জানেন কি গোটা দুনিয়ায় এক শ’ প্রজাতির খেজুরের চাষ হয়
খেজুর গাছ - ছবি : সংগ্রহ
গোটা দুনিয়ায় এক শ’ প্রজাতির খেজুরের চাষ হয়। আকার, স্বাদ ও বর্ণের দিক দিয়ে প্রতিটি খেজুর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রাখে। ন্যূনপক্ষে ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপযুক্ত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং প্রায় গ্রীষ্মণ্ডলীয় এলাকায় সাধারণত খেজুরের চাষ হয়। সন্তোষজনক খেজুর উৎপাদনে দীর্ঘ গ্রীষ্ম মৌসুমের প্রয়োজন। বিশেষত খেজুর যখন পাকে তখন বৃষ্টিপাত না হওয়াই ভালো। মরু এলাকা খেজুর চাষের জন্য উপযোগী। আঙ্গুর, জলপাই, ডুমুরের মতো খেজুরগাছেরও খরা প্রতিরোধক ক্ষমতা রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের মাটিতে খেজুরের চাষ হয়। লবণাক্ততা সহ্য করার ক্ষমতা খেজুরের সহজাত। তবে অধিকতর উৎপাদনে স্বল্প লবণাক্ততা এবং পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন। সাধারণত বিচির সাহায্যে এবং কোথাও কোথাও ডালের কলম দিয়া খেজুরের চাষ হয়।
আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভি ‘নবীয়ে রহমত’ গ্রন্থে বলেন, মদিনার খেজুরবাগানগুলো ছিল ঘেরা ও বেড়াযুক্ত। এতে এক কাণ্ড ও দু’কাণ্ডওয়ালা খেজুর বৃক্ষ ছিল। মদিনায় বহু প্রজাতির খেজুর ছিল আর সবগুলোর নাম মনে রাখাও মুশকিল। মদিনার বাসিন্দারা দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় খেজুরের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নত জাত করার বহু পন্থা জানা ছিল, যেগুলোর মধ্যে নারী-পুরুষের পার্থক্য এবং সেগুলোর কলমের ব্যবহারও ছিল প্রচলিত। যাকে তা’বির বা কলম শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হতো। তা’বিরের অর্থ স্ত্রী খেজুরের খোসা চিরে পুরুষ খেজুরের রেণু ভেতরে প্রবিষ্ট করা। এ প্রক্রিয়াকে ইংরেজি ভাষায় বলা হয় পরাগায়ন।
ইমাম মালিক রচিত ‘মুয়াত্তা মালিকের’ বর্ণনানুযায়ী মদিনায় এমন ঘন বাগান ছিল, চড়–ইয়ের মতো ক্ষুদ্রাকৃতির পাখি এসব বাগানে প্রবেশ করলে বের হতে পারত না। হজরত আবু তালহা (রা:)-এর কাহিনী বর্ণিত আছে, তিনি তার বাগানে একদা নামাজ আদায় করছিলেন এমন সময় একটি চড়ুই পাখি বাগান থেকে বের হওয়ার আশায় এদিক সেদিক উড়ে বেড়াচ্ছিল। তিনি নামাজের কথা ভুলে পাখির এ প্রাণান্তকর চেষ্টার দৃশ্য দেখতে থাকেন। এ কাহিনীর শেষাংশে বর্ণিত হয়েছে যে, এ গাফিলতি ও অবহেলার দরুন তিনি বাগানটি সাদকা করে দেন।
খেজুরবাগানগুলো চার পাশে প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত থাকত এবং এই ধরনের প্রাচীরঘেরা বাগানকে মদিনার লোকেরা ‘হাইত’ বলত। মদিনার অনেক কূপের পানি প্রাচুর্য ও মিষ্টতায় মশহুর ছিল বিধায় এসব কূপের ঝর্নাধারার সাথে ছোট ছোট খাল বা নালা সংযোগ করে খেজুরবাগানে পানি সরবরাহ করা হতো অধিকতর ফলন পাওয়ার আশায়। ইরাক হচ্ছে, পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় খেজুর উৎপাদনকারী দেশ। বিশ্বের ৮০ ভাগ খেজুর ইরাক থেকে গোটা দুনিয়ায় রফতানি হয়। ১৬০ কিলোমিটারব্যাপী দজলা ও ফোরাত নদীর অববাহিকা অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত বাগানগুলো থেকে যেসব খেজুর উৎপন্ন হয় তা গোটা ইরাকের মোট খেজুর উৎপাদনের অর্ধেকাংশের চাহিদা মেটায়। এ এলাকা পরিবেশগত দিক দিয়ে খেজুর উৎপাদনে বেশ উপযোগী। পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন অনুকূল পরিবেশ নেই। পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ খেজুর উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরান, সৌদি আরব, আলজেরিয়া, লিবিয়া, মিসর, পাকিস্তান, মরক্কো, তিউনিসিয়া, সুদান, ফ্রান্স, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স স্বল্প উৎপাদনকারী দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে ৯০ শতাংশ খেজুর আসে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে। বাকি ১০ শতাংশ আসে দক্ষিণ আরিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকে। ডিগলেক্ট নুর নামক একধরনের অর্ধ শুষ্ক খেজুর গোটা আমেরিকার ৭৫ শতাংশ মানুষ খেতে পছন্দ করেন, বাকি ২৫ শতাংশ অন্যান্য প্রজাতির খেজুর আহার করেন।
খেজুর উৎপাদনে বিশ্বে পাকিস্তানের স্থান চতুর্থ এবং রফতানিতে দ্বিতীয়। পাকিস্তানে ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে ১৩০ প্রজাতির খেজুর উৎপাদিত হয়। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশে পাকিস্তান খেজুর রফতানি করে।