খেজুর মহান আল্লাহর বিচিত্র নিয়ামত

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন | Feb 06, 2022 03:46 pm
খেজুর

খেজুর - ছবি : সংগ্রহ

 

খেজুর বেশ পুষ্টিকর, সুমিষ্ট ও উপাদেয় খাবার। খেজুরের খাদ্যমান বেশ সমৃদ্ধ। এ ছাড়া খেজুরে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, ক্যারোটিন-সহ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। খেজুরে যে শর্করা পাওয়া যায় তা গ্লুকোজ ও ফ্রকটোজ আকারে থাকে। এর খাদ্যমান আখের চিনির তুলনায় শ্রেয়তর। গাছে পাকা খেজুর স্বাভাবিক অবস্থায় নরম ও রসালো। রোদে শুকিয়ে শুকনো খেজুর তৈরি করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় গড়ে প্রতিদিন খেজুর ৩৫ শতাংশ ওজন হারায়।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে ভেষজ গুণসমৃদ্ধ খেজুরের খুব কদর। ইরান থেকে প্রকাশিত সাময়িকী ‘মাহজুবাহের’ বিবরণ অনুযায়ী, খেজুরের রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ও রোগ প্রতিকার ক্ষমতা। সহজপাচ্য বলে মানবদেহে খেজুর বাড়তি শক্তির জোগান দেয়। গরুর দুধের মধ্যে খেজুর সিদ্ধ করে পান করলে শিশু থেকে বৃদ্ধ ব্যক্তি ভগ্ন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হয়। খিঁচুনি রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, আন্ত্রিক গোলযোগ নিরাময় এবং ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্র পরিষ্কারে খেজুর কার্যকর ভূমিকা রাখে। এ ক্ষেত্রে সারা রাত পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রেখে সকালে শরবতের মতো পান করতে হবে। অতিরিক্ত মদ্যপানজনিত সমস্যা বিশেষত মদের নেশা কাটাতে খেজুর বেশ উপকারী। এ ক্ষেত্রে খাবার পানিতে খেজুর ভিজয়ে রেখে পানিটুকু রোগীকে খাওয়াতে হবে। দুর্বল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া সবল করতে সপ্তাহে দু’দিন রাতে বিচি বের করে খেজুর পানিতে গুলিয়ে সকালে পান করতে হবে। এক মুঠো খেজুর ছাগলের দুধে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে দুধের মধ্যে খেজুর গুলিয়ে একটু করে এলাচি ও সামান্য মধু অনুপানসহ খেলে যৌনদুর্বলতাজনিত জটিলতার অবসান ঘটে। শিশুর নানাবিধ রোগ প্রতিরোধে খেজুর অত্যন্ত উপকারী। খেজুরের সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ালে দাঁত উঠাজনিত নানা রোগ বিশেষত আন্ত্রিক গোলযোগ ও অস্থিরতা লোপ পায়। খেজুর শিশুর দাঁতের মাড়ি শক্ত করে।

খেজুর ও খেজুর বৃক্ষ মহান আল্লাহর এক বিচিত্র নিয়ামত। এর কোনো অংশ ফেলনা নয়। দুনিয়ার অন্য কোনো বৃক্ষ বা ফলের এমন বহুবিধ ব্যবহার হয় কি না সন্দেহ, তাই আরব দেশে খেজুরগাছকে বা ‘রানী গাছ’ নামে অভিহিত করে। খেজুর ও খেজুর বৃক্ষের প্রতিটি অংশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মূল্যবান। খেজুর আরববাসীর প্রধান কার্বোহাইড্রেট খাদ্য। খেজুরশাঁস মানুষের খাদ্য এবং খেজুরের বিচি উট, ঘোড়া এবং সাহারার মরূদ্যানে কুকুরের খাদ্য। এ ছাড়া অনেক দেশে খেজুর বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খাওয়ার রেওয়াজ প্রচলিত আছে। খেজুরের বিচি আগুনে ঝলসানোর পর পাউডার করে একধরনের পানীয় তৈরি করা হয়, যা আরব দেশে বেশ জনপ্রিয়। খেজুরগাছ থেকে একধরনের সুমিষ্ট ও পুষ্টিকর রস পাওয়া যায়। খেজুরের রস দিয়ে গুড় ও বিভিন্ন শীতপিঠা তৈরি করা হয়।

খেজুরগাছের উপরের অংশ বিশেষভাবে কেটে রস বের করার পদ্ধতি বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। তথ্য অনুযায়ী, খেজুর বৃক্ষ ৮০০ ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়। খেজুর বৃক্ষের কাণ্ড দিয়ে গৃহনির্মাণের টিম্বার, পাতার আঁশ দিয়ে ঝুড়ি, পাতার শাঁস প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে যে সিরাপ, অ্যালকোহল ও ভিনেগার বানানো হয় তা আরব বিশ্বে বেশ প্রচলিত। যেসব খেজুর বৃক্ষের ফলন কম হয় তা গোড়া কেটে ফেললে বেশ কিছু নতুন কুঁড়ি গজায়। এসব কুঁড়ি সালাদ ও সবজি হিসেবে উপাদেয়। ফিনিক্স সিলভেস্ট্রিস নামক প্রজাতির খেজুরগাছের নরম বহিঃবর্তীস্তর থেকে একধরনের চিনি ভারতে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয়।

খেজুর উৎপাদনে বিশ্বে পাকিস্তানের স্থান চতুর্থ এবং রফতানিতে দ্বিতীয়। পাকিস্তানে ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে ১৩০ প্রজাতির খেজুর উৎপাদিত হয়। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশে পাকিস্তান খেজুর রফতানি করে। শেষ নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পছন্দের খাবার ছিল খেজুর। পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলমান রমজানে খেজুর দিয়ে ইফতার করেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইফতার করবে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, কেননা খেজুরের মধ্যে নিহিত আছে বরকত। যদি খেজুর দুষ্প্রাপ্য হয় তাহলে পানি দিয়ে ইফতার করো, কেননা পানি পরিচ্ছন্ন।’ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ও নিরাময়ে খেজুর খাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে তার। মদিনার ‘আজওয়া’ নামক উন্নত জাতের খেজুর বেশ মূল্যবান। নবী করিম সা: বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি ‘আজওয়া’ খেজুর খাবে, সে দিন কোনো বিষ ও জাদুটোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না।’’


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us