গোশত খাওয়ার পর দুধ পান করলে কি সমস্যা হবে

ডা. বিশ্বজিৎ ঘোষ | Feb 08, 2022 03:16 pm
গোশত খাওয়ার পর দুধ পান করলে কি সমস্যা হবে

গোশত খাওয়ার পর দুধ পান করলে কি সমস্যা হবে - ছবি : সংগ্রহ

 

গোশত খাওয়ার পর দুধ পান করলে কি বড় ধরনের সমস্যা হয়। ভারতবর্ষের আয়ুর্বেদ শাস্ত্র কী বলে? এখানে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের বিধান দেয়া হলো।

সুপ্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে খুব সুন্দরভাবে ‘খাদ্য গ্রহণ’ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা আছে। শাস্ত্রে বলা হয়েছে ষড়রস (মধুর,অম্ল, লবণ, তিক্ত, কটু, কষায়) যুক্ত খাদ্য সর্বদা গ্রহণ করা উচিত। এর ফলে শরীর সুস্থ ও নীরোগ থাকে। অর্থাৎ আমরা দৈনন্দিন যে সকল খাদ্য গ্রহণ করি, সেই তালিকায় ষড়রস থাকা প্রয়োজন। এছাড়াও যেকোনো ধরনের খাদ্য গ্রহণের সময় প্রধানত তিনটি বিষয় খেয়াল রাখা খুব জরুরি যেমন,

১) যে খাদ্য গ্রহণ করা হচ্ছে তা কতখানি সুপাচ্য ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।
২) খাদ্যটি বিরুদ্ধ আহার কি না। অর্থাৎ, যদি দুই ধরনের খাদ্য একই সাথে খাওয়া হয় তাহলে পরিপাকে তাদের খাদ্যগুণের বিঘ্ন ঘটবে কি না।
৩) খেতে হবে পরিমাণ মতো এবং খাদ্য গ্রহণের জন্য নির্বাচন করতে হবে সঠিক সময়।

এবার দেখা যাক বিরুদ্ধ আহার কোনগুলো—
 মাছ, ডিম, গোশত একে অপরের তুলনায় গুরুপাক খাদ্য। তিনটি খাদ্যবস্তু একসাথে ভক্ষণ করলে বিভিন্নরকম চর্মরোগ, অর্বুদ ও অম্লপিত্ত রোগের উৎপত্তি হয়। দীর্ঘকালীন উক্ত খাদ্যদ্রব্য একসঙ্গে গ্রহণ করলে ক্যান্সারজাতীয় অসুখ হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে।

 গোশত ও দুধ একসঙ্গে খেতে নেই। মাংস হল রাজসিক আহার এবং দুধ সাত্ত্বিক আহার। মাংস ও দুধের রাসায়নিক গুণাবলিও ভিন্ন। ফলে একসঙ্গে মাংস ও দুধ গ্রহণ করলে পারস্পরিক বিক্রিয়ায় শরীরে এরা বিষ নানা বিষক্রিয়া ঘটায়। যার ফলে বিভিন্ন চর্ম রোগ ও রক্ত সম্বন্ধীয় রোগ দেখা যায়। মাংস ছাড়াও মাছ, লবণ এবং টকজাতীয় খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গেও দুধ গ্রহণ করা বিরুদ্ধ আহার। মাছ, মাংস খেলে সেদিন দুধ না খাওয়াই ভালো।

 দুধের সাথে কাঁঠাল, মাছ, লবণ, খিচুড়ি, মুলো, জাম, ছাতু, তরমুজ ইত্যাদি একেবারেই খাওয়া যাবে না।

 গরম যেকোনো খাদ্য প্রধানত উষ্ণগুণপ্রধান এবং তৎক্ষণাৎ ঠান্ডা জিনিস গ্রহণ একেবারেই উল্টো ব্যাপার। এর ফলে পরিপাকের উপযুক্ত পরিবেশ-এর ভারসাম্য নষ্ট হয় যার ক্ষতিকারক প্রভাব পাচনক্রিয়া ও দাঁতের উপর পড়ে।

 অজীর্ণ রোগে পানি প্রধান ওষুধ। খাবার জীর্ণ হওয়ার পর পানিপান বলপ্রদ। ভোজনকালে পানিপান অমৃতসম, ভোজন শেষ হওয়ার পরেই পানিপান বিষের মতো ক্ষতিকর। এতএব, পরোটা, লুচি বা তেলজাতীয় খাওয়ার পর পানিপান একেবারেই করা উ.চিত নয়।

 কথায় আছে ‘খালিপেটে পানি আর ভরাপেটে ফল’। এখানেই পানি ও ফল গ্রহণের ব্যাপারটা স্পষ্ট। তবুও বলি, ফল খেয়ে পানিপান করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ ফলে কোনো না কোনো অ্যাসিড থাকে। এক্ষেত্রে ফ্রুক্টোজ ও পাকস্থলীর অ্যাসিড সেই পানীয় পানির সাথে মিশে অ্যালকোহল ও কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে যার ফলে পেট ব্যথা ও পেটে বায়ু বৃদ্ধি পায়।

 শাক আর গোশত একসাথে খেতে নেই। আচার্য বাগভট মতে বিশেষ কিছু শাক গোশতের সঙ্গে গ্রহণ বিরুদ্ধ আহার। যেখানে শাক ও গোশত একসাথে গ্রহণে জঠরাগ্নি মন্দতার জন্য আমবিষ তৈরি হতে পারে। এই আমবিষ বিভিন্ন রোগের মূল কারণ। তাই একসঙ্গে শাক ও গোশত খেতে নিষেধ করা হয়।

 খাওয়া যাবে না দইয়ের সাথে ক্ষীর, দুধ, পনির, গরম পদার্থ, কলা।
 ডিমের সাথে ফল, দুধ, মাছ, গোশত, মদ, দই বিরুদ্ধ আহার।
 ঘি ও মধু সমমাত্রায় গ্রহণ বিরুদ্ধ আহার।
 মুরগীর গোশতের সাথে দই খাওয়া একেবারেই অনুচিত।
 তামার পাত্রে ঘি, গরম মধু সেবন, রাতে ছাতু খাওয়া, পায়েস ও ঘোল একসাথে সেবন, পুঁই শাকের সঙ্গে তিল, ভিনিগারের সাথে চা সবগুলোই বিরুদ্ধ আহার।

 দুপুরের বা রাতের খাওয়ার পর এবং তেল জাতীয় খাদ্য দ্রব্যের গ্রহণের পর ও ঠান্ডা পানীয়ের সাথে চা পান করা যাবে না।

মনে রাখবেন—
উপরের খাদ্যগুলো একসাথে সেবন করলে তাদের নিজেদের (রস, গুণ, বিপাক, প্রভাব ইত্যাদি) রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন রকম ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা যায়।
উদাহরণ হিসেবে ত্বকরোগ, অম্লপিত্ত, জ্বর, গ্রহণীরোগ (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম), এমনকি কুষ্ঠ, বন্ধ্যত্বও হতে পারে।

বিরুদ্ধ আহারের পর অসুখ ও সমাধান—
 বিষমখাদ্যজনিত পেট ব্যথায়— ১ চামচ জোয়ানের সঙ্গে একটু সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে গরম পানিসহ দিনে দুই থেকে তিন বার খান।
 বিষমখাদ্যজনিত কারণে বমি বা বমি বমি ভাব হলে মৌরি ভেজানো পানি ও এলাচ চূর্ণ উপকারী।
 বিরুদ্ধ আহারজনিত কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ৩ গ্রাম ত্রিফলা চূর্ণ গরম পানির সঙ্গে দিনে দুবার খান।
 বিষমখাদ্যজনিত কারণে জ্বর হলে অর্ধেক চামচ গোলমরিচ চূর্ণ গরম পানির সঙ্গে দিনে দুই থেকে তিন বার খেতে হবে।

লেখক : আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার মালদহের উত্তর চণ্ডীপুর সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র
সূত্র : বর্তমান

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us