চূড়ান্ত লজ্জার রেকর্ড দিয়ে ক্যাপ্টন্সি কেরিয়ার শুরু লোকেশ রাহুলের
চূড়ান্ত লজ্জার রেকর্ড দিয়ে ক্যাপ্টন্সি কেরিয়ার শুরু লোকেশ রাহুলের - ছবি : সংগৃহীত
বিরাট কোহলি তিন ফর্ম্যাটেই আর ভারতীয় ক্রিকেট দলের নেতা নন। সেই সুযোগে ভারতের লিডিং গ্রুপে ঢুকে পড়েছেন লোকেশ রাহুল। রোহিত শর্মাকে আগেই টি-২০ ও ওয়ান ডে-র ক্যাপ্টেন ঘোষণা করেছেন জাতীয় নির্বাচকরা। লোকেশ রাহুল হবেন তার ডেপুটি।
আপাতত রোহিত চোটের জন্য জাতীয় দলের বাইরে থাকায় ওয়ান ডে দলের নেতৃত্বের দায়ভার ওঠে রাহুলের হাতে। তার আগেই অবশ্য জোহানেসবার্গ টেস্টে টিম ইন্ডিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। বিরাট পাকাপাকিভাবে টেস্টে ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেয়ায় লোকেশ বিরাটের জুতায় পা গলানোর ইচ্ছা প্রকাশও করেছেন ইতিমধ্যেই। যদিও ক্যাপ্টেন্সি কেরিয়ারের শুরুটা যে এমন দুঃস্বপ্নের হবে, তা কোনোভাবেই অনুমান করা সম্ভব ছিল না লোকেশের পক্ষে।
তার নেতৃত্বে জোহানেসবার্গ টেস্টে হেরেছে ভারত। পরে তিন ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজেও রাহুলের ক্যাপ্টেন্সিতে হোয়াইটওয়াশ হয় টিম ইন্ডিয়া। সুতরাং, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট ও ওয়ান ডে মিলিয়ে মোট ৪টি ম্যাচে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন লোকেশ রাহুল, চারটি ম্যাচেই হেরেছে দল।
বিশেষ করে ওয়ান ডে সিরিজে ভারত হোয়াইটওয়াশ হওয়া মাত্রই এমন এক লজ্জাজনক নজির গড়েন রাহুল, যা তিনি ভুলতে চেয়েও ভুলতে পারবেন কিনা সন্দেহ। আসলে লোকেশ রাহুলই হলেন ছেলেদের ক্রিকেটে ভারতের প্রথম ও একমাত্র নেতা, যার ক্যাপ্টেন্সি কেরিয়ারের প্রথম তিনটি ওয়ান ডে ম্যাচে দল হেরে বসে।
কোচ-ক্যাপ্টেন বদলেই কি ভারতের এমন হার!
অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ জেতা, ইংল্যান্ডে গিয়ে জো রুটদের কড়া টক্কর দেয়া টিম ইন্ডিয়া এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে চূড়ান্ত ব্যর্থ। অথচ বিশেজ্ঞদের ধারণা ছিল, এবার দক্ষিণ আফ্রিকা কার্যত পাত্তাই পাবে না বিরাট কোহলিদের সামনে।
সেই ধারণা ভেঙে চুরমার হয়ে যায় সফরের শেষে। ভারত ১টি মাত্র টেস্ট ম্যাচে জয় ছাড়া প্রোটিয়া সফরে বাকি ৫টি ম্যাচ (২টি টেস্ট ও ৩টি ওয়ান ডে) হেরে বসে। কিন্তু কী এমন হলো যে নাটকীয়ভাবে ভারতের গগনচুম্বী পারফর্ম্যান্স গ্রাফ হঠাৎ করে মাটিতে আছড়ে পড়ে? দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টিম ইন্ডিয়ার ভরাডুবির কারণ খুঁজতে গেলে যে বিষয়গুলি সবার আগে সামনে উঠে আসে, দেখে নেওয়া যাক একনজরে।
প্রথমত, কোহলির ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন্সি কেড়ে নেওয়া নিয়ে বিতর্ক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দলের মানসিকতায়। কোহলি স্বেচ্ছায় টি-২০ ক্যাপ্টেন্সি ছেড়েছেন। তবে নির্বাচকরা কোহলিকে ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরিয়ে দেন, যা মোটেও ভালোভাবে নেননি বিরাট। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে উড়ে যাওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে কোহলি রীতিমতো বোমা ফাটান এবং বিসিসিআই সভাপতি ও জাতীয় নির্বাচকদের কার্যত কাঠগড়ায় তোলেন। যা নিয়ে কোহলি ও বিসিসিআই, দু-পক্ষের স্পষ্ট টানাপোড়েন চোখে পড়ে। গোটা বিষয়টা নিয়ে এতটাই জলঘোলা হয় যে, দলের পারফর্ম্যান্সে তার প্রভাব পড়া অবধারিত ছিল।
দ্বিতীয়ত, রোহিত শর্মার সাথে কোহলির পারস্পরিক দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনাও নিতান্ত কম হয়নি। রোহিতের নেতৃত্বে বিরাট মাঠে নামতে চান না বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেশ কোহলি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ওয়ান ডে সিরিজে মাঠে নামলেও রোহিত চোটের জন্য ছিটকে যান দল থেকে। তবে দলের দুই সিনিয়রের সম্পর্কের ফাটল নিয়ে এমন আলোচনা জুনিয়রদের বিভ্রান্ত করাই স্বাভাবিক।
তৃতীয়ত, প্রথমে কোচ বদলের ঘটনায় ক্যাপ্টেন কোহলির সুখী গৃহকোণে থাকার ছবিটায় দাঁড়ি পড়ে। তার উপর নেতৃত্বের হাতবদল মসৃণ না হওয়ায় দলের মধ্যে একজোট হয়ে লড়াইয়ের মানসিকতাটাই চোখে পড়েনি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে।
চতুর্থত, লোকেশ রাহুল ক্যাপ্টেন হিসেবে নিতান্ত অনভিজ্ঞ। তার বেশ কিছু সিদ্ধান্তেই সেটা বোঝা গিয়েছে। লোকেশ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে না পারায় দলের ক্রিকেটারদের যথাযথ উদ্দীপ্ত করা সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।
পঞ্চমত, ব্যাটিং ও বোলিং বিভাগকে একজোট হতে দেখা যায়নি মোটেও। দু-একজন ভালো ব্যাট করলে বাকিরা তাদের সঙ্গত করতে ব্যর্থ। দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে আউট হতে দেখা গিয়েছে অনেককেই। বিশেষ করে বোলিং লাইন-আপকে পরিচিত ছন্দে দেখায়নি। যার ফলে জয়ের সুযোগ তৈরি হওয়া সত্ত্বেও সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস