হারাম সম্পর্ক যেসব ক্ষতি করে

উম্মেহানি বিনতে আবদুর রহমান | Feb 12, 2022 02:10 pm
হারাম সম্পর্ক যেসব ক্ষতি করে

হারাম সম্পর্ক যেসব ক্ষতি করে - ছবি : সংগ্রহ

 

রাত্রি দ্বিপ্রহর; চার পাশে কোথাও কোনো আলো নেই, অন্ধকারে নিমজ্জিত হাজার লাখো তরুণ হৃদয়ে আযাযালি শক্তভাবে কুমন্ত্রণা ফুঁকে দিচ্ছে। আঁধারে দিগি¦দিক ছুটে চলা এসব মানবকে স্বীয় হৃদয় যখন থামাতে চায়, তখন ভ্রু কুচকে মানুষটি তার হৃদয়কে ধমক দিয়ে বলে ওঠে- ‘আহ! বিরক্ত করো না, কথা বলার জন্য আমার কাউকে লাগবে।’ আমাদের উচিত বিয়ের আগে এ সব অনুভূতির ক্ষেত্রে শক্ত হওয়া, কেননা এই অনুভূতিগুলো হৃদয়ে ঢেলে দিয়েছেন রব্বুল আল আমিন, তিনি হৃদয়ের স্রষ্টা। রব্ব খুব ভালো করেই জানেন কিভাবে এ অনুভূতির যতœ নেবেন এবং তা পূরণ করবেন। প্রচলিত দ্বিধাহীন কাছে আসার এ গল্পগুলো মূলত অশ্লীলতার পথকে বিস্তৃত করছে যা মরণব্যাধি যেকোনো রোগের চেয়েও অধিক ক্ষতিকর। একমাত্র হারাম সম্পর্ক একই সাথে দেহ এবং হৃদয়ের অভূতপূর্ব ক্ষতি সাধন করে, এটি এমন এক পথ যা মানুষকে বহুমাত্রিক ধ্বংসে নিমজ্জিত করে। আল্লøাহ বলেন, ‘স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেম করবে না।’ (সূরা মায়িদা-৫)

হারাম সম্পর্ক মানুষকে পাপের অতল সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়। এটি এমন এক মরীচিকা; যা আল্লাহর রহমত ও মোহাব্বত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, হারামের মোহ আযাযিলের সাথে শক্ত সম্পর্ক স্থাপন করে। হারাম রিলেশনশিপ মানুষের যে নানাবিধ ক্ষতি সাধন করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ১. হৃদয়কে আঘাতে জর্জরিত করা; ২. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট করা; ৩. চরম পেরেশানির কবলে ফেলা; ৪. আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখা; ৫. শয়তানের পথ অনুসরণের মাধ্যমে হৃদয়কে শয়তানের কব্জায় নিয়ে যাওয়া ও তাকওয়াকে সম্পূর্ণ হত্যা করা এবং শয়তানের পূজায় ব্যস্ত রাখা। সর্বোপরি হারাম সম্পর্ক ইবাদতের স্বাদ এবং মুখের নূর ও ব্যবহারের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়, আল্লাহ বলেন, ‘শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা বাকারা-২০৮)

শয়তান বারবার ধোঁকায় ফেলে, শয়তানের মূল লক্ষ্য আমাদের দ্বীনকে নষ্ট করা। শূন্যতা পূরণের অনুভবে যখন মানুষ নিমজ্জিত হয়, মানে তার খিদের অনুভব হয়েছে। এ অনুভূতির ফলে মানুষ মুখোমুখি সাক্ষাতে বা মেসেজে অশ্লীলতায় যুক্ত হয়ে পড়ে যা নিতান্তই ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়। বিয়ে একমাত্র পথ যা মানুষকে অশ্লীলতা থেকে মুক্ত রাখে।

হারামে নিমজ্জিত হওয়ার ফলে নিজ সত্তার ক্ষতি থেকে শুরু করে পারিবারিক সামাজিক জটিলতা নিগূঢ় হয়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমাদের মাঝে যার কোনো (পুত্র বা কন্যা) সন্তান জন্ম হয় সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম আদব কায়দা শিক্ষা দেয়; যখন সে সাবালক-সাবালিকা হয়, তখন যেন তার বিয়ে দেয়; যদি সে বালেগ হয় এবং তার বিয়ে না দেয় তাহলে, সে কোনো পাপ করলে ওই পাপের দায়ভার তার পিতার ওপর বর্তাবে।’ (বাইহাকি-৮১৪৫)। অথচ আজ হালালকে কঠিন করে অসুস্থ নোঙরা আর অবৈধ কার্যক্রমের দরজাকে বিস্তীর্ণ রূপে খোলে দেয়া হয়েছে। শাহ ওয়ালি উল্লাহ রহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘একটি সমাজে শয়তানের রাস্তা হলো হারামকে সহজ করে দেয়া আর হালালকে কঠিন করা।’ আধুনিকতার হাওয়ায় উড়ে যুব শ্রেণী আজ হালাল থেকে যোজন যোজন দূরে সরে গেছে।

ইসলাম আমাদেরকে চলমান স্রোতের বিপরীত চলে কিভাবে হৃদয়কে সুরক্ষিত রাখা যায় তা শিখায়, মূলত ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা মানুষকে গুনাহ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন উপায় বলে দেয় আর গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার মানে আখিরাতের পথ সুরক্ষিত করা। আল্লাহ বলেন, শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখনো কি বিরত হবে?’ (সূরা মায়িদা-৯১)

বিজ্ঞানের গবেষণায় অশ্লীল ভালোবাসায় যে ক্ষতি : মানুষ গতিশীল। একইভাবে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও ডায়নামিক অর্থাৎ গতিশীল যার নিজস্ব কাজ আছে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা যিনার পথ সুগম হয়, ইসলাম আমাদের যিনা-ব্যভিচারের কাছে যেতেও নিষেধ করে। রাব্বুল আল-আমিন কুরআনে অসংখ্য আয়াতে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করে আমাদের সাবধান করেছেন। বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণায় হারাম সম্পর্কের নেতিবাচক যে দিকগুলো উঠে এসেছে তা মারাত্মক ক্ষতিকর। ইতালির পিজা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডোনাটেলা মারাজ্জিতি ২০ জন সদ্য প্রেমে পড়া যুগলের ওপর একটি গবেষণা চালান। গবেষণায় ছেলেমেয়েদের রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ‘সদ্য প্রেমে পড়া তরুণ-তরুণীদের ও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির রক্তের সেরোটোনিনের মাত্রার পরিমাণ একই (সূত্র-বাংলানিউজ২৪)।

সাইকোলজিস্ট রবার্ট স্টেনবার্গ ভালোবাসাকে তিনটি উপাদানের মধ্যে ভাগ করেছেন। সেই উপাদানটিকে একটি ত্রিভুুজের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করেছিলেন। সেই তিনটি উপাদানের মধ্যে অন্যতম হলো আবেগ। (সূত্র-জি নিউজ) এটি সেই চাহিদা বা আকর্ষণ যা মানুষকে ব্যভিচারের দিকে ঠেলে দেয়, যে ক্ষতির পরিমাণ দুনিয়ায় যতটা আখিরাতে এর হাজারগুণ বেশি। আমাদের বুঝতে হবে সৃষ্টিকর্তা এ বিষয়ে কী দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লøাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের এ পথের কিণারা থেকে সাবধান করে বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সূরা-ইসরা-৩২)

আয়াতটিতে আল্লাহ আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন, ব্যভিচারের আশপাশ থেকেও কাছে আসার যে গল্প বিস্ফোরক

দূরে থাকার জন্য। প্রকৃতপক্ষে আযাযিল একটু একটু করে বদঅভ্যাসযুক্ত চক্রের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়, এরপর খারাপ থেকে আরো খারাপ এবং অধিকতর খারাপে নিক্ষেপ করে। হারাম সম্পর্ক স্থাপনে যে বিয়ের ভিত্তিপ্রস্তর তা আল্লাহর অবাধ্যতার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়, এ ধরনের পাপময় সম্পর্কে কোনো কল্যাণ থাকে না। ইসলাম এ ধরনের পাপময় সম্পর্ককে এক চুল স্বীকৃতি দেয় না; এমনকি সেটা যদি বিয়ের উদ্দেশ্যে হয় তবুও। এ কাজে আল্লøাহর ক্রোধ রয়েছে তাতে প্রমাণিত হয় যে- এ ধরনের বিয়েতে আবদ্ধ দম্পতিদের ওপর আসমানি শাস্তি আসেই আসে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার জিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার জন্য রয়েছে কষ্টের জীবন।’ (সূরা ত্বহা-১২৪)
বিয়ে করার দৃঢ়সংকল্প থাকলেও কোনো বেগানা নারীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সাথে) কথা বলা।’ (বুখারি-৬২৪৩) অন্য এক হাদিসের শেষ অংশে রয়েছে, ‘আর পায়ের যিনা হচ্ছে ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের ব্যভিচার হলো প্রত্যাশা করা।’ (মিশকাত-৮৬)

হারাম সম্পর্ক (যিনা-ব্যভিচার) সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সার্বিক অশ্লীলতা থেকে আমাদের হিফাজত করুন, আমাদের শুদ্ধ সুস্থ হৃদয় দিন-আমিন!


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us