কচু খেতে নয়, দিতে মানা
কচু খেতে নয়, দিতে মানা - ছবি : সংগ্রহ
ও সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী
লাউয়ের আগা খাইলাম, ডোগা গো খাইলাম
লাউ দি বানাইলাম ডুগডুগি, লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী...।
লাউ শীতের সবজি হলেও এখন সারা বছরই ফলে। এই সবজি পুষ্টিগুণে ভরপুর। লাউ খুবই সুস্বাদু সবজি। যেভাবেই খাই না কেন, লাউ শরীরের জন্য বেশ উপকারী। নিয়মিত লাউ খেলে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়। লাউ রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে, যা হার্টের জন্য উপকারী। লাউ পাতার তরকারি মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রাখে, ঘুমে সমস্যার সমাধান করে ও দেহের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে।
তবে লাউয়ের চেয়ে জনপ্রিয় আরেকটি সবজি রয়েছে সেটা হলো কচু। কচুর মুখি, কচুর লতি, কচুর ডাগো, কচুর পাতা সবই খাওয়া যায়। গ্রামের বাড়ির আনাচকানাচে ও রাস্তার পাশে অনেক জায়গায় কচু জন্মে। কিছু কচু আছে, যেগুলো বনজঙ্গলে জন্মে থাকে, এগুলো বুনো কচু নামে পরিচিত। কচুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। তবে অনেকেই মনে করেন, কচু খাওয়া বেশ ঝামেলার কাজ, তাই অন্য সব সবজি খেলেও কচু এড়িয়ে চলেন। আগাগোড়া খাওয়া যায় এই সবজির পুষ্টিগুণ অবাক করার মতো। কচুর মূল উপাদান হলো আয়রন (Fe), যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রেখে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখে।
লাউ এবং কচু দুটিই মজাদার খাবার। সব ধরণের মাছ দিয়ে এ সবজিগুলো খেতে খুবই মজা। আমি সুইডেনে সামারে নানা ধরণের সবজির চাষ করতে শুরু করেছি। গত বছর লাউ এবং কচু চাষ ছিল বেশ আনন্দের। কচুমুখি মাটিতে লাগানোর পর কচু, কচুর লতি এবং পাতা সবই খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেছি। কচুর কোনো অংশই ফেলনা নয়, কচুর মূল থেকে শুরু করে, কচুর কাণ্ড, পাতা, ফুল, লতি- সবকিছুই খাওয়ার উপযুক্ত। কচুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। তবে অনেকেই মনে করেন, কচু খাওয়া বেশ ঝামেলার কাজ, তাই অন্য সব সবজি খেলেও কচু এড়িয়ে চলেন। আগাগোড়া খাওয়া যায় এই সবজির পুষ্টিগুণ অবাক করার মতো। কচু নিয়ে কিছু মজার ঘটনা রয়েছে যা আমি শেয়ার করব। আমাদের রাষ্ট্রপতি বলেছেন, দেশের সব খাবারে, ভেজাল শুধু কচু ছাড়া। তবে কচু এমন একটি সবজি যা ভুল বোঝাবুঝি থেকে শুরু করে ঝগড়াঝাটি পর্যন্ত বাধাতে সাহায্য করে।
দুটি ঘটনা দিয়ে লিখাটি শেষ করি। মানুষ জাতির চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট সেটা হলো, আমরা একে অপরকে যখন ছোট করতে চাই, তখন পশু পক্ষীর সাথে তুলনা করি। যেমন বলি, শূকরের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা, গাধা ইত্যাদি। মজার ব্যপার যদি কেউ কাউকে বাঘের বাচ্চা বলে সেটা প্রসংসনীয় কিন্তু শূকরের বা কুত্তার বাচ্চা বললেই লেগে গেল মারামারি- কাটাকাটি।
একবার আমাদের সুইডেনে এক বাংলাদেশের একটি ছেলের সাথে আমার দেখা। ছেলেটি আমার ছেলের বয়সী (৩ বছর)। আমি ছেলেটিকে জিজ্ঞাস করলাম তোমার বাবার নাম কী? ছেলেটি উত্তরে বলল, শূকরের বাচ্চা। আমি তো হতভম্ভ! ছেলে বলে কী? আমি বললাম, এই ছেলে তোমার বাবার নাম শূকরের বাচ্ছা কিভাবে জানলে? সে বলল, কেন আম্মু তো ওই নামেই ডাকে আব্বুকে বাসায়। পরে জানতে পেরেছিলাম, ভদ্রলোকের স্ত্রী ভদ্রলোককে ঝগড়া বাদলেই শূকরের বাচ্চা বলে গালি দিত। ছেলেটি মনে করেছে, ওটাই তার বাবার নাম।
এটা একটি বিষয়, আরেকটি বিষয় যেটা ঘটেছে আমার সঙ্গে আমার বন্ধুর স্ত্রীর। বন্ধু থাকে লন্ডনে তার বউ ব্রিটিশ বাংলাদেশী। গত সামারে আমার খেতে লাউ ও কচু হয়েছিল। তারা আসবে বেড়াতে প্লান করে। মাঝে মধ্যে কথা হয়। একদিন সন্ধ্যায় ফোন করেছি, ভাবি ফোন ধরেছে। কিছুক্ষণ কথা বলতেই ভাবি বললেন, বন্ধু বাসায় নেই। টেলিফোনে কথা বলার শেষ পর্বে বললাম ,ভাবি এলে মজা করা যাবে, তার পর যাবার সময় সুইডেনের কচু দেব, নিয়ে যেতে পারবেন। ভাবি এ কথা শোনার পর কেমন যেন একটু বিভ্রান্তি বোধ করে টেলিফোনটা রেখে দিলো। কিছুক্ষণ পর বন্ধু ফোন করে আমারে জানল, তোর ভাবি তো তোর পর ভালোমতো খেপেছে। আমাকে বলে যে তোমার বন্ধু খুব খারাপ, ওখানে যাওয়া যাবে না। আমি বললাম, কেন কী হয়েছে। সে উত্তরে বলল, আমাকে বলে সুইডেন এলে কচু দেব!
বন্ধু এটা শোনার পর প্রথমে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা করে ফেলে, পরে ভাবিকে ঘটনা খুলে বলে যে আমি শাকসব্জির চাষ করেছি, সেখানে কচু আবাদ করেছে, সেটা আমাদের দেবে গেলে তাই বলেছে। আমি তো ভুলেই গেছি যে ছোট বেলা গ্রামে থাকতে প্রতিবেশীদের মধ্যে ঝগড়া হলে একে অপরকে কচু দিত।
ফেব্রুয়ারি মাস ভাষা আন্দোলনের মাস, ভাষা রক্ষার মাস, ভাষা চর্চার মাস। শত সমস্যা সত্ত্বেও মাতৃভাষার মধ্য দিয়ে সব কিছুর সমাধান করব- এমন প্রত্যাশা প্রত্যাশিত।
লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন
rahman.mridha@gmail.com