ভারতে হিজাববিরোধী স্লোগান : শুদ্ধি অভিযানের অংশ?
ভারতে হিজাববিরোধী স্লোগান - ছবি : সংগ্রহ
কর্নাটকের এ ঘটনার আগে একটি কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালানোর জন্য উগ্রপন্থী হিন্দুদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মঞ্চ থেকে একজন উগ্রবাদী হিন্দু পুরোহিত নেতাকে বলতে শোনা যায় মিয়ানমারের মতো অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে তাদের হত্যা করে এই ভূমিকে মুসলিমমুক্ত করতে হবে। এ বিষয়টিকে সামনে রেখে দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হলে প্রশাসন লোক দেখানো কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
কিন্তু এর পরও মুসলিমবিরোধী এজেন্ডা একের পর এক সামনে আসছে। হিজাবের বিষয়টি একটি বৃহত্তর পরিকল্পনা অংশ কিনা তা নিয়েই এখন উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মাত্রাটি কিছুটা বেশি। ভারতের বিরোধী কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী হিজাব ইস্যুর গভীরতা উপলব্ধি করেই এটি ভারতকে অনৈক্য ও বিভক্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। একই ধরনের আশঙ্কা আরো তির্যকভাবে ব্যক্ত করেছেন বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের প্রতিষ্ঠাতা লালু প্রসাদ যাদব। তিনি বলেছেন, বহুত্ববাদিতাকে ভেঙে দেবার এই কার্যক্রম ভারতকে ভৌগোলিকভাবে খণ্ড বিখণ্ড করবে। ভারতের সামরিক বাহিনীর সাবেক শীর্ষ পর্যায়ের জেনারেল এডমিরাল এয়ার কমোডররাও একই ধরনের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।
প্রশ্ন হলো ভারতীয় রাজনীতির নতুন উন্নয়নে গভীর বিষয়টি কী যার জন্য দেশের সংহতি বিপন্ন হবার ব্যাপারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উত্তর প্রদেশের চলমান নির্বাচন এর একটি কারণ হতে পারে। লোক সভা বা রাজ্য সভার নির্বাচনের আগে বিজেপির কৌশল হলো পাকিস্তান হুমকি এবং হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়গত ইস্যু চাঙ্গা করে দেয়া। এটি হলে সংখ্যাগুরু ভোটারদের ভোট বিজেপির পক্ষে পড়বে বলে ধারণা করা হয়। হিজাব ইস্যুটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতির সাথে এর যোগসূত্র থাকতে পারে।
এর বাইরে আরেক কারণ হতে পারে আরএসএস ডক্ট্রিন। ১৯৪৭ সালে ভারতের বিভক্তির সময় পাকিস্তান যেখানে সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আলাদা বাসভূমি চেয়েছে, সেখানে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্লোগান ছিল বিশ্বাস ও সংস্কৃতির বহুত্ববাদ ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদ। অর্থাৎ ভারত প্রতিষ্ঠা হবে সব ধর্ম বিশ্বাস সংস্কৃতি ও জাতিগোষ্ঠীর এক রাষ্ট্র হিসাবে। প্রকাশ্যভাবে ঘোষিত এই ধ্যান ধারণার সাথে যারা দেশটির নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের লালিত মতবাদের বাস্তব প্রতিফলন কতটা ছিল তা নিয়ে বিতর্ক উঠতে পারে কিন্তু ভারত পরিচালিত হবার দৃশ্যমান আদর্শবাদে এর ব্যতিক্রম মোটা দাগে দেখা যায়নি, যেটি এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
বর্তমানে ভারত যে ভাবধারায় চলছে সেটির মূলে রয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দলটির মূল ভাবাদর্শ হলো হিন্দুত্ববাদ। হিন্দুত্ব হলো ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রধান রূপ। একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসাবে, হিন্দুত্ব শব্দটি ১৯২৩ সালে আরএসএস তাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠাতা বিনায়ক দামোদর সাভারকর দ্বারা প্রথম উচ্চারিত হয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং অন্যান্য সংগঠনের দ্বারা সমষ্টিগতভাবে সংঘ পরিবারের বিশ্বাস হিসাবে বর্ণনা করা হয় এটিকে।
বিনায়ক দামোদর সাভারকারের ওপর লেখা এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার নিবন্ধ অনুসারে, ‘হিন্দুত্ব... ভারতীয় সংস্কৃতিকে হিন্দু মূল্যবোধের প্রকাশ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করতে চেয়েছিলেন তিনি; এই ধারণাটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের একটি প্রধান নীতিতে পরিণত হয়।’ এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে, হিন্দুত্ব হলো সাভারকারের আদর্শের ক্লাসিক বিবৃতিতে সংজ্ঞায়িত ‘হিন্দু জাতির সংস্কৃতি’ যেখানে হিন্দুধর্ম একটি উপাদান আর হিন্দু ধর্ম হলো এমন একটি ধর্ম যা হিন্দুদের পাশাপাশি শিখ ও বৌদ্ধরাও পালন করে। নিবন্ধে আরো বলা হয়েছে, হিন্দুত্বের প্রবক্তারা হিন্দুদের ধর্মীয় এবং বৃহত্তর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে জাতীয় পরিচয়ের বিষয়টি এক করে প্রচারের চেষ্টা করেছেন।
সাভারকারের মতে, হিন্দুত্ব হলো ভারতীয় সবকিছুর অন্তর্ভুক্ত একটি শব্দ। তার সংজ্ঞায় হিন্দুত্বের তিনটি অপরিহার্য বিষয় হলো, সাধারণ জাতি রাষ্ট্র, অভিন্ন জাতি এবং অভিন্ন সংস্কৃতি বা সভ্যতা। সাভারকার ‘হিন্দু’ এবং ‘সিন্ধু’ শব্দগুলো পরস্পর পরিবর্তনযোগ্যভাবে ব্যবহার করেছেন। ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক এবং জাতিগত ধারণা হিসাবে এই শব্দগুলি তার হিন্দুত্বের ভিত্তি ছিল এবং ধর্ম তার সংমিশ্রণে স্থান পায়নি। তার হিন্দুত্বের বিস্তৃতিতে সর্ব ভারতীয় ধর্ম, যেমন হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখ ধর্ম অন্তর্ভুক্ত ছিল। সাভারকার ‘হিন্দু জাতীয়তাকে’ ‘ভারতীয় ধর্মের’ মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছিলেন এই অর্থে যে তারা একটি সাধারণ সংস্কৃতি এবং তাদের উৎসের ভূমির প্রতি অনুরাগ ভাগ করে নিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষজ্ঞ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্রিস্টোফ জাফরেলটের মতে, সাভারকার- নিজেকে নাস্তিক হিসাবে ঘোষণা করেন, হিন্দুর সংজ্ঞায় ধর্মের গুরুত্বকে হ্রাস করেছেন, এবং পরিবর্তে একটি ভাগ করা সংস্কৃতি ও লালিত ভূগোলসহ একটি জাতিগোষ্ঠীর জন্য জোর দিয়েছেন। জাফরেলট বলেছেন, সাভারকারের কাছে, একজন হিন্দু হলো প্রথম এবং সর্বাগ্রে এমন কেউ যিনি সিন্ধু নদীর ওপারে, হিমালয় এবং ভারত মহাসাগরের মধ্যবর্তী এলাকায় বসবাস করেন। সাভারকার খিলাফত আন্দোলনের প্যান-ইসলামিক সংহতির প্রতিক্রিয়ায় তার মতাদর্শ রচনা করেন, যেখানে ভারতীয় মুসলমানরা অটোমান সাম্রাজ্যের ইস্তাম্বুলভিত্তিক খেলাফত এবং ইসলামিক প্রতীকগুলোর প্রতি সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তার চিন্তাধারায় প্রধানত ইসলাম এবং এর অনুসারীদের প্রতি গভীর শত্রুতা প্রতিফলিত হয়।
জাফরেলট বলেন, সাভারকারের কাছে, মুসলিমরা ছিল প্রকৃত শত্রু, ব্রিটিশরা নয়। কারণ তাদের ইসলামিক আদর্শ তার দৃষ্টিতে আসল জাতির তথা হিন্দু রাষ্ট্রের জন্য হুমকি তৈরি করেছিল। যারা এই ঐতিহাসিক ‘সাধারণ সংস্কৃতি’ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তাদের সবাইকে সাভারকার বাদ দেন। তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন যারা খ্রিষ্টধর্ম বা ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন কিন্তু শেয়ার্ড ইন্ডিক সংস্কৃতিকে গ্রহণ ও লালন করেন। এক্ষেত্রে এই বিবেচনা ছিল যে তারা আবার পুনরায় একত্রিত হতে পারে।
সাভারকারের হিন্দুত্বের ধারণা তার হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভিত্তি তৈরি করেছিল। এটি ক্লিফোর্ড গির্টজ, লয়েড ফলার্স এবং অ্যান্টনি ডি. স্মিথ দ্বারা নির্ধারিত মানদন্ড অনুসারে জাতিগত জাতীয়তাবাদের একটি রূপ ছিল। এখন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত হিন্দুত্বের যে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তার মূল ভিত্তি সাভারকারের ধারণা। তিনিও বলছেন, হিন্দুত্ববাদের মূল কথা হলো ভারত হবে হিন্দুদের রাষ্ট্র। যারা এ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে থাকবে এই হিন্দুত্ববাদের সংস্কৃতিগত ধারণাকে মেনে নিয়ে তাদের চলতে হবে। মোহন ভাগবতের ভাষায় হিন্দু বা হিন্দুত্ব কোনো ধর্মীয় ভাবাদর্শ নয়, এটি হলো ভারত রাষ্ট্র পরিবারের যে কেউ মুসলিম বা খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধ হতে পারেন কিন্তু ভারতে থাকলে তার পরিচয় হবে হিন্দু-মুসলিম, হিন্দু-খ্রিষ্টান, হিন্দু-বৌদ্ধ ইত্যাদি।
হিন্দুত্ব ও বহুত্ববাদী ভারত
আরএসএস প্রধানের এই ধারণা ভারতের সব জনগোষ্ঠী গ্রহণ করেছে এ কথা বলার অবকাশ নেই। এই ধারণার বিরোধিতা মুসলিম খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধ সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকেই শুধু এসেছে এমন নয়। এর মূল বিরোধিতা এসেছে ভারতে বহুত্ববাদী ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে। আজকের ‘হিজাব’ বিতর্কে যেমন অ-বিজেপি সব দল থেকে কম বেশি সমালোচনা এসেছে তেমনিভাবে আরএসএসের ভারত দর্শনের ব্যাপারেও একইভাবে বিরোধিতা এসেছে।
তবে তাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো, ভারতের রাজনীতি, ধর্মচেতনা, সামরিক, বেসামরিক প্রশাসন এমনকি গভীর ক্ষমতা বলয়ে গত এক যুগে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। এর মূলে রয়েছে সংঘ পরিবারের ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ। আরএসএস চেয়েছে ভারতের রাষ্ট্রীয় সামরিক বেসামরিক নিয়ন্ত্রণের চূড়ান্ত ক্ষেত্রগুলোতে আদর্শগত আধিপত্য সৃষ্টি করতে। তারা বিশেষভাবে কেন্দ্র ও গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যসমূহের বিচার প্রতিষ্ঠান, বেসামরিক আমলাতন্ত্র, রাষ্ট্রের জাতীয় ও বৈশ্বিক গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান ও সশস্ত্র বাহিনীতে আরএসএসের হিন্দুত্ববাদী ভাবাদর্শের একটি বড় বলয় তৈরি করতে চেয়েছে, যাতে ভারতের নীতি প্রণয়ন শিক্ষা কাঠামো ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা, গণমাধ্যমে হিন্দুত্ববাদী দর্শনের বিস্তৃতি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়।
এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায় নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে হয়। এখন সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় থেকে সামরিক বা নিরাপত্তা স্বার্থে পেশাগত বক্তব্যের পাশাপাশি হিন্দুত্ববাদী উগ্র জাতীয়তাবাদী বক্তব্য উচ্চারিত হতে দেখা যায়। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি এজেন্সিগুলো নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে গোপন ভূমিকায় চলে এসেছে বলে অভিযোগ উঠছে যা স্বাধীনতার পর ৫-৬ দশকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। শিক্ষার কারিকুলামে হিন্দুত্ববাদী ধ্যান ধারণাগুলো গভীরভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এর পাশাপাশি সংঘ পরিবারের আরএসএস ভিএইচপি বজরং ইত্যাদি শাখা সংগঠনের সদস্যদের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটছে। এক পরিসংখ্যান অনুসারে পুরো ভারতে ১৮ মিলিয়ন আরএসএস সদস্য/ক্যাডার রয়েছে যারা সংঘ পরিবারের ভাবাদর্শে চরমভাবে উদ্বুদ্ধ। এসব সদস্যরা সামরিক বেসামরিক ক্যাডার সার্ভিস গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যান্য প্রশাসনে নিয়োগ লাভ করছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নির্বাচনে প্রচার প্রচারণায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই শক্তিটির বিস্তার ভারতকে ভেতর থেকে পাল্টে দিচ্ছে।
এ কারণে হিজাব ইস্যুটিকে বিচ্ছিন্ন কিছু হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না। এর সাথে সংঘ পরিবারের মূল আদর্শ বিশ্বাস এবং ধ্যানধারণার সংযুক্তি রয়েছে। এটি এমন এক ইস্যু যার সাথে এনআরসি বা নাগরিকত্ব ইস্যু, ভোটাধিকার থেকে সংখ্যালঘুদের বঞ্চিত করা এবং সংখ্যালঘু গণহত্যার হুমকির সম্পর্ক রয়েছে। এখানকার হুমকি থেকে ভারতের বহুত্ববাদী সংহতিকে রক্ষার জন্য রাজনৈতিকভাবে ফ্যাসিবাদি ধ্যান ধারণা থেকে মুক্তির চেষ্টা যেমন চালাতে হবে। তেমনিভাবে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু সমন্বয়বাদী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ভারতব্যাপী। এটি সম্ভব হলে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ভারতীয়ের সমর্থন নিয়ে বিজেপি বা সংঘ পরিবার ভারতকে উগ্রবাদী শাসনের দিকে আর নিয়ে যেতে পারবে না। বিভক্তিকে কাজে লাগিয়েই জয় পাচ্ছে বিজেপি। পশ্চিম বঙ্গে এটি পারেনি বলে বিজেপি ব্যর্থ হয়েছে। বাকি ভারত এই ধারায় কখন কতটা আসতে পারে সেটিই মূল প্রশ্ন এখনকার।
mrkmmb@gmail.com