নিশ্চিহ্ন ফ্রিডম কনভয়, কানাডার ‘গৃহযুদ্ধে’ জয় ট্রুডোর, হার ‘স্বাধীনতাকামীদের'
নিশ্চিহ্ন ফ্রিডম কনভয়, কানাডার ‘গৃহযুদ্ধে’ জয় ট্রুডোর, হার ‘স্বাধীনতাকামীদের' - ছবি : সংগ্রহ
কানাডায় দীর্ঘদিন ধরে চলা কোভিডবিধিবিরোধী বিক্ষোভ খতম করল পুলিশ। রাজধানী অটোয়াকে ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাল পুলিশ। ‘ফ্রিডম কনভয়কে’ পুরোপুরি ছত্রভঙ্গ করে রোববার অটোয়ার রাজপথ থেকে ট্রাকারদের পুরোপুরি সরাতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। আর এর জেরে কোভিডবিধি থেকে ‘স্বাধীনতা’র দাবি তোলা ট্রাকারদের দাবি না মানার অবস্থানে দাঁড়িয়ে থেকেই পরিস্থিতি নিযন্ত্রণে আনল জাস্টিন ট্রুডোর সরকার।
শহরকে পুরোনো চেহারায় ফেরাতে শনিবারই ধরপাকড় শুরু করেছিল পুলিশ। পুলিশের রণংদেহী মূর্তির সামনে পড়ে অবরোধ সরাতে শুরু করেছিল বিক্ষোভকারীরাও। রোববার শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি পরিষ্কার করে ফেলা হয় শহরের রাজপথ। তবে এই অভিযান এখনই শেষ হচ্ছে না বলে জানালেন অটোয়ার অন্তর্বর্তীকালীন পুলিশ প্রধান স্টিভ বেল। তিনি বলেন, ‘আবার যাতে কেউ শহরের রাস্তা দখল করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখছি আমরা।’
উল্লেখ্য, টানা ২৪ দিন ধরে কোভিডবিধির প্রতিবাদে কানাডাকে উত্তাল করে তুলেছিল ওই দেশের ট্রাকারদের একাংশ। এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এরপরই শনিবার রাস্তায় পুলিশের রণংদেহী মূর্তি দেখা যায়। বিক্ষোভকারীদের পুরোদস্তুর ধাক্কা দিয়ে, টেনে হিঁচড়ে সরিয়ে দেয় কানাডা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় ১৭০ জনকে। অটোয়ায় পার্লামেন্ট হিলের সামনে রাখা ট্রাকগুলোকে সরানো হয়েছে।
ট্রাক চালকদের জন্য টিকাকরণ বাধ্যতামূলক করতেই 'ফ্রিডম কনভয়' নামে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। বিক্ষোভকারী ট্রাক চালকরা রাজধানীর রাস্তা অচল করে দিনরাত হর্ন এবং সাইরেন বাজিয়ে চলেছেন। টিকা এবং লকডাউনবিরোধী আরও কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ট্রাক চালকদের সঙ্গে রাস্তায় নেমেছেন। বিক্ষোভকারীরা কানাডার পার্লামেন্ট ভবনের চারপাশের রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং তার পরিবার রাজধানী ছেড়ে অজানা স্থানে চলে যেতে হয়েছিল। এই আবহে জরুরি অবস্থা জারি করে এই বিক্ষোভ বন্ধের জন্য কঠোর পদক্ষেপ করে কানাডার সরকার। এরপরই রাজপথে পুলিশ নেমে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।
কোভিড হলেও আর আইসোলেশনের দরকার নেই, নতুন নির্দেশিকা জারি হল এই দেশে
এখনই কোভিড শেষ হবে না। কিন্তু তার জন্য স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও থেমে যেতে পারবে না। ফলে আর দরকার নেই আইসোলেশনের। এমনই সিদ্ধান্ত নিল এই দেশ। বলে দেয়া হলো, সতর্ক থাকতে হবে ঠিকই, কিন্তু অতিরিক্ত গুরুত্বও দেয়া যাবে না কোভিডকে।
কোভিড সম্পর্কে নিজেদের নীতি এভাবেই বদলে ফেলল ইংল্যান্ড। ওই দেশের সরকার ঘোষণা করেছে, এবার কোভিডের সঙ্গেই বসবাস করতে হবে দেশবাসীকে। আগামী সপ্তাহ থেকে আর কোভিডের কারণে আইসোলেশন থাকতে হবে না। তেমনই জানাল সরকার।
ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, দেশবাসীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। তার কথায়, স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত না করে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। রবিবার এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলছি না, আমাদের সতর্ক থাকা উচিত নয়। তবে এখন সকলের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার মুহূর্ত এসে গিয়েছে। আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবে অতি দ্রুত।’ তার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে তুলে নেওয়া হল এই আইসোলেশন।
যদিও সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকরা। তাদের কথায়, এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি সংক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য আরো মারাত্মক ধরনের করোনার রূপেরও জন্ম দিতে পারে। এর ফলে স্বাস্থ্যব্যবস্থা তো বটেই দেশের অর্থনীতিও মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-ও জানিয়েছে, করোনার আরও বিপজ্জনক এবং আরও সংক্রামক রূপের উঠে আসার জন্য এটাই আদর্শ সময়। হু-প্রধান বলেছেন, ‘করোনার আরও বিপজ্জনক এবং সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার জন্য আদর্শ সময় এটি। দু’বছর আগে যখন করোনা নিয়ে প্রথম আলোচনা শুরু হয়, তখন হয়তো অনেকে ভাবতেই পারেননি অতিমারি এক সময়ে তৃতীয় বছরে পা দেবে। শুধু সেটিই নয় তৃতীয় বছরে এসেও জীবাণুটি বারবার নিজের রূপ বদলাচ্ছে। এখন সতর্ক থাকা উচিত বলেই মত তার।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস