কীটনাশক যেভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করে
কীটনাশক যেভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করে - ছবি : সংগ্রহ
কৃষিক্ষেত্রের ও দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের কীটনাশক ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে থাকি এবং দিন দিন এসব কীটনাশক ও রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। বাড়ির টবে লাগানো ফুলগাছ থেকে শুরু করে বাগানের শাকসবজি, লাউ-কুমড়া, বেগুন-বরবটির গাছ আর মাঠে ধান, পাট, যবসহ সব ধরনের শস্যের বালাইনাশক হিসেবে এসব রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। কলা থেকে শুরু করে আম, আপেল, পেয়ারা, বরই, আঙুর ইত্যাদি ফল সংরক্ষণ এবং পাকানোর জন্যও নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, আজকাল বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের প্রকোপও বেড়েছে। স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, কীটনাশক ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহারের সাথে ক্যান্সারের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না? ব্রিটেনের ক্যান্সার গবেষণা-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত তথ্য এবং কিছু গবেষণার ফলাফল থেকে বলা হচ্ছে, কীটনাশক ব্যবহারের সাথে লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মস্তিষ্কের ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে। তবে এ সম্পর্ক কতটা জোরালো তা বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট করে বলেননি।
কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে যারা কীটনাশক দ্রব্যাদি ছিটানোর কাজের সাথে যুক্ত তাঁদের শরীরে এগুলো অতিরিক্ত প্রবেশ করার আশঙ্কা থাকে। বিশেষত যারা কীটনাশক ব্যবহারের সতর্কতামূলক নির্দেশনা সঠিকভাবে মেনে চলেন না তাদের ক্ষেত্রে এটা ঘটে থাকে এবং এ ধরনের কৃষিক্ষেত্রের কর্মীদের মধ্যে লিউকেমিয়া ও লিম্ফোমার প্রকোপ তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে।
ক্যান্সার গবেষণার আন্তর্জাতিক সংস্থাও এ বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান করছে এবং তাদের ধারণা, নিয়মিত যেসব কৃষিকর্মী কীটনাশক ছিটানোর কাজে নিয়োজিত, তাদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। ডিডিটি ও লিনডনে ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি পাওয়া গিয়েছিল। ইদানীং এ ভয়ঙ্কর রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সমস্যা হচ্ছে, কীটনাশক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী আর কীটনাশক ব্যবহার কৃষিক্ষেত্রে আবশ্যক। কিন্তু মানব শরীরের জন্য কীটনাশক ক্ষতিকর কিনা তা জানাও আমাদের জরুরি।
কোনো গবেষণায় বলা হচ্ছে, কীটনাশক ব্যবহার করলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা আছে। পাশাপাশি অন্য কোনো গবেষণায় বলা হচ্ছে, কীটনাশক ব্যবহার নিরাপদ।
সম্প্রতি বলা হয়েছে, ফল ও সবজিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করলে তা প্রাণীদের শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু খাবারে এসব কীটনাশকের মাত্রা খুব কম থাকে। মানুষের শরীরে এরা ক্যান্সার সৃষ্টি করেছে কি না তা এখনো সরাসরি প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের সাধারণ জ্ঞান এটাই বলে যে, সাবধান থাকাই উত্তম। বাজারের ফল-সবজি, গোশত-মাছ এখন কিছুই আর রাসায়নিক কীটনাশক কিংবা রাসায়নিক সংরক্ষকমুক্ত নয়। একজন নিরীহ ভোক্তার পক্ষে এসব যাচাই করা কিংবা পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই সতর্কতামূলক প্রতিরোধব্যবস্থা অনুসরণ করাই উত্তম। যেকোনো ফল এবং কাঁচা সবজি গ্রহণের আগে পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে কিংবা ডুবিয়ে রাখতে হবে।
এতদিন চিকিৎসা শাস্ত্রের শিক্ষা মোতাবেক জেনেছি, ফল-সবজি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। আজ নিয়তির পরিহাস, সেই ক্যান্সার প্রতিরোধক শাকসবজি, ফলমূল রাসায়নিক কীটনাশক ও সংরক্ষক ওষুধের অতি প্রয়োগ কিংবা অপব্যবহারে ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেডিসিন বিভাগ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল