ফিলিস্তিনিদের প্রতি কেন সহানুভূতিপূর্ণ হয়ে ওঠলেন ডেসমন্ড টুটু
ডেসমন্ড টুটু - ছবি : সংগ্রহ
দক্ষিণ আফ্রিকা একটি সুন্দর দেশ। সেখানকার সম্পদ ও কৌশলগত সুবিধার জন্য সবাই আফ্রিকামুখী। অনেকের মতে, দেশটির মানুষগুলোও সুন্দর। ওখানেই ম্যান্ডেলা ও টুটুর মতো ব্যক্তিত্ব জন্ম। নানা কাহিনী ও ইতিহাস রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার। রবেন দ্বীপে নেলসন ম্যান্ডেলা দীর্ঘ কারাবাসের অসহায়ত্বের সময় অতিবাহিত করেছেন। বিখ্যাত সোয়েটো অরল্যান্ডো ওয়েস্ট স্ট্রিটে নোবেল বিজয়ী ম্যান্ডেলা এবং টুটু থাকতেন ও দু’জনে ঘুরে বেড়াতেন; চিরন্তন হাস্যোজ্জ্বল মুখ ডেসমন্ড টুটুর; সেই সাথে আকর্ষণীয় সংক্রমক হাসি।
ডেসমন্ড টুটু ৭ অক্টোবর ১৯৩১ ক্লার্কসডর্প, দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ কেপটাউনে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকান অ্যাংলিকান ধর্মগুরু যিনি ১৯৮৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী ভূমিকার জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। হয়ে ওঠেন বৈশ্বিক আইকন।
টুটু মেডিক্যাল ক্যারিয়ার চেয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক অক্ষম ছিল বিধায় স্কুলশিক্ষক হয়েছিলেন। এই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি জোহানেসবার্গের সেন্ট পিটারস থিওলজিক্যাল কলেজে যোগ দেন। ১৯৬১ সালে একজন অ্যাংলিকান যাজক নিযুক্ত হন। ১৯৬৬ সালে লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেসের সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন, ১৯৭৫ সালে জোহানেসবার্গে সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালের ডিন নিযুক্ত হন। তিনি ওই পদে অধিষ্ঠিত প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান। টুটু লেসোথোর বিশপ হিসেবেও কাজ করেন।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান এবং বহু-জাতি গণতন্ত্রের সূচনা নেলসন ম্যান্ডেলার হাতে হয়। তবে নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তিনি একা ছিলেন না টুটুও সঙ্গী ছিলেন। তিনি তার দেশের সত্যিকারের আত্মার মতো। দেশের গঠনাকৃতি সামাজিক বুনন সম্পর্কে তার ধারণা ও স্বপ্ন তিনি দেখেছেন। টুটুকে স্বপ্নদর্শী বিশ্বনেতাদের একজন হিসেবে স্মরণ করা হয়; যিনি স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি ছিলেন ‘বিদেশে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মুখ’ এবং ‘জাতির নৈতিক কম্পাস’। একজন নিষ্ঠাবান মানবাধিকারকর্মী হিসেবে তিনি সব সময় সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি কালো রাজনৈতিক অভিজাতদের অত্যাচারের বিরুদ্ধেও ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার চেকার্ড ইতিহাসে তার আইকনিক স্ট্যাটাস শুধু ম্যান্ডেলা, তার স্বদেশী এবং দীর্ঘদিনের বন্ধু দ্বারা প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে। ৯০ বছর বয়সে তার দেশকে বর্ণবৈষম্যের শয়তানি খপ্পর থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করার এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় কালো আফ্রিকান হিসেবে লাখ লাখ লোক স্বাধীনভাবে শ্বাস নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন; তা নিশ্চিতের পরই তিনি মারা গেলেন।
টুটুকে রাষ্ট্রপতি রামাফোসা,‘অসামান্য দক্ষিণ আফ্রিকানদের একটি প্রজন্মের অংশ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন । তিনি বলেন, ‘তিনি আমাদের একটি স্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকা দিয়েছেন’। বিশ্বের অন্যান্য নেতারা তাকে ‘একজন সর্বজনীন চেতনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি ‘মুক্তি ও ন্যায়বিচারের সংগ্রামের ভিত্তি রচনা করেছিলেন।’
শুধু আফ্রিকায় নয় বিশ্বব্যাপী, যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। অক্লান্তভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সারা বিশ্বে মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করেছেন তিনি। ফিলিস্তিনের পক্ষে যখন জোরালোভাবে সমর্থন করেছিলেন; বিশ্ববাসী তখন প্রত্যক্ষ করেছিল আফ্রিকার সীমানা ছাড়িয়েও তার কণ্ঠস্বর কিভাবে মুসলিম বিশ্বে তরঙ্গায়িত হয়েছিল। জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ায় ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছিলেন; ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন এবং মুসলিম রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করতে অং সান সু চিকে বার বার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ডেসমন্ড টুটু ১৯৮৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার এবং দেশে এবং বিদেশে ১০০টিরও বেশি সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাষী ছিলেন এবং কালো ও সাদা জনগোষ্ঠীর দৃশ্যমান বিভক্তি ও নিন্দাকে সহ্য করেছিলেন। তখন তিনি ভেবেছিলেন কালো-সাদার পার্থক্য গুছিয়ে সব মানুষকে এককাতারে নিয়ে আসতে। সে থেকে তিনি মানবতার কাজে ব্রতী হয়ে বিশ্বব্যাপী মানবতার বিভিন্ন ফোরামে কাজ করতে থাকেন।
তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান বিশপ এবং আর্চবিশপ হওয়ার কারণে, আফ্রিকান ধর্মতত্ত্বের সাথে কালো ধর্মতত্ত্বের ধারণাগুলো সংমিশ্রণ ও পার্থক্য করার বিষয়গুলো সঠিকভাবে ধারণ করতে পেরেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার জাতিগত বিচ্ছিন্নতা এবং শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসনের অন্যতম প্রধান বিরোধী হিসেবে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন, অহিংস প্রতিবাদকে নিপীড়কদের হাত থেকে পরিত্রাণের যুক্তিসঙ্গত উপকরণ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান মানসিকতাকে সহিংস হওয়ার বিষয়ে সম্পূর্ণ উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি বলতেন, ‘অত্যাচারের বিরুদ্ধে সহিংস উপায় প্রায়ই ব্যর্থ হয়; অহিংসা আন্দোলন সেখানে অনেক বড় বিজয় নিয়ে আসতে পারে।’ আসলে সাদাদের অত্যাচার ও নিপীড়নে আফ্রিকানরা অসহায় হয়ে পড়েছিল। মুখ খুললেই জেল, জরিমানা, বেধড়ক মারধরে প্রায় পঙ্গু হওয়ার অবস্থা। সেখানে, অহিংসা আন্দোলনের পথে চলার নতুন দিশা ডেসমন্ড টুটু দিয়েছিলেন।
আর্শ্চযের বিষয়, নিপীড়নমূলক শাসনের বিরুদ্ধে তিনি যে প্রতিবাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাতে অনেক শ্বেতাঙ্গও অংশগ্রহণ করেছিল। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, পাসপোর্ট দু’বার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে; তবুও তিনি ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করে, আঞ্চলিক এবং বিশ্ব নেতৃত্বকে বোঝাতে তার জ্ঞান এবং দক্ষ বাগ্মিতা ব্যবহার করেছেন এ জন্য যে, শুধু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ই জনগণকে ‘জোর করে বাঁচাতে’ পারে ও একটি অ-বর্ণবাদী, গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক এবং ন্যায়বিচারমূলক দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে পারে। এটি ছিল তার এক অহিংস রাজনৈতিক কৌশল। এতে করে তিনি কিছুটা হলেও বর্ণবাদ নিধনের পথ প্রশস্ত করেছিলেন। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের রাজনৈতিক কমিটিতে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানান দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে, যদি বর্ণবাদ বাদ না দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রে টুটুকে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের সাথে সমভাবে তুলনা করা হয়।
