বাম হাতের অনামিকাতেই কেন বিয়ের আংটি পরানো হয়
বাম হাতের অনামিকাতেই কেন বিয়ের আংটি পরানো হয় - ছবি : সংগৃহীত
বিয়েতে আংটি পরানোর চল প্রায় সব দেশেই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। বিয়ে বা বাগদানের সময় হবু বর-বধূকে যে আংটি পরানো হয়, তা বাম হাতের অনামিকায় পরানো হয়। এই রেওয়াজও সর্ব দেশের সর্বকালেরই। বাম হাতের অনামিকায় আংটি মানে বিয়ের লক্ষণ। নিদেনপক্ষে বাগদান হয়ে গেছে বোঝা যায়। তাই তো অনামিকাকে ইংরেজিতে বলি রিং ফিঙ্গার। বিশ্বজুড়েই এমন রীতি আজও সব ধর্মের মানুষই বিশ্বাস করেন এবং অনুসরণও করেন। কিন্তু কেন এমনটি করা হয়? তর্জনি, মধ্যমা বা কনিষ্ঠাঙ্গুলিতেই বা কেন বিয়ের আংটি পরানো হয় না?
প্রাচীন কালের মানুষ বিশ্বাস করত যে বাম হাতের অনামিকা সরাসরি হৃৎপিণ্ডের সাথে সংযুক্ত। তাই সেই আঙুলে আংটি পরা মানে হলো জীবনসঙ্গীর সাথে চিরন্তন প্রেম এবং সংযুক্তির প্রতীক। লাতিন ভাষায়, বাম হাতের অনামিকা ‘ভেনা অ্যামোরিস’ নামেই পরিচিত। যার অর্থ ‘ভালোবাসার ধমনী’। মানুষ বিশ্বাস করে, বাম হাতের অনামিকায় বিয়ের বা বাগদানের আংটি পরলে তা কোনো নারীকে তার জীবনসঙ্গীর সাথে ভালোবাসার বন্ধন গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
এ প্রসঙ্গে, ষোড়শ শতকের একজন ডাচ চিকিৎসক লেভিনাস লেমনিয়াস তার বইয়ের দুটি লাইন উদ্ধৃত করা যেতেই পারে। তিনি সেখানে লিখেছেন, যদি কোনো নারী একটি সোনার আংটি অনামিকায় ঘষতে থাকেন, তাতে তার হৃদয়ে এক মৃদু আলোড়নের সৃষ্টি হয়। তার দেহ-মন সতেজ হয়। যদিও লেমনিয়াসের এই তত্ত্বেরও কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
কিন্তু অন্য আঙুলগুলো কী দোষ করল? আসলে বহু যুগ ধরেই এক একটি আঙুলের সাথে এক একটি সম্পর্কে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যেমন- বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ বা বুড়ো আঙুল নির্দেশ করে মা-বাবাকে, তর্জনি ভাই-বোনদের, মধ্যমা নিজেকে, অনামিকা জীবনসঙ্গীকে আর কনিষ্ঠাঙ্গুলি নির্দেশ করে সন্তানদের।
চীনের আকুপাংচারবিদদের মতে, আপনি যদি হাত দুটি প্রার্থনার ভঙ্গিতে আনেন আর মধ্যের আঙুলগুলো একত্র করেন, এরপর আপনি সব আঙুল বিচ্ছিন্ন করতে পারলেও রিং ফিঙ্গার আলাদা করতে পারবেন না। এ দিয়ে বোঝা যায়, আমাদের স্ত্রী বা বাগদত্তার সাথে আমরা আর বিচ্ছিন্ন হবো না।
অন্যদিকে, জ্যোতিষ শাস্ত্রমতে, প্রেম স্বর্গীয়, যা সবার মধ্যে থাকতে পারে। রবির আঙুল অনামিকা আর তাই প্রেমের আঙুলও। বহুকাল ধরে বাঁ হাতের অনামিকায় পরানো হয় আংটি, নারীকে তাই বলা হয় বামা। মনে করা হয়, দুটি প্রেমময় হৃদয়ের মিলন হয় গোলাকার আংটির রূপ ধরে। কেন গোলাকার? গোল দিয়ে মূলত বোঝানো হয় শাশ্বত, চিরন্তন। বৃত্তের বলয়ের যেমন কোনো প্রান্ত নেই, তেমনই ভালোবাসাও অন্তহীন। তবে ধমনির সাথে অনামিকার তত্ত্বের কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
কিভাবে শুরু হলো এই রীতি? আজ থেকে প্রায় হাজার পাঁচেক বছর আগে মিসরীয় সভ্যতায় অন্তহীন জীবনের প্রতীক হিসেবেই বৃত্তাকার এই গহনার আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্যাপিরাসে মমির ওপরেও আংটির অস্তিত্ব এই তত্ত্ব নিশ্চিত করে। তবে গোড়ার দিকে অবশ্য কেবল মাত্র নারীরাই আংটি ব্যবহার করতেন। পুরুষদের ব্যবহার শুরু হয় এরও বেশ কিছু বছর পরে।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, রোমান আমলে বাঁকানো চাবি ছিল প্রেমের প্রতীক। তাই ওই আমলে বিয়ের আংটিতে স্বামীর ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে সেরকম একটি চাবিও ঝোলানো থাকত। কিন্তু আকারে সেই আংটি বেশ বড়ই হতো। তাই গৃহস্থালীর কাজ করার সময় তা যাতে নষ্ট না হয়ে যায়, তাই স্বামীরা স্ত্রীদের আরো একটি আংটি (মৃলত সেই আংটি লোহার হতো) দেয়ার চল ছিল।
তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। বাম নয় ডান হাতে আংটি পরার চল রয়েছে ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, কিউবা, ইসরাইল, জার্মানি, অস্ট্রিয়াসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশে। ইসরাইলে আবার বিয়ের আংটি নিয়ে অন্য এক রীতি রয়েছে। তারা ডানহাতের তর্জনীতে বিয়ের আংটি পরেন। মনে করেন, বিয়ের আংটি এই আঙুলেই পরাতে হবে। ইহুদিরা আবার মনে করেন, আংটি থাকবে বরের কাছেই। যা কঠিন ধাতু আর রত্নখচিত হবে না।
যদিও অনেকেই আবার প্রচলিত ধারণার বাইরে যান, যেমন প্রিন্সেস ডায়ানা পরেছিলেন রঙিন রত্নের আংটি, অনেকে পরেন নীলকান্তমণি।
সূত্র : বর্তমান