা থেকে। এখন আমি দুটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে চাই আমার ভাবনা থেকে। বেকারত্ব এবং পেটের তাগিদে প্রতিনিয়ত দেশ ছাড়ছে দেশের অনেক নতুন প্রজন্ম, যেতে যেতে পথে অনেকে ঝরে পড়ছে সাগর বা মহাসাগরের মাঝে। আবার অনেকে প্রতারকের কবলে পড়ে সব হারিয়ে রাস্তার ফকির হচ্ছে। কেউ কেউ কোনো এক দেশে সুযোগ পেয়ে সবকিছু ছেড়ে দূরপরবাসে কঠিন সময় পার করছে। অনেকে ভালোও আছে। এই দলের মানুষেরা দেশের অর্থনৈতিক খাতে তাদের অবদান রেখে চলছে। এরা সত্যিকারে বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রেখেছে।

পাশাপাশি অন্য যে দলটি দেশ ছাড়ছে তারা কিন্তু দেশের সকল সুবিধাগুলো পুরোপুরি ভোগ দখল করার পর দেশের সঞ্চিত অর্থ (হালাল বা হারাম তা জানিনে) নিয়ে দেশ ছাড়ছে এবং দেশের বাইরে বসবাস করছে। আজ যদি দেশের এসব সুবিধাবাদীরা দেশের অর্থ বিদেশে পাচার না করত, ঠিক মতো ট্যাক্স দিত এবং এভাবে দেশ না ছাড়ত, বরং তারা যদি বেকারত্ব এবং পেটের তাগিদে প্রতিনিয়ত যারা দেশ ছাড়ছে তাদের মত সঞ্চিত অর্থ দেশে পাঠাত তাহলে কাউকেই দেশ ছাড়া লাগত না।

আমার এই মন্তব্যে ঘাবড়ে গেলে চলবে না বরং আসুন জেনে নেই কী বোঝাতে চেয়েছি আমি। যে অজুহাত দেখিয়ে বড় লোকেরা দেশ ছাড়ছে যেমন নিরাপত্তার অভাব, সুশিক্ষার অভাব, সামাজিক ব্যবস্থা খারাপ ইত্যাদি- এর সব কিছুই রাষ্ট্র কিন্তু পারত গড়ে তুলতে যদি সততা, ন্যায় নিষ্ঠা এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ হতো। গত ৫০ বছরে যে সুযোগগুলো বাংলাদেশ পেয়েছে, তাতে সবার মহৎ প্রচেষ্টা থাকলে কাউকেই দেশ ছাড়া লাগত না। তবে জ্ঞান অর্জনে ভালো চাকরির সুবাদে অবশ্যই দেশের মানুষ অন্য দেশে যাবে যেটা পশ্চাত্যের মানুষেরাও করে। কিন্তু দেশের অর্থ বিদেশে নিয়ে বেগমপাড়া বা বিলাস বহুল প্রাসাদ গড়া বাঙালি জাতি, এরা কখনো দেশকে ভালোবাসেনি, এরা জাতির কাছে রাজাকারই থেকে যাবে। কুকিলের মতো এরা শুধু বসন্তের সৌন্দর্যই উপলব্ধি করে গেল। এরা জন্মেছে সোনার চামচ মুখে দিয়ে এবং যাবার বেলা সময় সুযোগ মতো বসন্ত শেষে সব কিছু নিয়ে চলে চলে গেল, অভাগা দেশের কোনো উন্নতি হলো না।

এই না হবার পেছনে যে কারণগুলো জড়িত তা নিম্নরূপ বলে আমি মনে করি। কারণ একটি দেশ ধ্বংস করতে রাষ্ট্রের প্রশাসন, ঘুমন্ত জনগণ এবং তেলবাজ সাংবাদিকই যথেষ্ট।

যেমন শিক্ষা অর্জন করার পরও যদি আমাদের নৈতিকতা, বিবেক, মূল্যবোধ না থাকে। যদি সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাকে মিঁথ্যা বলার হিম্মত হারিয়ে ফেলি তবে আমরা সমাজের আবর্জনা ছাড়া কিছুই না এবং আমাদের পুরো শিক্ষাই কু-শিক্ষা। যে দেশে সবাই দুর্নীতি করে সে দেশে থেকে ভালো কিছু আশা করাও বোকামি। আমরা বলি আমাদের সবার বাবা-মা ভালো, তাহলে দুর্নীতিগুলো করে কাদের বাবা-মা? রাজনীতি করা মানে জনগণের জন্য কাজ করা আর চাকুরী করা মানে জনগণের সেবা দেওয়া। চাকরিতে দরকার সু-শিক্ষা এবং সুদক্ষের, রাজনীতিতে দরকার জনদরদির, আর আইনে দরকার ন্যায়বিচার, আছে কি সেটা? যেমন বলা হচ্ছে, মেয়েদের ধর্ষণ থেকে রেহাই পাবার একমাত্র উপায় ঘর থেকে না বের হওয়া। কিন্তু কঠিনভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে না পুরুষদের একাজ করতে।

যেদিন রাজনীতিতে দুর্নীতি বন্ধ হবে সেদিন দেখবেন দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ রাজনীতি ছেড়ে কাজে যোগ দিবে এবং যেদিন দেশে ন্যায় বিচারের প্রশাসন চালু হবে সেদিন থেকে দেশের পরিকাঠামো যেমন মজবুত হবে সেই সাথে দেশের মানুষ 'শান্তিতে' থাকতে পারবে।

লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

rahman.mridha@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us