টুটু যখন ম্যান্ডেলার কাছে ১৯৯৮ সালে‘ ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের’ পাঁচ খণ্ডের রিপোর্ট পেশ করেছিলেন, তিনি সতর্ক করেছিলেন যে, ‘গতকালের নির্যাতিতরা সহজেই আজকের নিপীড়ক হয়ে উঠতে পারে’। যেমনটি সমস্ত আদর্শবাদী এবং পরিপূর্ণতাবাদীদের ক্ষেত্রে ঘটে, তিনি তার জীবদ্দশায় একটি ‘রেইনবো নেশনের’ স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হতে দেখতে পারেননি বা অসমতা এবং দারিদ্র্যকে মোকাবেলা করতে পারেননি। বিষয়টি এমন এক সত্য যা তিনি তার শেষ বছরগুলোতে খুব বেশি অনুশোচনা করেছিলেন।
টুটুর বিরোধিতাকারীরা তাকে ‘কমিউনিস্ট সহানুভূতিশীল’ বলে অভিহিত করেছেন এবং তার অত্যন্ত সংবেদনশীল, সহজেই আঘাতপ্রাপ্ত এবং সহজেই বিরক্তিকর আচরণকে দুর্বলতা হিসেবে নিয়েছেন। টুটুর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা একমত যে, তিনি সর্বদা অভদ্র আচরণ, গালিগালাজ এবং জাতিগত অপবাদকে ঘৃণা করতেন। তার নিজের স্বীকারোক্তি অনুসারে, তিনি ‘প্রায় শিশুসুলভ উপায়ে’ মানসিক যন্ত্রণার প্রতিক্রিয়া জানাতেন। কারো কারো কাছে, তার ‘দুর্বলতা’ আসলে তার প্রকৃত প্রকৃতি বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল।
টুটু কিছু মিশনারিরও সমালোচনা করেছেন। এক পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন, ‘যখন মিশনারিরা আফ্রিকায় এসেছিল, তখন তাদের কাছে বাইবেল ছিল এবং আমাদের কাছে জমি ছিল। তারা বললেন, আসুন আমরা প্রাথর্না করি। আমরা চোখ বন্ধ করলাম, যখন চোখ খুললাম দেখি, আমাদের কাছে বাইবেল এবং তাদের কাছে জমি।’ আফ্রিকানদের এ বিলাপ পাক-ভারত উপমহাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘আপনি যদি শান্তি চান তবে আপনার বন্ধুদের সাথে কথা বলবেন না; আপনার শত্রুদের সাথে কথা বলুন।’ স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে ‘স্বাধীনতার মূল্য চিরন্তন সতর্কতা’।
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, তিনি ইহুদিদের সমর্থক ছিলেন। তার মতে অধিকার বঞ্চিত হয়ে, অন্যায়-অত্যাচার এবং মন্দের বিরুদ্ধে ইহুদিদের একসময় লড়াই করতে হয়েছিল। টুটু মনে করতেন, ইসরাইলের সীমান্ত সুরক্ষিত করার অধিকার আছে। কিন্তু সরেজমিন জেরুসালেম সফর করে তার মনোবেদনা বেড়ে যায় এবং বর্তমানে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের সাথে যেমন ব্যবহার করছে তাতে তিনি ব্যথিত হন। তিনি মনে করেন, আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গরা যেভাবে কালোদের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছিল তেমনি ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনিদের সাথে তেমন ব্যবহার করছে। তিনি দুঃখ করে বলেন- ‘আমি পবিত্র ভূমিতে আমার সফরে খুব গভীরভাবে ব্যথিত হয়েছি; এটি আমাকে খুব মনে করিয়ে দিলো দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের কালো মানুষদের সাথে কী হয়েছিল। আমি ফিলিস্তিনিদের অপমান দেখেছি চেকপয়েন্টে এবং রাস্তার অবরোধে, আমাদের মতো ভুগতে হয়েছে যখন তরুণ শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসাররা আমাদের চলাফেরা করতে বাধা দিত।’
পবিত্র ভূমিতে সফরের সময় তিনি জেরুসালেমের অ্যাংলিকান বিশপের সাথে একটি চার্চে গিয়েছিলেন। তার কণ্ঠস্বর ও অশ্রুসিক্ত নয়ন তাকে ব্যথিত করে যখন তিনি জানলেন ইহুদি বসতিগুলোতে আসলে কারা থাকত। তিনি নিরাপত্তার জন্য ইসরাইলিদের আকাক্সক্ষার কথা ভেবেছিলেন কিন্তু গৃহহারা, জমিজমা হারা ফিলিস্তিনিরা কি করবে তা ভেবে তিনি আপ্লুত হয়ে পড়েন।
তিনি মনে করেন ‘ইহুদিরা তাদের অপমান ভুলে গেছে? তারা কি এত তাড়াতাড়ি নিজেদের ইতিহাসে সম্মিলিত শাস্তি, বাড়িঘর ভাঙার কথা ভুলে গেছে? তারা কি তাদের গভীর ও মহৎ ধর্মীয় ঐতিহ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? তারা কি ভুলে গেছে যে ঈশ্বর নিঃস্বদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন?’ তিনি সফর শেষে বলেছেন, ইসরাইল কখনোই অন্য জনগণকে নিপীড়নের মাধ্যমে প্রকৃত নিরাপত্তা পাবে না। প্রকৃত শান্তি শেষ পর্যন্ত শুধু ন্যায়বিচারের ওপর নির্মিত হতে পারে।’ অধিকৃত জমিতে সামরিক আগ্রাসনের সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন ও বিরোধিতা করেছেন। তিনি মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যে সামরিক পদক্ষেপ চালানো হয়েছে তাতে, ইসরাইলিরা যে নিরাপত্তা ও শান্তি চায় তা কখনো আসবে না। এটা শুধু উভয়ের ঘৃণাকে তীব্রতর করবে। মানুষকে নির্যাতন ও হত্যার মাধ্যমে নির্মূল করার চিন্তাধারা কোনো মানুষের থাকতে পারে না। মানবতা ছাড়া মানুষের কোনো মূল্য নেই। ন্যায়বিচার না থাকলে সৃষ্টিকর্তা ক্ষমতার রাজদণ্ড ছিনিয়ে নিয়ে একজন খোদাদ্রোহীর হাতেও ছেড়ে দিতে পারেন। বিশ্বের ইতিহাসে ন্যায়বিচারকরা সব সময় বিজয়ী হয়েছেন সে ধর্মবিশ্বাসী হোক বা অবিশ্বাসী হোক।
এখন ইসরাইলের কাছে তিনটি বিকল্প রয়েছে- আগের অচলাবস্থায় ফিরে যাওয়া; সব ফিলিস্তিনিকে নির্মূল করা; ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে শান্তির জন্য প্রচেষ্টা করা। সমস্ত অধিকৃত অঞ্চল থেকে প্রত্যাহারের ওপর ভিত্তি করে এবং ইসরাইলের পাশাপাশি বিরোধপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে নিরাপদ সীমান্তসহ একটি কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়। টুটু বিশ্বাস করতেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শান্তি আসতে পারলে পবিত্র ভূমিতে নিশ্চয়ই আসবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্বের অন্য কোথাও একইভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব।
টুটু মনে করতেন, মার্কিনিদের মানুষ ভয়পায়। হুট করে কিছু ভুল বলা যায় না। কারণ ইহুদি লবি খুব শক্তিশালী। তিনি বলেছেন, ‘এটি ঈশ্বরের পৃথিবী। আমরা একটি নৈতিক মহাবিশ্বে বাস করি। বর্ণবাদী সরকার খুব শক্তিশালী হলেও শেষ পর্যন্ত টিকে না। হিটলার, মুসোলিনি, স্টালিন, পিনোচেট, মিলোসেভিক এবং ইদি আমিন সবাই শক্তিশালী ছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ধূলিসাৎ হয়েছেন।’
তার বিশ্বাস ছিল, অন্যায়-অত্যাচার কখনো জয়ী হয় না। যারা ক্ষমতাবান তাদের মনে রাখতে হবে, গড লিটমাস টেস্ট ক্ষমতাবানদের দেন : গরিব, ক্ষুধার্ত, কণ্ঠহীন ও মানবাধিকারের প্রতি ক্ষমতাসীনরা কি মনোভাব পোষণ করে ও কি ব্যবস্থা নিয়েছে তার ভিত্তিতেই সৃষ্টিকর্তা বিচার করেন। ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে, ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে অবশ্যই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। ‘আমাদের এ শান্তি অর্জনে সহায়তা করার চেষ্টা করা দরকার, কারণ এটি ঈশ্বরের স্বপ্ন।’
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার