আমিরাতে চীন-যুক্তরাষ্ট্রে লড়াই

মো: বজলুর রশীদ | Feb 17, 2022 04:10 pm
আমিরাতে চীন-যুক্তরাষ্ট্রে লড়াই

আমিরাতে চীন-যুক্তরাষ্ট্রে লড়াই - আমিরাতে চীন-যুক্তরাষ্ট্রে লড়াই

 

সংযুক্ত আরব আমিরাত তার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পঞ্চাশ বছরের ঝলমলে উন্নয়ন এবং আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরছে। এ উপলক্ষে এক্সপো ২০২০ নামে সিরিজ ইভেন্ট এবং প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এক্সপো গত বছর ২১ অক্টোবর শুরু হয়েছিল এবং এ বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত চলবে; এই গ্লোবাল গালা প্যাভিলিয়নগুলোতে তাদের সংস্কৃতি, সৃজনশীলতা এবং শ্রেষ্ঠত্বের সেরা প্রতীকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এই কনক্লেভের অত্যাশ্চর্য দিক, যা দাবি করা হয় যে বিশ্বের সেরাকে এক জায়গায় নিয়ে আসা, তা হলো অলৌকিক ঘটনা এবং বিস্ময়, যা ভূমি, মানুষ এবং নয়টি রাজ্যের মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে। এটি গঠনের আগে, তাদের জীবন প্রধানত মরুভূমিতে যাযাবর আচার-অনুষ্ঠান, সমুদ্রে মাছ ধরা এবং কিছু মূল্যবান পাথরের ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। উন্নত জীবন ও চিকিৎসা সুযোগ ছিল কল্পানার বাইরে, দারিদ্র্য ছিল নিত্য সহচর।

মাথাপিছু আয়, মানব উন্নয়ন সূচকে যেটি ৬২তম স্থানে ছিল, সেটি এখন ৩৫তম স্থানে উঠে এসেছে। পাকিস্তান এখনো ১৫৪তম স্লটে ক্রলিং করছে, ভারত ১৩১ ও বাংলাদেশ ১৩৩ তম স্থানে রয়েছে। আমিরাতের এই স্কোর আপেক্ষিক পরিবর্তন এবং উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্পর্কে বেশ স্পষ্ট ধারণা দেয়। এখন মরুভূমির এই দেশটির ভূমি ও আকাশসীমার পুরো চেহারাই বদলে গেছে।

পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের পরিকল্পনাগুলো আরো ভালো স্বাস্থ্য সুবিধা, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, টেকসই উন্নয়ন এবং অনুপ্রেরণাদায়ক এবং প্রজ্ঞাময় নেতৃত্বের সাথে বিশ্বের সেরা, সবচেয়ে দক্ষ সরকারকে বিকশিত করতে পারে। উন্নত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গবেষণা এবং উদ্ভাবনে বিশেষ করে স্বাস্থ্য, মহাকাশ বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক্স, হাইড্রোজেন ফুয়েল এবং অন্বেষণ ও উদ্ভাবনে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। আমিরাত নিজেকে আবিষ্কার এবং নকশার ইনকিউবেটর করে তুলতে চায় এবং তাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে চায়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সামাজিক সংহতি বাড়াতে আমিরাতি নীতি ও মূল্যবোধ লালন করাও একইভাবে তাদের প্রত্যাশিত।
জাতিসঙ্ঘ নির্ধারিত ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য সমন্বিত এজেন্ডা ২০৩০ অর্জন করা অভীষ্ট এটা সবার জানা। এসব লক্ষ্যের অনেকগুলোই ইতোমধ্যে অর্জন করেছে দেশটি।

সহনশীলতা এবং সহাবস্থানের বৈশ্বিক মরুদ্যান হিসাবে আমিরাতের বিশিষ্টতা এক অনন্য মডেল। আজ সৌদি আরব, ভারত, মিসর, তুরস্ক, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ অনেক দেশ আমিরাতের সাথে সুসম্পর্ক গড়তে চায়। দেশটি মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার অন্যতম প্রাচীন এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র। কয়েক দশক ধরে আমিরাতের অভিজাতরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষিত হয়েছে। দেশটি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের আমেরিকান অস্ত্র কিনেছে এবং তাদের সশস্ত্র বাহিনীকে আমেরিকা প্রশিক্ষিত করেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বেশ চাপে পড়েছে।
চীনের বিস্ময়কর উত্থান এবং আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অংশে ক্রমবর্ধমান প্রসার আমেরিকার প্রাধান্যকে বড় চ্যালেঞ্জে ফেলেছে। মিসর ও সিরিয়ার সাথে জোট করে রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করলেও তা অনেকটাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত। রাশিয়া সিরিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করলেও চীন আমিরাতভিত্তিক অঞ্চলে মার্কিন প্রাধান্যের জন্য অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

গত এক দশকে, চীন-আমিরাত সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ পরিলক্ষিত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে লাভজনক এবং পরিপূরক ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সম্পর্ক একটি ক্রমবর্ধমান কৌশলগত অংশীদারিত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে। দেখা যায়, ২০২১ সালে আমিরাত-চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য একই সময়ে আমিরাত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ২০২১ সালের প্রথম নয় মাসে কোভিড মহামারী সত্ত্বেও, আমিরাত ও চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৮.১ শতাংশ বেশি। চীন প্রাথমিকভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অপরিশোধিত তেল এবং সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানি করে এবং যন্ত্রপাতি, নির্মাণসামগ্রী এবং টেক্সটাইল রফতানি করে। একই সময়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ১৭.১ বিলিয়ন ডলার, যা চীনের অর্ধেকেরও কম।

চীনা কোম্পানিগুলো অবকাঠামো খাতে বড় বড় প্রকল্প জিতেছে যেমন দুবাই এক্সপোর ২০২০’র জন্য একটি লজিস্টিক সেন্টার তৈরি করতে চীনা পাইকারি কোম্পানি ইয়ু ২.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে। ২০১৯ সালে চীনা কোম্পানি ইস্ট হোপ গ্রুপ ঘোষণা করেছে যে তারা আবুধাবির খলিফা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে।

পারস্পরিকভাবে লাভজনক অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের পথ প্রশস্ত করেছে এমন একটি সময়ে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা চীনের মানবাধিকারের রেকর্ড নিয়ে কঠোর সমালোচনা করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি হংকং এবং তাইওয়ানের মতো ইস্যুতে চীনের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে।
জিনজিয়াং ইস্যুতে আবুধাবির সমর্থনকে চীন বিশেষভাবে প্রশংসা করেছে। আমিরাত একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলিম দেশ। জিনজিয়াংয়ের জাতিগত উইঘুররাও সুন্নি মুসলমান, যাদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের জন্য পশ্চিমারা চীনকে অভিযুক্ত করছে। সুতরাং, বর্তমান সময়ে একটি মধ্যপন্থী এবং সমৃদ্ধ মুসলিম জাতির সমর্থন চীনের জন্য খুবই প্রয়োজন ও মূল্যবান। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানবাধিকার রেকর্ডও মাঝে মাঝে পশ্চিমাদের সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে। এসব রাজনৈতিক উৎপীড়নে আমিরাত চীনকে মিত্র হিসাবে দেখছে।

ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক কর্মকর্তারা সামরিক শিক্ষার জন্য এখন পশ্চিমের চেয়ে বেশি পরিমাণে চীনে যেতে শুরু করেছে। দুই দেশ গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো বাড়িয়েছে।

২০২১ সালের নভেম্বরে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা সংস্থা এজ, আবুধাবিতে বিমান সরবরাহের জন্য প্রথম আঞ্চলিক বিতরণহাব তৈরি করতে চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি চায়না ন্যাশনাল অ্যারো-টেকনোলজি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কো-অপারেশনের সাথে যৌথ উদ্যোগ কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। চুক্তির অধীনে, উভয়পক্ষ বিভিন্ন সামরিক প্রকল্পে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তির উন্নয়নে অচিরেই কাজ করবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত পশ্চিমের পরিবর্তে চীন থেকে প্রচুর সশস্ত্র ড্রোন কিনেছে।

বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সামরিক খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে চীনকে প্রতিস্থাপন করায় ওয়াশিংটন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। বেইজিংয়ের সাথে আবুধাবির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক ওয়াশিংটনে বিপদের ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। অর্থনৈতিক ফ্রন্টে চীনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পেরে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মন্থর করতে আমিরাতের ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে। যেমন, ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রকাশ পায় যে, আমিরাতে চীনের একটি বন্দর সুবিধা নির্মাণ বন্ধ করে দেয় এজন্য যে, ওয়াশিংটন অভিযোগ করেছে যে সুবিধাটি সামরিক উদ্দেশ্যে ছিল।

যদিও আবুধাবি বন্দর সুবিধার ওপর মার্কিন চাপে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, সেটি ওই অঞ্চলে আমেরিকান নৌ শ্রেষ্ঠত্বের জন্য। ইরানকে বাগে আনা গেলে বা ইরান-আমিরাত সম্পর্ক হয়ে গেলে বন্দর সুবিধা সৃষ্টির বিষয়টি নতুন পরিস্থিতিতে পরিবর্তন হবে। অন্যান্য অনেক দেশের মতো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতে হুয়াওয়ের উপস্থিতির বিষয়টিও উত্থাপন করেছে। মার্কিন সরকার দাবি করেছে যে আমিরাত সরকারের হুয়াওয়ে পণ্য ব্যবহার আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সম্পর্কের জন্য হুমকি হতে পারে। চীন থেকে ড্রোন সংগ্রহের পর আবুধাবিকে চাপ দেওয়ার জন্য, ওয়াশিংটন ড্রোন এবং স্টিলথ ফাইটারের মতো সংবেদনশীল প্রযুক্তি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। আরো জানা যায়, আমিরাত গোয়েন্দা সূত্রে ইসরাইল থেকে স্টিলথ ফাইটার প্রযুক্তির খুঁটিনাটি সংগ্রহ করেছে। সম্প্রতি অনেক ইহুদিকে আমিরাতে পিআর বা স্থায়ী বাসিন্দার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

জবরদস্তিমূলক কূটনীতির কৌশলগুলো মার্কিন সহায়তার ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল ছোট দেশগুলোতে কাজ করলেও আরব আমিরাতের মতো একটি ধনী এবং উন্নত জাতির বিরুদ্ধে এর উপযোগিতা অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ। পানামায়, মার্কিন চাপের কারণে সেই দেশ এবং চীনের মধ্যে স্বাক্ষরিত বহু বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো প্রকল্প বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু সমৃদ্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বেলায় ওয়াশিংটনের এই কৌশল কাজ করবে না।

সশস্ত্র ড্রোন বিক্রি করতে ওয়াশিংটনের অস্বীকৃতিতে আরব আমিরাত হতবাক হয়ে পড়েছিল। সাথে সাথে আমিরাত চীন থেকে আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন সংগ্রহ করে। আজ চীনে বিশ্বের অন্যতম উন্নত ড্রোন শিল্প রয়েছে এবং কিছু সামরিক ড্রোন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত ড্রোনের থেকেও উন্নত। চাইনিজ ড্রোনগুলো সস্তাও। তুরস্ককে এফ-৩৫ সরবরাহ না করায় যেমন দেশটি মস্কোর দিকে ঝুঁকে পড়ে এস-৪০০ সংগ্রহ করেছিল, এটিও তেমন একটি বিষয়। তুরস্কের মোচড় দেয়া থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন পর্ব থেকে তার পাঠ শিখতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ক্ষতের উপশম না করে বাইডেন প্রশাসন কাতারকে বিশেষ বন্ধু হিসাবে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং বলেছে ন্যাটো জোটের বাইরে কাতার বিশেষ বন্ধু।
আরব আমিরাতের বিমানবাহিনী ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫০টি এফ ৩৫ ক্রয় করতে চায়। তবে, চীন এবং হুয়াওয়ের সাথে আমিরাতের সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ওয়াশিংটন যদিও এই উদ্বেগগুলিকে বৈধ বলে মনে করতে পারে, সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ এটিকে ‘অহংকারী অনুপ্রবেশ’ এবং তার ‘সার্বভৌমত্বের প্রতি অসম্মানজনক’ বলে মন্তব্য করেছে। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বেশ কয়েকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর, আবুধাবি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঘোষণা দেয় যে, এফ ৩৫ চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে।

আমিরাতের ঘটনাটি প্রমাণ করে যে বেইজিংয়ের সম্প্রসারণ মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর নিছক জবরদস্তি এবং হুমকির ওপর নির্ভর করতে পারছে না। চীন কোনো সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়। অতএব, পুরোনো স্নায়ুযুদ্ধের জবরদস্তিমূলক কৌশল এখন আর কাজ করবে না। সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে অস্ত্র এবং নিম্নমানের ভোগ্যপণ্য ছাড়া মিত্রদের অফার করার মতো তেমন কিছু নেই। সোভিয়েত ইউনিয়ন শুধু সেইসব দেশকে সহায়তা দিয়েছিল যারা তার মতাদর্শ ভাগ করে নিয়েছে বা পশ্চিমাবিরোধী ছিল। চীনা কোম্পানিগুলো মতাদর্শ বা রাজনৈতিক ব্যবস্থা নির্বিশেষে পশ্চিমে এবং পূর্বে, উত্তর ও দক্ষিণে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বিআরআই-এর মতো বিশাল বিশ্বব্যাপী পরিকল্পনা ও বিনিয়োগে পশ্চিমারা মাথায় হাত দিয়ে বসেছে। বাইডেন প্রশাসন এ পর্যন্ত চারটি অর্থনৈতিক জোট শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে যেগুলে ফল দিতে দিতে এক যুগের বেশি সময় লাগতে পারে। চীন তার কর্মসূচি ১৫ বছর আগে শুরু করে বিশ্ব জোট করার প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে। পশ্চিমাদের ফসল ঘরে তোলার সময় হলে দেখা যাবে ওসব জোট আর হালে পানি পাচ্ছে না।

চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মার্কিন মিত্রদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে চীন কোনো দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা না করার জন্য চাপ দিচ্ছে না। চীন বরং তার নিজের খেলায় যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করছে। আমেরিকানরা নিজেদের পুঁজিবাদের মডেল হিসাবে প্রচারে গর্ববোধ করে, ফলে যারা বড় প্রস্তাব দেয় তারা চুক্তি পায়। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরো ভালো চুক্তি এবং কম হুমকির নীতি প্রয়োগ করতে হবে। ইন্দোনেশিয়ার জনৈক মন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ হলো, ‘পশ্চিমাদের গাজর অথবা লাঠি’ নীতি রয়েছে, কিন্তু আমেরিকানদের সমস্যা হলো তারা অনেক বেশি লাঠির ব্যবহার করে এবং খুব কম গাজর দেয়।’

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us