ননস্টিক বাসনে দেয়া রাসায়নিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু নিরাপদ?

অন্য এক দিগন্ত | Jan 30, 2022 04:12 pm
ননস্টিক বাসনে দেয়া রাসায়নিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু নিরাপদ?

ননস্টিক বাসনে দেয়া রাসায়নিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু নিরাপদ? - ছবি : সংগ্রহ

 

ননস্টিক বাসন। বহু রাঁধুনির কাছে আশীর্বাদের মতো। মাছ রান্না করার পর বা দুধ গরম করার পর তারপর সেই বাসন থেকে ঘষে ঘষে দাগ তুলে হাত ব্যথা করার দিন এখন অতীত। আজকের ব্যস্ত মানুষ, যে রাত্রি দশটায় কাজ থেকে ফিরে চিকেন উইংস ভাজতে বসবে, তার ননস্টিক ছাড়া গত্যন্তর নেই। কিন্তু এই ননস্টিক করার জন্য বাসনে যে রাসায়নিকের প্রলেপ দেয়া হয়, সেটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা নিরাপদ?

রান্নার বাসন নানা উপাদানে তৈরি হতে পারে। যেমন, কাচ, সেরামিক বা ধাতু। রান্নার সময়ে যে বাসনের গায়ে খাবার পুড়ে লেগে যায়, সেটা মূলত ধাতব বাসনে। এর জন্যই এইসব ধাতব বাসনের ভেতরে নানারকম রাসায়নিক কোটিং দেওয়া হয়। এর ফলেই রান্নার মশলা পুড়ে গেলেও কড়াই বা প্যানের গায়ে আর লেগে থাকে না। তবে যা কিছু স্বাস্থ্যের সমস্যা বা চিন্তাভাবনা, তা আবার এই রাসায়নিকের জন্যই।

যে রাসায়নিকের গ্রুপ এই ননস্টিক প্রলেপ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়, তাদের এককথায় বলে ফ্লুওরোপলিমার। এই গ্রুপে কয়েক হাজার রাসায়নিক রয়েছে; তার মধ্যে বিশেষ যে রাসায়নিক ননস্টিক বাসনে ব্যবহার হয়, তাকে বলে পি এফ এ, বা পলিফ্লুওরোঅ্যালকাইল যৌগ। এর মধ্যে যে যৌগটি সবথেকে বেশি বাসন প্রলেপ দিতে ব্যবহার হয়, তাকে বলে টেফলন। ১৯৩৮ সালে আবিষ্কৃত এই রাসায়নিকটি হল মানুষের জানা সবচেয়ে পিচ্ছিল বস্তু। ফলে যত পোড়া দাগই থাকুক না কেন, টেফলনের গায়ে কিছুই লেগে থাকতে পারে না!

কিন্তু রান্নায় ব্যবহার হচ্ছে মানে কড়াই থেকে খাবারের সাথে এই রাসায়নিকটিও আমাদের পেটে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। টেফলন জাতীয় রাসায়নিক আমাদের শরীরে বেশি পরিমাণে প্রবেশ করলে নানা অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। হতে পারে থাইরয়েডের সমস্যা, ক্যান্সার, লিভারের অসুখ। আসতে পারে বন্ধ্যত্ব বা গর্ভস্থ শিশুর ওজন কমে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এই ধরনের রাসায়নিককে বলা হয় ‘ফরএভার কেমিক্যাল’। অর্থাৎ, একবার আমাদের শরীরে ঢুকলে এই রাসায়নিক চিরকাল জমে থাকে। এবং বছরের পর বছর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে জমা হতে হতে একসময় সৃষ্টি হয় মারণরোগের।

তবে সব পি এফ এ সমান ক্ষতিকর নয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর ছিল পিএফও নামে একটি রাসায়নিক। যে কারখানায় এই রাসায়নিক তৈরি হতো, সেখানকার শ্রমিকদের মধ্যে নানা রকম ক্যান্সার দেখা যেত। তবে সম্প্রতি এই রাসায়নিক ব্যবহার কমিয়ে কম ক্ষতিকর পিএফবিএস নামে অন্য একটি যৌগ ব্যবহার করা হচ্ছে।

ননস্টিক বাসনে রান্না করলেই যে এই রাসায়নিক আমাদের পেটে ঢুকবে, তা নয়। দু’ভাবে এই রাসায়নিক খাবারে মিশতে পারে। এক নম্বর হলো খুব বেশি তাপমাত্রায় খুব বেশিক্ষণ রান্না করলে। উচ্চ তাপমাত্রায় এই যৌগ ভেঙ্গে যেতে পারে। সেই জন্য ননস্টিক প্যানে কিছু ভাজার কাজ করা নিরাপদ হলেও বহুক্ষণ রান্না করতে হয়, এরকম পদ এই বাসনে করা উচিত নয়। বিশেষত বেকন বা স্টেক রান্না করতে অনেকটাই উচ্চ তাপমাত্রার প্রয়োজন। এই ধরনের খাবার ননস্টিক প্যানে রান্না না করাই ভালো। দেখা গেছে যে অনেকক্ষণ ধরে এই বাসন আগুনের ওপর রাখলে অনেক সময়ে পলিমারের ধোঁয়া বেরোতে শুরু করে। সেই ধোঁয়া নাকে গেলে পলিমার ফিউম ফিভার হতে পারে। আর
দ্বিতীয় সাবধানতা হলো যদি বাসন মাজতে গিয়ে চলটা উঠে যায়। সেই জন্য এই ধরনের বাসন স্পঞ্জ বা কাপড় দিয়ে মাজা উচিত। স্টিলের উল জাতীয় কিচেন স্ক্রাবার দিয়ে নয়। যদি দেখেন যে আপনার বাসনের কালো আস্তরণ কোনো জায়গায় উঠে নিচের সাদা ধাতব রঙ বেরিয়ে পড়েছে, তাহলে সেই বাসন পরিত্যাগ করাই উচিত।

তবে ননস্টিক বাসন থেকেই একমাত্র এই যৌগ আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে, এমন নয়। আরো নানা পণ্যে এই যৌগের ব্যবহার রয়েছে। ফলে আমরা ননস্টিক ব্যবহার না করেও প্রতিনিয়ত এই রাসায়নিক নিজেদের অজান্তেই ভক্ষণ করে চলেছি। আমেরিকায় দেখা গেছে যে বেশিরভাগ মানুষের রক্তেই পিএফএ রয়েছে। আমাদের দেশে কোনো গবেষণা এখনো হয়নি। তবে শিল্পায়নের এবং নগরায়নের সাথে এই রাসায়নিকও যে আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, সে কথা বলাই বাহুল্য।

লেখক : ডা. রুদ্রজিৎ পাল. বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
সূত্র : বর্তমান


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us