যেভাবে পেতে পারেন ভিটামিন ডি
যেভাবে পেতে পারেন ভিটামিন ডি - ছবি : সংগ্রহ
ভিটামিন ডি-এর মূল উৎস হলো সূর্যালোক। আগে আমাদের হাতে সময় ছিল। দিনের কোনো একটা সময় একটু গায়ে রোদ লাগিয়ে বসার অবসর মিলত। বাচ্চাদের গায়ে একটু তেল মাখিয়ে রোদে রাখা হতো। ত্বকেই ভিটামিন ডি সংশ্লেষ হতো ও ভিটামিন ডি-এর চাহিদাও মিটে যেত। এখনকার দিনে এসব অভ্যেস অতীতই বলা চলে। ফলে বহু লোকই ভিটামিন ডি-এর অভাবে ভুগছেন। ভিটামিন ডি-এর অভাবে শরীরে ক্যালশিয়াম, ফসফরাসের মতো খনিজের শোষণও সঠিকভাবে হচ্ছে না। কমবয়সেই হাড়ের কাঠামো হয়ে পড়ছে দুর্বল।
ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হওয়ার পিছনে আরো একটা বড় কারণ হলো খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন। ভিটামিন ডি ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন। চর্বি বা স্নেহ পদার্থে দ্রবণীয় ভিটামিন। ফলে আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি শোষণের জন্য ডায়েটে চর্বিজাতীয় খাদ্যের জোগান বজায় থাকা জরুরি। ডিমের কুসুমে থাকে ভিটামিন ডি। ডিমের কুসুম খুব ভালো ফ্যাটের উৎসও বটে। এখন অনেকেই ডিমের সাদা অংশ খেলেও কুসুম খেতে চান না। বহু মানুষ কোলেস্টেরল, ব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন। ডিমের কুসুমে ভিটামিন ডি ছাড়াও থাকে প্রয়োজনীয় খনিজ। খানিকটা প্রোটিনও। এখন ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা সম্পূর্ণভাবে ডিমের কুসুম ও অন্যান্য চর্বিপ্রধান যেমন মাখন, ঘি, শ্রেডেড চিজ খাওয়া বন্ধ করে দিলে ভিটামিন ডি শরীরে সঠিকভাবে শোষিত হওয়ার সুযোগ পায় না। আবার ভিটামিন ডি-এর অন্যতম উৎস হল দুধ। এদিকে আমরা আজকাল দুধও কিনি ফ্যাট ছাড়া। এই দুধ বাজারে ডাবল টোনড মিল্ক বা স্কিমড মিল্ক নামে পরিচিত। দুধ থেকে ফ্যাট নিষ্কাশনের সময় কিছুটা হলেও ভিটামিন ডি-এর মাত্রাও হ্রাস পায়। শরীরে ভালো ফ্যাট প্রবেশেরও সুযোগ কমে যায়। সেই আমরা ডায়েট নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ভিটামিন ডি থেকে বঞ্চিত হই।
সুতরাং, একটা বিষয় পরিষ্কার যে ফ্যাটজাতীয় খাবার ছাড়া ভিটামিন ডি পাওয়া অসম্ভব। অতএব বুদ্ধি করে ফ্যাটজাতীয় খাদ্য খেতে হবে।
করবেন কী?
• হার্টের রোগী, ডায়াবেটিসের রোগী বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী একেবারেই ডিমের কুসুম খেতে পারবেন না, এমন নয়। সপ্তাহে এক দিন অন্তর করে মোট তিন দিন একটা করে কুসুমশুদ্ধ গোটা ডিম খাওয়া যায়। তাতে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার বিশেষ হেরফের হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এমনকি সপ্তাহে ২-৩ দিন তরিতরকারিতে একটু মাখন, শ্রেডেড চিজ ব্যবহার করাই যায়।
• কড লিভার অয়েল খাওয়া নিয়ে একটু নাকউঁচু ভাব দেখা যায় সাধারণ মানুষের মধ্যে। তবে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মেটাতে ডায়েটিশিয়ান বা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ক্যাপসুলের মাধ্যমে কড লিভার অয়েল খাওয়া যায়।
• স্বাস্থ্যের কারণে গরুর দুধ খেতে না পারলে ফর্টিফায়েড সয়া মিল্ক খাওয়া যায়। এই দুধে প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও ভিটামিন ডি মেলে।
• খাওয়া যায় ফর্টিফাটেড আমন্ড মিল্ক। আমন্ড মিল্ক-এ আলাদা করে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, অন্যান্য ভিটামিনের সঙ্গে ভিটামিন ডি৩ যোগ করা থাকে।
• সূর্যমুখী তেল, রাইস ব্র্যান অয়েল-এও এখন আলাদা করে ভিটামিন ডি৩ যোগ করা হয়।
• মাশরুম ভিটামিন ডি-এর খুব ভালো উৎস। যারা নিরামিষাশী তাদের জন্য প্রোটিন ও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণে মাশরুম অত্যন্ত উপযোগী খাদ্য।
• ইয়োগার্ট-এও ভিটামিন ডি থাকে। প্যাকেটজাত বাজারচলতি ইয়োগার্ট কিনে খেতে পারেন।
• বহু কমবয়সী ছেলেমেয়ে মাছের ত্বক, তেল খেতে চান না। অথচ মাছের তেল ও ত্বকে থাকে ওমেগা থ্রি-এর মতো প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
শেষ কথা
শুধু ডায়েট নয়। গায়ে রোদ লাগানো খুব দরকারি বিষয়। তাই প্রতিদিন সকালে গায়ে আধঘণ্টা মিষ্টি রোদ লাগানোর চেষ্টা করুন। সুস্থ থাকুন।
লেখক : ডায়েটিশিয়ান, নারায়ণ মেমোরিয়াল হাসপাতাল
সূত্র : বর্তমান