রাশিয়া কি প্রতিবেশী সবার জন্য হুমকি?
রাশিয়া কি প্রতিবেশী সবার জন্য হুমকি? - ছবি : সংগ্রহ
রাশিয়া এবং পশ্চিমের সাথে সম্পর্কিত অমীমাংসিত নিরাপত্তা সঙ্কট এমনই একটি সমাধানযোগ্য বিষয় যেখানে ইউক্রেন জড়িয়ে আছে; কোনো শান্তি প্রস্তাব বাস্তবায়িত না হওয়ায় পুরো অঞ্চল উত্তপ্ত অগ্নিকুণ্ডের উপর ভেসে আছে। যথাসময়ে প্রয়োজনীয় কাজ না করে সমস্যার ভেলা ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে আর অপেক্ষা করেছে কি আর এমন হবে। রাশিয়া এবং পশ্চিমের মধ্যে বর্তমান দ্বন্দ্ব ২০১৪ সাল থেকে শুরু, যখন রাশিয়া ক্রিমিয়াকে অধিভুক্ত করে। তখন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ক্রিমিয়া এবং পূর্ব ইউক্রেনের ওপর মুষড়ে পড়েছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন মিডিয়ায় বলেছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মাথাব্যথা নেই বরং যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য রাশিয়ার উন্নতি ও অগ্রগতি থামিয়ে দেয়া। ইউক্রেন কেবল ওয়াশিংটনের এই অশুভ লক্ষ্য চারিতার্থ করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না।
তিনি আরো বলেছেন, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ পেয়ে গেলে এবং ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের সামরিক অভিযান শুরু হয়ে গেলে, ন্যাটোকে আক্রমণ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। এতে পুরো ইউরোপ গভীর নিরাপত্তা সঙ্কটে পতিত হবে।
সঙ্কট শুরু হয় ৩০ বছর আগে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ে, সিআইএস বা কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটস তৈরি হয়েছিল এবং পূর্ব ইউরোপের বেশ কয়েকটি প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্র সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল, এমনকি ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাও; যেমন এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়ার তিনটি ছোট বাল্টিক রাজ্য। ওয়ারশ চুক্তি বিলুপ্ত হয় এবং ন্যাটো রাশিয়ার সাথে আরো পূর্ব দিকে না যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়, যদিও এই প্রতিশ্রুতি কেউ রাখেনি, সম্মান দেয়া হয়নি।
জর্জিয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবে ভবিষ্যত নিরাপত্তার বিষয়ে মোলদোভার সম্পর্ক খুব বেশি নয়। ইউরোপের মাঝখানে বেলারুশ রয়েছে, যাকে সাদা রাশিয়াও বলা হয়। এটি ইউরোপের শেষ একনায়কত্ব তাই ইউরোপের কাউন্সিলের সদস্য হিসেবেও অনুমতি দেয়া হয়নি, যার ৪৭টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে, ৩০টি সদস্য রাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ন্যাটোকে বড় করা হয়েছে। রাশিয়া একটি সিই সদস্য; রাশিয়ার এক-চতুর্থাংশ ভূখণ্ড ইউরোপে এবং বাকি অংশ এশিয়ায়। রাশিয়া ইউনিয়ন নিজেই একটি প্রকাণ্ড ইউরেশিয়া।
সমস্যাযুক্ত রাষ্ট্রটি বর্তমানে ইউক্রেন; রাশিয়া চায় না যে এটি পশ্চিম ইউরোপের খুব কাছের হয়ে উঠুক এবং ন্যাটোতে যোগদান করুক। রাশিয়া এটা হজম করবে না তার দক্ষিণের সামরিক সদর দফতরের পাশে কৃষ্ণসাগর এবং ক্রিমিয়া উপদ্বীপে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক জোট দোরগোড়ায় অবস্থান করুক। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে, বেশ কয়েকটি এলাকায় মাতৃভাষা রাশিয়ান, অন্যান্য অঞ্চলে মিশ্র রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয়, এর মধ্যে কিছু অংশে রাশিয়াপন্থী জনসংখ্যা রয়েছে। তারা যদি প্রকৃতপক্ষে রাশিয়ার অংশ হতো, তাহলে রাশিয়া থেকে ক্রিমিয়া পর্যন্ত স্থলপথে প্রবেশাধিকার থাকত। পশ্চিম একটি সম্প্রসারণবাদী রাশিয়াকে ভয় পায়। রাশিয়া যদি বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলগুলোকে সংযুক্ত করেই চলে ইউরোপ তার নিরাপত্তার জন্য কখনো তাতে সমর্থন দেবে না। রাশিয়ার এমন উদ্দেশ্য আছে কি না তা জানা যায়নি। উল্লেখ করা যায়, ইউক্রেনের জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ মিলিয়ন এবং রাশিয়ার প্রায় ১৪৫ মিলিয়ন। উভয় দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত এবং বড় দেশ, এবং উভয়ই পারস্পরিক উন্নত সহযোগিতা থেকে উপকৃত।
আরো উত্তরে, ফিনল্যান্ড রাশিয়ার সীমান্তে রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এটিকে তার শক্তিশালী প্রতিবেশীকে কিছু জমি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। আজ ফিনল্যান্ড নিরপেক্ষ; এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য এবং পশ্চিমা-ভিত্তিক দেশ। ফিনল্যান্ডের প্রতিবেশী সুইডেনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য, যা নিরপেক্ষ, তবুও ফিনল্যান্ডের চেয়ে আরো বেশি পশ্চিমা-ভিত্তিক হিসেবে দেখা হয়। সুইডেনের রক্ষণশীল দল, যাদের মধ্যে প্রায় আট বছর আগে সাত বছরের জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিল, তারা চায় সুইডেন ন্যাটোর সদস্য হোক। দু’টি দেশের পক্ষে তাদের জোটনিরপেক্ষ এবং নিরপেক্ষ নীতি পরিবর্তন করা কঠিন হবে যদি না রাশিয়া ইতিবাচক অনুমোদন দেয়।
সুইডেনের পশ্চিম এবং উত্তরে, রাশিয়া এবং ফিনল্যান্ডের সাথে সীমানাসহ, নরওয়ে একটি ন্যাটো সদস্য এবং এমনকি ১৯৪৯ সালে প্রতিরক্ষা জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল। পাবলিক বিতর্ক ছাড়াই নরওয়েজিয়ানরা ন্যাটোর সদস্যপদ বেছে নিয়েছে। আজ, নরওয়েতে এটি নিয়ে সামান্য বিতর্ক আছে, তবে ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে এবং পরে, কেন্দ্রীয় নরওয়েজিয়ান রাজনীতিবিদরা দেশটির ন্যাটো সম্পর্ক নিয়ে জোরালো প্রশ্ন তুলেছেন।
বর্তমানে, ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ একজন নরওয়েজিয়ান এবং তিনি নরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এটা জেনে অবাক হওয়ার কথা যে, তিনি যখন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির যুব শাখার নেতা ছিলেন, তখন ন্যাটো সদস্য হওয়ার বিরোধিতা করে সংগঠনের নীতিমালা তৈরি করেছিলেন। এটি উল্লেøখ করা উচিত যে, সমস্ত নর্ডিক দেশের রাশিয়ার সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে।
পশ্চিমারা রাশিয়াকে দোষারোপ করতে চায়, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করা রাশিয়ার ভুল থাকলেও অনেক কিছু পশ্চিমাদের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছিল এবং ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়াসহ ইউরোপ ও এর বাইরে অন্যান্য পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত থেকে নিজের ওজন এবং বিশ্বাস অনেকটা হারিয়েছে।
রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে আজকের বেশির ভাগ সমস্যা আলোচনার অভাবে এবং অবিশ্বাসের কারণে। এ ছাড়াও, এটি সত্য যে, ন্যাটোর বাজেট রাশিয়ার সামরিক বাজেটের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি এবং এটিও সত্য যে, ন্যাটো আফগানিস্তানে তার নিজস্ব প্রতিরক্ষা অঞ্চলের বাইরে অভিযান চালিয়েছে। উল্লেøখ্য, প্রতিটি সদস্যের প্রতিরক্ষা বাজেট সেই দেশের জিডিপির ২ শতাংশে উন্নীত করা ন্যাটোর নীতি।
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করছেন পশ্চিমারা এই ভয়ে অনেকটা ভীত। ক্রেমলিনের এ ধরনের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় জো বাইডেন যুদ্ধের হুমকি দিয়ে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত করেছেন। তিনি পুতিনের ওপরও অবরোধ দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
পুতিন তার সম্ভাব্য লক্ষ্যে সফল হতে পারেন, ইউক্রেনের একটি বড় অংশ দখল করে বাকি অংশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে মস্কোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।
বেশির ভাগ রক্ষণশীল ভাষ্যকার ১৯৩৮ সালের মিউনিখ চুক্তির আলোকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, যখন ব্রিটেন ও ফ্রান্স অ্যাডলফ হিটলারের চেকোস্লোভাকিয়া ভেঙে দিয়েছিল, তারও আলোচনা হচ্ছে। ১৯৯১ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে ইউক্রেন আজ এ পর্যন্ত এসেছে। সমস্যা গুছিয়ে না নিয়ে ইউরোপীয়রা বরাবরের মতো শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত করছে।
১৯৪৫ সালে রাশিয়ানরা কমিউনিস্টবিরোধী স্তম্ভগুলো, ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরিয়ান বিদ্রোহ, ১৯৬৮ সালে চেকদের ‘প্রাগ বসন্ত’ চূর্ণ করায় পশ্চিমারা নপুংশক আতঙ্কে ভুগছিল। রাশিয়া খুব স্থির না হয়ে ঘুঁটি চালায়নি। তবুও এখন রাশিয়ারও অনেক সমস্যা আছে। তা ছাড়া ১৯৫৯ সালে চীনের তিব্বত দখল, ইত্যাদি অনেক বড় ও লম্বা তালিকা আস্তে আস্তে সংযুক্ত হচ্ছে। পুতিন চীনে গেছেন, ইমরান খানও চীনে গেছেন। ভারত চীন সীমান্তে গোলাগুলি হচ্ছে। বেলুচিস্তানে সেনা ক্যাম্পে রাতভর আক্রমণ চালানো হয়েছে। ইউক্রেনের সাথে মধ্য এশিয়া ও আফগানিস্তান, বালুচ বিদ্রোহীরা অস্থির হওয়ায় পূর্ব ইউরোপের নিরাপত্তা সঙ্কট আরো বেড়েছে।
সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ এবং তার তুখোড় জেনারেলরাও জানতেন যে, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে প্রচলিত অস্ত্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধ্বংস করতে সক্ষম পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র উভয় ক্ষেত্রেই আমেরিকা অপ্রতিরোধ্য শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। রাশিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্নেল ওলেগ পেনকভস্কি তার দেশের গোপনীয়তা পশ্চিমের কাছে গোপনে পাঠিয়ে দেয় বা বিক্রি করে। এ থেকে আমেরিকানরা জানতে পারে, সোভিয়েতরা তাদের নিজেদের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেছে। সোভিয়েতদের মোকাবেলা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের ইচ্ছা ও সংহতি শীতল যুদ্ধে শক্তিশালী ছিল।
আজ বাইপোলার স্নায়ুযুদ্ধের বিশ্ব মাল্টিপোলার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে, আমেরিকান শ্রেষ্ঠত্ব এখন আর চ্যালেঞ্জযোগ্য নয়। অপর দিকে, চীনারা এখনো তাইওয়ানের বিরুদ্ধে শোডাউনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না হলেও, বিজয় ছিনিয়ে নিতে সক্ষম।
পুতিন অনেক সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে একটি বিপর্যস্ত সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সামরিক বাহিনীকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং এককভাবে ন্যাটোকে সামাল দিতে চান। তিনি জানেন, ইউরোপ বিভক্ত এবং দুর্বল, বাল্টিক রাজ্য দখলসহ তিনি যেকোনো কিছুর জন্য সামরিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সম্পূর্ণরূপে অনিচ্ছুক। জার্মান নৌবাহিনীর প্রধান, অ্যাডমিরাল কে-আচিম শোয়েনবাখ, ইউক্রেনের প্রতি রুশ হুমকিকে কল্পনাপ্রসূত দাবি করার পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তিনি আরো বলেছেন, পুতিন শুধু ‘কিছু সম্মান’ চান।
ব্রিটেন রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অবস্থান ও অভিযানকে সমর্থন করছে, কিন্তু রানীর সশস্ত্র বাহিনী এখন খুব ছোট, বড় বাহিনী পুশতে ব্রিটেন এখন অসমর্থ। ইউক্রেনের পক্ষে ব্রিটিশ সেনাদের যুদ্ধ করার কোনো সম্ভাবনা নেই। ব্রিটেনের রণহুঙ্কার রঙিন ফানুসের মতোই দেখাচ্ছে।
ইউরোপ অনেক বেশি উদ্বিগ্ন। চলমান শীতে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি গ্যাস সঙ্কটে ভুগছে ইউরোপ। রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে থেকে এই গ্যাস ইউরোপে যায়। ইউরোপ চাইবে না তাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপন আরো বেশি দুর্বিষহ হয়ে উঠুক।
সুতরাং, সম্ভাবনা এই যে, পুতিন যদি ইউক্রেনে আক্রমণ করেন, তবে তিনি গুরুতর সামরিক পরিণতি ভোগ না করেই তার নির্দিষ্ট অঞ্চলটি সুরক্ষিত করবেন, সাহসী ইউক্রেনীয়রা রাশিয়ান বাহিনীকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি ঘটানোর আগেই পুতিন অগ্রাভিযান বন্ধ করতে পারেন বলে মনে হয়।
বাইডেনকে পুতিনের সাথে একটি শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তাব দেয়ার জন্য খারাপ পরামর্শ দেয়া হতে পারেÑ এই জাতীয় বৈঠক একটি অযৌক্তিক ধরনের ও রাশিয়ানদের ছাড় দেয়ার ইচ্ছা বলে মনে করবে। জাতিসঙ্ঘ যে বৈঠকের আয়োজন করেছে সেটি উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের মাধ্যমেই শেষ হয়েছে এবং সম্পর্ক আরো তিক্ত হয়েছে। ১৯৬২ সালে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড ম্যাকমিলান আহ্বানকৃত বৈঠক কেনেডি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখান করেছিলেন। মুখ্য শক্তিগুলোর মধ্যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কমে গেছে। টঘ, এ২০, ঙঝঈঊ-এসব তাদের আগের মতো প্রয়োজন নেই; কিন্তু অবিশ্বাস, ভেটো এবং অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে বিশ্ব শান্তির অনেক চ্যানেল দুর্বল হয়ে পড়েছে।
একটি দেশ হিসেবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা অবশ্য যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। একমাত্র অর্থবহ অস্ত্র হলো ক্রেমলিনের গ্যাংস্টার চক্রের ও বালতাগুইয়াদের জীবনধারার ওপর আক্রমণ, যাদের অনেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে এবং বিনিয়োগ করেছে।
পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সঠিকভাবে জানে পুতিনের বন্ধু ও সহযোগী কারা; ধনী রাশিয়ানরা তাদের অর্থ ব্যয় করার জন্য ক্রমাগত পশ্চিমে ভ্রমণ করে, তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার মজা অনেক কমেছে। লন্ডন, নিউইয়র্ক, তুরস্ক ও আরো বিভিন্ন স্থানে অনেকেরই প্রাসাদ রয়েছে। ক্রেমলিনের সমর্থন ছাড়া আধুনিক রাশিয়ায় কেউ বড় বা ধনী হতে পারে না, ব্রিটেন এবং আমেরিকা রাশিয়ানদের কত বার রাজনৈতিক আশ্রয়দাতা ও সাংস্কৃতিক পরোপকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছে ইতিহাসের পাতায় তা পরিচিহ্নিত আছে। পশ্চিম থেকে পূর্বে, আটলান্টিক বিশ্ব থেকে ইন্দো প্রশান্ত মহাসাগরে ভৌগোলিক শক্তির পরিবর্তন হয়েছে এবং একটি কার্যকরী সরকার থেকে দূরে রয়েছে। বিশ্ব আর্থিক বাজার, প্রযুক্তি জায়ান্ট এবং মিডিয়া সংস্থা দ্বারা পরিবর্তিত হচ্ছে একই সাথে অপরাধ সিন্ডিকেট এবং স্লিপার সেলও কাজ করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য, সঙ্ঘাতের একমাত্র পক্ষ যেটি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো- পুতিনকে নিবৃত্ত করার সম্ভাব্য সবকিছু করা, পুতিন যদি হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেন, বিজয় অর্জনের জন্য ঠাণ্ডা রক্তের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যান তবে ব্যবস্থা নেয়া সঠিক বলে মনে হয়। এমন হলে পুতিন তার অজনপ্রিয় দেশীয় রাজনীতিতে আরো কোণঠাসা হয়ে পড়বেন। রাশিয়ার পুতিন এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং উভয়ই তাদের নিজস্ব আঙ্গিনায় আগ্রাসন চালাতে পারে যা প্রতিরোধ করা সম্ভব নাও হতে পারে এবং সেটি সাধারণ যুদ্ধের মতো হবে না। ইউরোপে বর্তমান নিরাপত্তা সঙ্কট গুরুতর, এটি হাতের বাইরে চলে যাওয়া এবং সরাসরি সশস্ত্র সঙ্ঘাত বা যুদ্ধে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
অতীতের ভুলগুলো থেকে কিছুটা শিখতে হবে এবং শান্তিপূর্ণ সংলাপ করতে হবে, তবে মনে হয় আলোচনার জন্য জাতিসঙ্ঘ কোনো ভালো ফোরাম নয়। পুতিন ও তার বন্ধুদের জেলে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত তাদের পশ্চিমা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের মাধ্যমে কিছুটা প্রতিশোধ নিতে পারে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার