ইউক্রেনের সাগরে ঢোকার পথ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া!
ইউক্রেনের সাগরে ঢোকার পথ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া! - ছবি : সংগৃহীত
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব মার্কিন নাগরিককে ইউক্রেন ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। আর খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, সেখানে রুশ সামরিক হামলার আশঙ্কা আরো বেড়ে গেছে। তিনি আরো বলেছেন, মস্কো যদি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, তাহলে মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারে তিনি সেখানে কোনো সৈন্য পাঠাবেন না।
জো বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, ঐ অঞ্চলে পরিস্থিতি খুব দ্রুতই বেশ চরম দিকে মোড় নিতে পারে।
ইউক্রেনের সীমান্তে এক লাখের বেশি সেনা মোতায়েনের পরও রাশিয়া দাবি করে যাচ্ছে তাদের ইউক্রেনে অভিযান চালানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
কিন্তু প্রতিবেশী বেলারুশের সাথে রাশিয়া এখন এক বিরাট সামরিক মহড়া শুরু করেছে। ইউক্রেন অভিযোগ করছে তাদের সাগরে ঢোকার পথ অবরোধ করে রেখেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার বলছে, ইউক্রেন যাতে ন্যাটো জোটে যোগ দিতে না পারে, সেজন্যে তারা যে 'রেড লাইন' বেঁধে দিয়েছে, সেটিই তারা নিশ্চিত করতে চায়। ইউক্রেন এক সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে রাশিয়া এমন নিশ্চয়তা চাইছে, এই দেশ যেন ন্যাটো জোটের সদস্য হতে না পারে।
এই চরম সামরিক উত্তেজনার মধ্যে ইউরোপ এখন যে নিরাপত্তা সংকটের মুখে, তাকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট বলে বর্ণনা করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর তাদের সব নাগরিককে অবিলম্বে ইউক্রেন ত্যাগ করার জন্য তাগিদ দিচ্ছে।
রুশ সেনা যেখানে মোতায়েন করা হয়েছে
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনবিসি নিউজকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের এখনই ইউক্রেন ছাড়া উচিৎ।'
তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় এক সামরিক বাহিনীর মোকাবেলা করছি। পরিস্থিতি খুবই সংকটজনক এবং যেকোনো সময় চরম দিকে মোড় নিতে পারে।'
প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এরকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে কি না যেখানে মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারে তাকে সৈন্য পাঠানোর নির্দেশ দিতে হতে পারে।
এমন আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, 'না, নেই। যখন আমেরিকা আর রাশিয়া একে অন্যের দিকে গুলি চালায়, তখন সেটা একটা বিশ্বযুদ্ধ। আমরা একেবারেই অন্য এক ধরনের বিশ্বে আছি, যেটা আমরা আগে কখনো দেখিনি।'
এদিকে ইউক্রেনকে ঘিরে উত্তেজনা কমাতে তীব্র কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে।
রাশিয়া এবং ইউক্রেন গত বৃহস্পতিবার ঘোষণা করে যে পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সংঘাত থামানোর জন্য ফরাসি এবং জার্মান কূটনীতিকদের সাথে ৯ ঘণ্টা ধরে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইউক্রেনের দূত অ্যান্ড্রি ইয়েরমাক বলেন, যদিও অনেক বিষয়ে মতবিরোধ রয়ে গেছে, তারপরও 'আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং আলোচনা করার ইচ্ছা' এখনো আছে।
ইউক্রেনকে ঘিরে এই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের দেশের ভেতর ঢুকিয়ে নেয়ার পর। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এর পর থেকে পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সীমান্তের কাছে রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত।
এদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলেছেন, আযভ সাগরের পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে কৃষ্ণ সাগরের পথও রুশ বাহিনী প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।
রাশিয়ার নৌ মহড়া সামনের সপ্তাহে আযভ সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরে শুরু হবে। এই মহড়ার সময় ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলা ছোঁড়া হবে বলে উপকূলীয় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, যে রকম বিশাল অঞ্চল জুড়ে অভূতপূর্ব-ভাবে এই মহড়া চালানো হবে, তার ফলে এই দুটি সাগরে নৌ চলাচল কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেস্কি রেজনিকভ টুইট করে বলেছেন, এই দুটি সাগর রাশিয়া অবরোধ করে রেখেছে।
এরকম আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই মহড়ার মাধ্যমে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের এতটাই কাছে থাকবে যে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে অভিযান চালানোর চেষ্টা করে, তখন কিয়েভে হামলা চালানো তাদের জন্য খুব সহজ হবে।
তবে রাশিয়া বলছে, তাদের সৈন্যরা মহড়া শেষে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে আসবে।
সূত্র : বিবিসি