উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও কোভিড রিপোর্ট কেন হয় ‘নেগেটিভ’?

উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও কোভিড রিপোর্ট কেন হয় ‘নেগেটিভ’? - ছবি : সংগ্রহ
বেশ কিছু দিন ধরেই হালকা জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছেন? কোভিডের লক্ষণ ভেবে আর দেরি না করে করোনা পরীক্ষাও করিয়ে ফেললেন। তবে উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও রিপোর্ট এলো ‘নেগেটিভ’। চিকিৎসকরা বলছেন, রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পিছনে থাকতে পারে বেশ কিছু কারণ।
বাজারে এখন কোভিড টেস্ট কিটের বেশ রমরমা। কিটগুলোর সাহায্যে ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘরে বসেই মিলছে ফলাফল। আর দামও খুব বেশি নয়। তাই অনেকেই বাড়িতে নিজে নিজেই সেরে ফেলছেন কোভিড পরীক্ষা। তবে গবেষকদের মতে, এই সব ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া সব সময়ে ঠিক হয় না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই ফলাফল ‘নেগেটিভ’ আসে। তা ছাড়া, বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে গাফিলতি থাকে। সে ক্ষেত্রেও রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসতে পারে। গবেষকরা বলছেন, বিশেষ করে ওমিক্রন অনেক সময়েই র্যাপিড পরীক্ষায় ধরা পরছে না বলে দেখা যাচ্ছে। কারণ, র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সংবেদনশীলতা ৫০ শতাংশের বেশি নয় বলেই মনে করছেন গবেষকরা।
রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ হওয়ার আরও কারণ থাকতে পারে বলে মনে করাচ্ছেন চিকিৎসকরা। রোগীর ভাইরাল লোড হয়তো এতটাই কম যে, তা পরীক্ষায় ধরা পরে না। আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় যার উপর ভিত্তি করে কোভিড সংক্রমণ চিহ্নিত করা হয়, সেটি হল ‘সিটি ভ্যালু’ বা ‘সাইকেল থ্রেশহোল্ড ভ্যালু’। আইসিএমআর-এর নির্দেশ অনুযায়ী, সিটি ভ্যালু ৩৫-এর বেশি হলে সেই ব্যক্তি কোভিড আক্রান্ত নন। একজনের ভাইরাল লোড খুব কম হওয়ার অর্থ তার সিটি ভ্যালু ৩৫ বেশি হবে এবং পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসবে।
কিন্তু কারো যদি সাধারণ কোভিড উপসর্গ থাকে এবং আরটি-পিসিআরের রিপোর্ট নেতিবাচক হয়, তা হলেও তার সাত দিন নিভৃতবাসে থাকা জরুরি। সাথে অক্সিজেনের মাত্রা ঘন ঘন মাপুন। জ্বর থাকলে দেহের তাপমাত্রা মাপুন। কোভিডের লক্ষণ আসার পঞ্চম বা ষষ্ঠ দিনের শেষে আরো এক বার পরীক্ষা করানোও জরুরি।
আপনি লং কোভিডে আক্রান্ত নন তো?
হালকা জ্বর, সর্দি কিংবা গা ব্যথা রয়েছে বেশ কিছু দিন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপসর্গগুলো এতই সামান্য যে পরীক্ষা করানোর কথা মনেও আসেনি। বুঝতে পারছেন না আদৌও কোভিড আক্রান্ত কি না? সাবধান! একেই কিন্তু লং কোভিড কিংবা পোস্ট কোভিডের লক্ষণ বলছেন চিকিৎসকরা।
কাদের মধ্যে লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি তাই নিয়েই চলছে নানা গবেষণা। কোভিডের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে আক্রান্ত কিছু মানুষ সেরে উঠেছেন খুব তাড়াতাড়ি। আবার অনেকের কোভিড থেকে সেরে উঠতে বেশ কিছুটা সময় লেগেছে। এই ধরনের লং কোভিড সমস্যায় ভুগেছেন করোনা আক্রান্ত পাঁচজনের মধ্যে একজন। শারীরিক, স্নায়বিক সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যেই কি লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি?
ঠিক কোন জৈবিক কারণগুলো লং কোভিডের আশঙ্কা বাড়াতে পারে তার সন্ধান দিয়েছেন গবেষকদের একটি দল যারা ২০০ জন কোভিড আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে প্রায় দুই থেকে তিন মাস ধরে গবেষণা চালিয়েছেন।
জার্নাল ‘সেল’-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে চারটি কারণ চিহ্ণিত করা হয়েছে যা বলে দেবে কোন করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে লং কোভিডের উপসর্গগুলো দেখা যেতে পারে। এক ব্যক্তির করোনভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার প্রথম দিকেই এই লক্ষণগুলো সনাক্ত করা যাবে।
গবেষকরা বলেছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীর সংক্রমণের পরিমাণ প্রাথমিক দিকে কতখানি তার ওপরেই নির্ভর করবে তিনি লং কোভিডে আক্রান্ত হবেন কি না। তাদের মতে, এই গবেষণা লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাকে অনেকখানি কমাতে পারে। লং কোভিডের উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের কোভিডের প্রথম দিকেই
গবেষকরা শনাক্ত করা চারটি কারণের মধ্যে একটি হলো সংক্রমণের প্রথম দিকে রোগীর রক্তে করোনভাইরাস আরএনএর স্তর, যা ভাইরাল লোডের একটি সূচক। আরেকটি কারণ হলো রক্তে এমন কয়েকটি অটোঅ্যান্টিবডির উপস্থিতি যা শরীরের টিস্যুগুলো আক্রমণ করে। মূলত লুপাস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রে শরীরে এই অটোঅ্যান্টিবডিগুলো আক্রমণ হয়। তৃতীয় কারণ হলো এপস্টাইন-বার ভাইরাসের পুনঃসক্রিয়তা। এই ভাইরাস সাধারণত অল্পবয়সীদের শরীরে বাসা বাঁধে,এবং তারপর সুপ্ত হয়ে যায়। এই গবেষণায় বলা হয়েছে, টাইপ টু ডায়াবিটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যেও লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা